প্রতি বছর ১২ লক্ষ পথবাসী মানুষের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে ‘রোটি ব্যাঙ্ক’!

পিঠে ঘনকাকার খাবার পরিবহনের বাক্স। বাইকে চেপে এক তরুণ ঘুরে বেড়াচ্ছেন বাড়ি বাড়ি। তাঁকে দেখে সুইগি কিংবা জোম্যাটোর ডেলিভারি বয় হিসাবেই ঠাহর করবেন অধিকাংশ মানুষ। তবে এক্ষেত্রে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার বদলে, বিভিন্ন পরিবার থেকে প্যাকেটজাত খাবার সংগ্রহ করছেন তিনি। 

ইন্ডিয়ান রোটি ব্যাঙ্ক (Indian Rooti Bank)। গৃহহীন, পথবাসী মানুষদের মুখে খাবার তুলে দেওয়াই এই সংস্থার মূল উদ্দেশ্য। তবে কোনো একক ব্যক্তির অর্থায়নে পরিচালিত হয় না এই সংস্থা। এমনকি এই দাতব্য কর্মের জন্য ব্যাপকমাত্রায় অর্থ সাহায্যও সংগ্রহ করেন না এই সংস্থা সদস্যরা। বরং, গোটা দেশের বহু প্রান্তেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এই সংস্থা অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবক। তাঁরাই প্রত্যেকেই নিজেদের বাড়িতে তৈরি করেন খাবার। তারপর তা তুলে দেওয়া হয় সংস্থা-প্রেরিত প্রতিনিধির হাতে। তাঁর মাধ্যমেই এই খাবার পৌঁছে যায় দুঃস্থ গৃহহীনদের কাছে। 

এই আশ্চর্য কর্মকাণ্ড শুরু করেছিলেন লখনৌ নিবাসী বিক্রম পাণ্ডে। লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, ৩৮ বছর বয়সি পাণ্ডে বর্তমানে একটি বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। বছর সাতেক আগের কথা। কর্মসূত্রে দিল্লির পথে রওয়ানা দিয়েছিলেন বিক্রম। তবে লখনৌ স্টেশনেই ঘটে যায় এক আশ্চর্য ঘটনা। এক বৃদ্ধা ভিক্ষুক তাঁর কাছে এসে খাবার কিনে দেওয়ার জন্য আবদার করেন। প্রথমে ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলেও, খানিক বাদেই বিক্রম নজর কাড়ে বিষয়টি। স্টেশনের একপ্রান্তে বসে কেঁদে চলেছেন প্রবীণা। খিদের জ্বালা যে এমনই। 

এই ঘটনাই যেন ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিল বিক্রমকে। সাময়িকভাবে তাঁকে খাবার কিনে দিয়ে অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পেলেও, শান্তি মেলেনি। দিল্লি থেকে ফেরার পর বন্ধুদের নিয়ে তিনি গড়ে তোলেন রুটি ব্যাঙ্ক। শুরুটা হয়েছিল লখনৌ থেকেই। ৮-১০ জন বন্ধু বাড়িতে তৈরি রুটি-তরকারি নিয়েই প্রতিদিন বেরিয়ে পড়তেন শহরের গৃহহীনদের মুখে খাবার তুলে দিতে। ক্রমে এই সংস্থা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে লখনৌ-এ। যুক্ত হন বহু সাধারণ মানুষ। বর্তমানে শুধু লখনৌ-ই নয়, দেশের ১৪টি রাজ্যের ১০০টিরও বেশি জেলায় রয়েছে রুটি ব্যাঙ্কের শাখা। প্রতিটি জেলাতেই কমপক্ষে ৫০-৬০টি পরিবার এই দাতব্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে। শর্ত একটাই, ৪টি রুটি এবং তরকারি প্যাকেট জাত করে তুলে দিতে হবে সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকদের হাতে। 

গত বছর ইকনোমিক টাইমস বিশেষ স্বীকৃতি জানায় বিক্রম পাণ্ডের এই উদ্যোগকে। জানানো হয়, প্রতি বছর প্রায় ১২ লক্ষ মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয় এই সংস্থা। বিশেষত মহামারীর সময় তাঁর এই উদ্যোগের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। তবে এখানেই থেমে নেই বিক্রম পাণ্ডে। লড়াই চলছে আজও। লক্ষ্য, দেশের প্রতিটি জেলাতেই একটি করে রুটি ব্যাঙ্কের শাখা গড়ে তোলা। আর সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতেই লড়াই করে চলেছেন তিনি…

Powered by Froala Editor