সেলুলয়েড প্লেটের উপর নানা রাসয়নিক পদার্থের প্রলেপ। তার উপর আলো এসে পড়লেই তৈরি হয় নেগেটিভ ছবি। সেই ছবিকে আবার রাসায়নিকের সাহায্যে বদলে ফেলা হয় পজিটিভ ছবিতে। তখন কাগজের উপর স্পষ্ট হয়ে ওঠে বাস্তব দৃশ্য। ফটোগ্রাফির (Phootograohy) এই পদ্ধতি এখন কার্যত উঠেই গিয়েছে। হবে নাই বা কেন। ডিজিট্যাল টেকনোলজিতে একটা ক্লিকেই লেন্সবন্দি করা সম্ভব প্রতিটা মুহূর্তকে। কিন্তু আদৌ কি ডিজিট্যাল টেকনোলজি ততটা উন্নত? ব্রিটিশ চিত্রগ্রাহক গাই বেলিংহামের (Guy Bellingham) তোলা ছবি দেখলে এই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কারণ এই একুশ শতকে দাঁড়িয়েও তিনি ছবি তোলেন ১৮৫১ সালে আবিষ্কৃত ওয়েট প্লেট কলোয়েডিওন (Wet Plate Collodion) পদ্ধতিতেই।
এক একটা ছবি দেখলে সত্যিই অবাক হতে হয়। এখানে মেগাপিক্সেলের কোনো হাত নেই। দূর থেকে ছবি দেখলে যতটা স্পষ্ট মনে হয়, কাছে গিয়ে প্রতিটা অংশ খুঁটিয়ে দেখলেও মনে হয় না কোথাও সেই স্পষ্টত্ব হারিয়ে যাচ্ছে। তবে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে এমন একটা ছবি তোলা খুব সহজ কাজ নয়। উনিশ শতকে যখন প্রথম ক্যামেরার আবিষ্কার হয়েছিল, তখন মানুষ ছবি তোলার জন্য সময় দিতে প্রস্তুত ছিলেন। ক্যামেরার সামনে কয়েক মিনিট দাঁড়িয়ে থাকা ছিল অত্যন্ত সাধারণ বিষয়। কিন্তু আজ মানুষ এক ক্লিকের ছবিতে অভ্যস্ত। গাই কিন্তু তাঁর কাছে ছবি তুলতে আসা ব্যক্তিদের একইভাবে বসিয়ে রাখেন। সেই ব্যক্তি যাতে নড়াচড়া না করেন, তাই মাথার পিছনে রেখে দেন বিশেষ ক্ল্যাম্প। আর ক্যামেরা! তাঁর নিজের হাতে তৈরি।
ব্রিস্টন ইউনিভার্সিটি থেকে ফটোগ্রাফি পাশ করেই সঙ্গে সঙ্গে পেশায় ঢুকতে মন চায়নি গাই বেলমিংহামের। তিনি এরপর পড়াশোনা শুরু করলেন লেন্স টেকনোলজি নিয়ে। ভিক্টোরিয়ান যুগের হারিয়ে যাওয়া সব যন্ত্রপাতির অনুসন্ধান করতে শুরু করলেন নানা জায়গায়। এক একটা লেন্স খুঁজে পেতেই লেগে গেল কয়েক বছর। তারপর সেইসব যন্ত্রপাতি দিয়ে নিজেই তৈরি করে ফেললেন নানা ধরনের ক্যামেরা। ফটোপ্লেট থেকে শুরু করে ছবি তৈরির জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক নির্বাচনের ক্ষেত্রে ফ্রেডরিক স্কট আর্চারের পদ্ধতি অনুসরণ করলেও প্রতিটা উপাদান তাঁর নিজের তৈরি। কারণ ভিক্টোরিয়ান যুগে আটকে থাকা তাঁর উদ্দেশ্য নয়। বরং হারিয়ে যাওয়া পদ্ধতিকেই আরও উন্নত করে তুলতে চান তিনি।
আরও পড়ুন
ছবি তুলতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারিয়েছেন যেসব ফটোগ্রাফার
আরও পড়ুন
ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি – হুজুগ, নিষ্ঠা ও কিছু বিপন্ন বন্যপ্রাণের গপ্পো
মাত্র এক দশকের মধ্যেই তাঁর এই নতুন পদ্ধতি তাক লাগিয়ে দিয়েছে। এমনিতে বাণিজ্যিক কাজ করতে খুব একটা স্বচ্ছন্দ নন তিনি। কিন্তু বিশেষ বিশেষ কাজ যা পান, তার পারিশ্রমিক নেহাৎ কম নয়। হবে নাই বা কেন? এই পদ্ধতিই যে আর কেউ জানে না। আর কারোর ছবিতে এতটা স্পষ্টত্ব আশা করা সম্ভব নয়। সেইসঙ্গে মঞ্চসজ্জার জ্ঞান থাকায় প্রতিটা ছবির অবস্থানের বিষয়েও সবসময় নিখুঁত থাকেন গাই। এবছর ব্রিটিশ ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন গাই বেলিংহাম। আন্তর্জাতিক পোট্রেট ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড প্রতিযোগিতাতেও বিশ্বের প্রথম ১০০ জন চিত্রগ্রাহকের মধ্যে স্থান পেয়েছেন তিনি। হয়তো এভাবেই আবারও ফিরে আসতে চলেছে ওয়েট প্লেট পদ্ধতি।
আরও পড়ুন
দেশের প্রথম ফটোগ্রাফিক স্টুডিও কলকাতাতেই; ১৫৩ বছরের যাত্রায় দাঁড়ি টেনেছিল অর্থাভাব
Powered by Froala Editor