একমনে ভায়োলিন বাজাচ্ছেন একজন। বন্ধ ঘরে একে একে বেজে উঠছে গুস্তভ মাহলার, জর্জ জারশুইনসের ক্লাসিকাল মিউজিক। এরকম তো কত লোকেই বাজায়, তাহলে এখানে বিশেষত্ব কোথায়? ঘটনা হল, কোনো কনসার্ট হলে নয়, হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারের ভেতর ভায়োলিন বেজে ওঠে নিজের সুরে। আর যিনি বাজান, সেই শিল্পীই আদতে রোগী; সেই মুহূর্তে তাঁর অপারেশনও চলছে! নিজের সঙ্গীতকে বাঁচানোর জন্য তাঁর মধ্যেই ভায়োলিন হাতে তুলে নিলেন তিনি।
৫৩ বছরের ড্যাগমার টার্নার বেশ ছোট থেকেই মিউজিকের সঙ্গে আছেন। ভায়োলিন তাঁর কাছে স্রেফ বাদ্যযন্ত্র নয়, একটি প্যাশন। অর্কেস্ট্রায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎই বাধ সাধে শরীর। পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তাররা জানান, টার্নারের মস্তিস্কের রাইট ফ্রন্টাল লোবে টিউমার তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য, মানব মস্তিস্কের এই অংশই নিয়ন্ত্রণ করে আমাদের ভাষা আর আমাদের বাম হাতের নড়াচড়াকে। যদি টিউমারকে শীঘ্রই না বের করা হয়, তাহলে সমূহ বিপদ। আবার অপারেশনটিও খুব সাবধানে করতে হবে। একটা সামান্যতম ভুল মানে তাঁর ভায়োলিনের কেরিয়ারের ইতি। আর কোনোদিনও তাহলে ফিরতে পারবেন না ওই যন্ত্রটির কাছে। কোনো সুরই তৈরি করতে পারবেন না তিনি…
আরও পড়ুন
প্যারিস থেকে কলকাতা, টেপরেকর্ডারে পথের সুর ধরেছিলেন দেবেন
এমন সময়ই একটি অভিনব উদ্যোগ নেওয়া হল। অ্যানাস্থেশিয়া করে টার্নারের খুলির অংশ খোলার পর, অপেক্ষা করা হয়। জ্ঞান ফিরে এলে, টার্নার হাতে তুলে নেন ভায়োলিন। বেজে ওঠে একের পর এক সুর। সেই সময় তাঁর মস্তিস্কের কোন জায়গাটা সক্রিয়, সেটা বাঁচিয়ে চলতে থাকে অপারেশন। দিনের শেষে, বিপন্মুক্ত হয়েছেন ড্যাগমার টার্নার। ওই মুহূর্তে তাঁর ভায়োলিন বাজানোই অপারেশনের সুবিধা করেছে কিছুটা। এর আগে অবশ্য এরকম কোনো ঘটনা দেখেননি কিং’স কলেজ হসপিটালের ডাক্তাররা।
পুরো ঘটনাটাই অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তাও নিজেকে বাঁচাতে, নিজের প্যাশনকে বাঁচাতে এই ঝুঁকি নিয়েছেন টার্নার। আজ তিনি সুস্থ হয়ে বাড়িতে; আবারও কাজের জগতে ফিরেছেন। ফিরেছেন সুরের দুনিয়ায়। সঙ্গীত এইভাবেই মানুষকে বাঁচিয়ে দেয় বারবার, তাঁদের আত্মবিশ্বাসের পথ দেখায়।