বয়স ৯০ বছর। বেলারুশের তালগোভিচি গ্রামে একাই থাকেন ইভান সামিয়ানোক। গ্রামের একেবারে বিপরীত প্রান্তে থাকেন তাঁরই ভাইপো। নেহাৎ বৃদ্ধ জ্যাঠাকে ছেড়ে যেতে পারেননি তাই। গ্রামের বাকি সবাই ছেড়ে গিয়েছেন অনেক আগেই।
১৯৮৬ সালের ২৬ এপ্রিল, আজ থেকে ৩৪ বছর আগের সেই দিন ঘটে গিয়েছিল এক ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনা। ইউক্রেনের চের্নোবিল শহর তখন সোভিয়েত রাশিয়ার সীমানাধীন। আর সেই শহরেই পারমাণবিক পরীক্ষা করতে গিয়ে ঘটে গেল এক ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। তালগোভিচি গ্রাম ছিল বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যাওয়া ১০০০ বর্গমাইলের ঠিক বাইরে। তবে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের প্রভাব যে সেখানে পড়বে না, এমন কোনো নিশ্চয়তা ছিল না। আর তাই গ্রামের সমস্ত বাসিন্দাকেই অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে সরকার। সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে গেলেও থেকে গেলেন ইভান সামিয়ানোক এবং তাঁর স্ত্রী।
আজ ৩৪ বছর পেরিয়ে এসেও ইভান বলেন, তাঁর সেদিনের সিদ্ধান্ত ঠিকই ছিল। এত বছরেও গ্রামের চেহারা একেবারেই বদলায়নি। দূষণের প্রভাব পড়েনি সেখানে। আজও বাড়ির বাগানের তাজা শাকসব্জি আর খামারের হাঁস-মুরগির মাংস খেয়ে দিব্যি চলে যায়। গাড়ির ধোঁয়া নেই। আর তাই ৯০ বছর বয়সেও একেবারে সুস্থ ইভান। তাঁর স্ত্রীও মৃত্যুর আগে পর্যন্ত একেবারে সুস্থ ছিলেন। সেদিন যদি এই গ্রাম ছেড়ে তিনি চলে যেতেন, তাহলে এতদিনে দূষণের প্রভাব পড়ত তাঁর শরীরেও। ইভানের এই জীবন যেন বর্তমান সময়ের ভয়ঙ্কর বিভীষিকার কথাই তুলে ধরে। পারমাণবিক বিস্ফোরণের চেয়েও যেন বড়ো সমস্যা দূষণ। এর মধ্যে এমন একটা নির্মল গ্রামে পৌঁছতে চাইছেন সকলেই।
Powered by Froala Editor