ছোট্ট নৌকা বেয়ে চলেছেন এক ব্যক্তি। আর তাতে বোঝাই করা প্লাস্টিকের বোতল। কেরালার ভেম্বনাদ হ্রদে গেলেই দেখতে পাওয়া যাবে এমন দৃশ্য। এন.এস. রাজপ্পান। বিগত ছ-বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন এক অভিনব কর্মসূচি। এলাকার জলাশয় এবং নদী প্রবাহগুলিকে প্লাস্টিকমুক্ত করতে নৌকা নিয়েই লড়াইতে নেমে পড়েছেন তিনি। নিজের শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে তুচ্ছ করেই।
হ্যাঁ, ৬৯ বছরের রাজপ্পান হাঁটতে পারেন না শিশু বয়স থেকেই। আক্রান্ত হয়েছিলেন পোলিওমায়েলিটিসে। হাঁটা-চলা করতে তারপর থেকেই স্ক্র্যাচের ওপর নির্ভরতা। তবে, সেইসঙ্গে আয়ত্ত করেছিলেন নৌকা চালানোও। কেননা, তাতে পায়ের ব্যবহার নেই। ছোটবেলায় অবসর সময়ে ডিঙি নিয়েই তিনি ঘুরে বেড়াতেন কেরালার নদীগুলিতে।
বছর কয়েক আগে রাজপ্পানকে ভাবিয়ে তুলেছিল এই জলাশয়গুলির হাল। খেয়াল করেছিলেন, দ্রুত চেহারা বদলাচ্ছে নদী এবং হ্রদগুলি। প্লাস্টিকের বাড়বাড়ন্ত যেমন প্রবাহের গতি আটকাচ্ছে, তেমনই প্রভাবিত ফেলছে জলজ বাস্তুতন্ত্রেও। তাই নিজেই নৌকা নিয়ে নেমে পড়েছিলেন সংস্কারের কাজে।
কেরালার কোয়াট্টাম জেলার এই বাসিন্দার জীবিকাও বর্তমানে অনেকটাই নির্ভরশীল এই কাজের ওপরে। তবে তা সামান্যই। এক নৌকা প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ হলে আয় হয় মাত্র ১২ টাকা। তাতে কী? অন্তত প্রাণ ফিরে পাচ্ছে তো শৈশবের প্রকৃতি। তাই কষ্ট করে হলেও একার সংসার চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি এভাবেই। উপায়ই বা কী? দৈনিক মজুর কিংবা কায়িক শ্রমে সায় দেয় না শরীর। এর আগে অবশ্য অন্যান্য কাজ করেছেন বাড়িতে বসেই। তবে সেসব ছেড়ে নদী সংস্কারের এই উদ্যোগেই মজে রয়েছেন রাজপ্পান।
তবে, লকডাউনে পর্যটকদের আনাগোনা কমে যাওয়ায় অনেকটাই কমেছে প্লাস্টিক দূষণ। তাতে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য ফিরেছে ভেম্বনাদ হ্রদ-সহ অন্যান্য নদী-নালার, তেমনই পাল্লা দিয়ে কমেছে তাঁর আয়। অবশ্য তাতে বিন্দুমাত্র বিচলিত নন তিনি। আসলে পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখাই আসল লক্ষ্য। জীবিকার বিকল্প অনুসন্ধান কোনো না কোনোভাবে ঠিক হয়ে যাবে, সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ আশাবাদী কেরালার এই ‘পরিবেশকর্মী’…
Powered by Froala Editor