Powered by Froala Editor
যুদ্ধের ময়দানে প্রাণ হারিয়েছেন যেসব চিত্রসাংবাদিক
১/১০
দেখতে দেখতে তালিবানদের দখলে চলে গেল আফগানিস্তান। অবশ্য গত ২ মাস ধরে তো কম যুদ্ধ হয়নি। সেই লড়াইয়ের ময়দানে উপস্থিত ছিলেন আরও একজন। অবশ্য তাঁর সঙ্গে কোনো অস্ত্র ছিল না। তাঁর সঙ্গী শুধু ক্যামেরা। যার চোখ দিয়ে সারা বিশ্ব দেখেছে যুদ্ধের ভয়াবহতা। কান্দাহারের মাটিতে প্রাণ হারালেন এক ভারতীয়। দানিশ সিদ্দিকি। ক্যামেরা হাতে তিনিও যেন যুদ্ধেরই একজন সৈনিক।
২/১০
অবশ্য যুদ্ধের ময়দানে চিত্রসাংবাদিকদের প্রাণ হারানোর ঘটনা তো নতুন নয়। আনজা নিয়েদ্রিংগাস, ক্রিস হন্ড্রোস, টিম হেথরিংটন বা মোলহেম বরকত। নিছক কতগুলো নাম নয়। এঁরা প্রত্যেকেই যুদ্ধের এক একজন শহিদ।
৩/১০
বছর সাতেক আগের কথা। তালিবান জঙ্গিদের নয়, বরং আফগান পুলিশের গুলিতেই ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল এক চিত্রসাংবাদিকের শরীর। তবে মৃত্যুর সময়েও ক্যামেরার শাটার চালু ছিল। ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে আসা গুলিকে ফ্রেমবন্দি করে লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে। তাঁর নাম আনজা নিয়েদ্রিংগাস। তাঁর ক্যামেরাতে উঠে এসেছিল বোরখার ভিতর দিয়ে দেখা কাবুলের বাজারের দৃশ্য। তিনি দেখিয়েছিলেন আফগানিস্তানের পার্কে নাগরদোলার মধ্যেই খেলনা বন্দুক নিয়ে বসে থাকা এক শিশুর ছবি। এভাবেই তো রোজ একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ছে হিংসার বীজ।
৪/১০
অথবা এক দশক পর ফিরে দেখা যায় ক্রিস হন্ড্রোসের ছবিগুলিও। মার্কিন সেনার চেক-পয়েন্টে প্রাণ হারিয়েছেন বাবা-মা। ৬ বছরের রক্তাক্ত শিশু কোনোরকমে নিজেকে আড়াল করে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই একটা ছবিই বদলে দিয়েছিল ইরাকের মার্কিন সেনাদের সম্বন্ধে যাবতীয় ধারণা। সারা পৃথিবীজুড়ে আওয়াজ উঠেছিল মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন সেনা অপসারণের। ২০১১ সালে লিবিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় রকেট প্রপেলড গ্রেনেডের আঘাতে থেমে গেল তাঁর শব্দহীন প্রতিবাদ।
৫/১০
ক্রিসের সঙ্গেই একইদিনে লিবিয়ার মাটিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন আরও এক চিত্রসাংবাদিক। টিম হেথরিংটন। যাঁর ক্যামেরায় যুদ্ধের পাশাপাশি উঠে এসেছে শান্তির বার্তাও। আহত, ক্ষতবিক্ষত মানুষরাই কীভাবে জীবনকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাইছেন, তারই রহস্য খুঁজতে চেয়েছিলেন টিম।
৬/১০
সিরিয়ার মোলহেম বরকতের কাহিনি কিছুটা অন্যরকম। ২০১৩ সালের গৃহযুদ্ধের সময় পৃথিবীর কোনো দেশ থেকেই সাংবাদিকরা সিরিয়ায় পৌঁছতে পারছিলেন না। সেই সময় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে একের পর এক ছবি গোপনে পাচার করে গিয়েছেন বরকত। তুলে এনেছিলেন বিবাদমান সেনাদের জীবনযাত্রার ছবিও। সেই যুদ্ধেই মৃত্যু হল বরকতের। কিন্তু শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর ক্যামেরা বন্ধ হয়নি।
৭/১০
১৯৭২ সালের ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় বলা হত, সেনাদের চেয়েও অনিশ্চিত চিত্রসাংবাদিকদের জীবন। সেনারা তো তবু অস্ত্র দিয়ে প্রাণ রক্ষা করতে পারবেন। চিত্রসাংবাদিকদের কাছে তাও নেই। ভিয়েতনাম যুদ্ধের ময়দানে এক একজন চিত্রসাংবাদিকের গড় আয়ু ছিল মাত্র ১৫ মিনিট। তার মধ্যেই জীবনকে তুচ্ছ করে ছুটে গিয়েছিলেন ল্যারি বরোস, অলিভার নুনান, রবার্ট কাপা, সন ফ্লাইনের মতো চিত্রগ্রাহকরা। না, তাঁরা কেউই আর যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে আসেননি।
৮/১০
দানিশ যে সেইসব নিরস্ত্র সৈনিকদেরই উত্তরপুরুষ ছিলেন। জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতির স্নাতক দানিশ। স্নাতোকত্তর স্তরে সেখানেই ভর্তি হলেন মাস কমিউনিকেশন বিভাগে। পড়াশোনা শেষ করে দেশের প্রথম সারির দুটি সংবাদপত্রে কোরেসপন্ডেন্সের কাজ করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্যামেরাকেই সঙ্গী করে নিলেন দানিশ। ২০১০ সাল থেকে চিত্র-সাংবাদিক হিসাবে তিনি যুক্ত থেকেছেন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের সঙ্গে।
৯/১০
মায়ানমার রোহিঙ্গা শিবির থেকে শুরু করে দিল্লির দাঙ্গা, তাঁর ক্যামেরা বারবার সময়ের দলিল হয়ে উঠেছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জীবনযাত্রার ছবি তুলে ২০১৮ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন দানিশ। আবার দাঙ্গার ছবি তুলে প্রবল জনরোষের শিকারও হয়েছেন। কিন্তু কোনো বিতর্কই তাঁর ক্যামেরাকে অন্ধ করতে পারেনি। আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা অপসারণের পর আবারও যুদ্ধক্ষেত্রে ছুটে গিয়েছেন তিনি।
১০/১০
কাবুলের রাস্তায় তালিবান জঙ্গিরা রকেট প্রপেলড গ্রেনেড শানিয়েছেন তাঁকে লক্ষ্য করে। সেই আক্রমণ থেকে বেঁচে ফিরেছেন দানিশ। কিন্তু দিন দুয়েকের মধ্যেই যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ দিতে হল তাঁকে। জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এই যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর রূপ দেখিয়ে দিয়ে গেলেন দানিশ। তাঁরই পদাঙ্ক অনুসরণ করে হয়তো আরও অনেকে এগিয়ে আসবেন। কিন্তু আমরা আমাদের চোখ খুলবে কি কোনোদিন?