দূরে দুটো তিনটে বাড়ি। বাড়িগুলি পুরনো রোমান স্থাপত্যের পরিচয় বহন করছে। বাড়িগুলোর সামনে, রাস্তায় কাতারে কাতারে লোক জড়ো হয়েছে। শঙ্কিত, ভীত ওই মানুষগুলো দৌড়চ্ছে মনে হচ্ছে। অনেকে মাটিতে পড়ে আছে, ছটফট করছে। কেউ কেউ মরণাপন্ন। ফ্রান্সের বিখ্যাত লুভোঁর মিউজিয়ামে ঢুকলে এমনই একটি ছবি নজরে আসবে সবার। যার পেছনে রয়েছে একটি কালো ইতিহাস। প্লেগের ইতিহাস!
ওপরে যে ছবিটির বর্ণনা করা হয়েছে, সেটি সতেরশো শতকের ফ্রান্সের চিত্রশিল্পী নিকোলাস পুশিনের আঁকা। নাম ‘দ্য প্লেগ অফ অ্যাশডোড’। ১৬৩০ সালে আঁকা এই ছবির প্রেক্ষাপট ছিল প্লেগের মহামারী। ওই সময় গোটা ইতালি এই রোগের কবলে পড়েছিল। প্রতিটা জায়গায় মানুষজন অসুস্থ হয়ে বসে থাকত। মৃত্যুর মিছিল যেন লেগেছিল গোটা ইতালি জুড়ে। সেই সময় এই সমস্ত দৃশ্য লক্ষ্য করছিলেন পুশিন। তারই ফল এই বিশেষ ছবি। প্লেগের মহামারী নিয়ে ছবি খুব একটা আঁকা হয়নি। পুশিনের এই ছবিটি সেই দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। আরও একটা ব্যাপার হল ওই সময় ঠিক কী পরিস্থিতি ছিল তা তাঁর আঁকা ছবিটি থেকে আন্দাজ করা যায়। রাস্তায় বসেই মুমূর্ষু মায়ের বুকে শুয়ে আছে শিশু। লোকজন পালাচ্ছে। কেউ হয়তো মাটিতে পড়ে আছেন। সতেরো শতকের প্লেগে ইতালির ছত্রাকার চেহারাটাই যেন সেখানে প্রকাশ পাচ্ছে।
তারপর পেরিয়ে গেছে বহু বছর। নিকোলাস পুশিনের আঁকা ছবিটি মিউজিয়ামে শোভা পাচ্ছে। তবে আজ আবারও ইতালির অবস্থা ভয়াবহ। আবারও একটি মহামারির সাক্ষী থাকছে তাঁরা। করোনার জেরে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে সেখানে। আক্রান্তও হয়েছেন প্রচুর। সেদিনের সেই ছবি কি জ্বলন্ত হয়ে উঠছে না? প্লেগ না হোক, অন্য রোগের আক্রমণে কাহিল গোটা দেশ। মৃত্যুমিছিল লেগেই আছে। ইতালি কি একবার তাকাবে প্রায় ৪০০ বছর আগে আঁকা ওই ছবির দিকে?