পশ্চিমবঙ্গ ও আসামের বিধানসভা নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। বুথ থেকে আঙুলে কালি লাগিয়ে বেরিয়ে আসছেন প্রত্যেক ভোটদাতা। কেউ আবার হয়তো প্রথমবার ভোট দিলেন। নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের আনন্দ বাকিদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে সামাজিক মাধ্যমে আঙুলের ছবিও দিচ্ছেন কেউ। কিন্তু এই কালির মধ্যেই যে জড়িয়ে আছে এক লম্বা ইতিহাস। তার খবর আর কতজনই বা রাখেন?
মে মাসের শুরুতেই প্রকাশিত হবে নির্বাচনের ফলাফল। হয়তো এবারেও কোনো না কোনো দল থেকে উঠবে স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ। স্বাধীন ভারতের প্রথম দুই সাধারণ নির্বাচনে অবশ্য এইসমস্ত অভিযোগ খুব একটা শোনা যায়নি। কিন্তু দুর্নীতি দমনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছিল তখনই। আর তাই তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনের আগে কমিশন সিদ্ধান্ত নেয় যে, এমন এক চিহ্ন ব্যবহার করতে হবে যাতে কোনো ব্যক্তি দুবার ভোট দিতে না পারেন। সেই চিহ্ন সহজে উঠে গেলে হবে না। আবার এমন স্থায়ী যেন না হয় যে পরের নির্বাচন পর্যন্ত তা থেকে গেল।
এই সময়েই আশ্বাস দিল মাইসোর পেইন্টস অ্যান্ড বার্নিশ লিমিটেড। তারা জানাল এমন এক কালি তারা তৈরি করবে, যার তরল পদার্থ ধুয়ে গেলেও দাগ থেকে যাবে। আর এই কাজটা করবে এক অতি সাধারণ রাসায়নিক পদার্থ। সিলভার নাইট্রেট। অবশ্য বেশ দামি উপাদান। কিন্তু তাতে মিশে রয়েছে রুপো। এই সিলভার নাইট্রেট চামড়ার লবণের সঙ্গে বিক্রিয়া করে রং বদলে বেগুনি হয়ে যাবে। আর সেই রং মোছা যাবে না। কিছুদিন পর নতুন চামড়া গজালে রং হারিয়ে যাবে।
১৯৬২ সালে নির্বাচনে প্রথম ভোটের কালি ব্যবহার করা হল। তবে মাইসোর পেইন্টসের জন্ম তার বহু আগে। ১৯৩৭ সালে মহীশুরের রাজা নলবদি কৃষ্ণরাজ ওয়েদার এই কারখানা তৈরি করেন। তবে নির্বাচনের মতো দায়িত্ব তো কোনো বেসরকারি সংস্থার হাতে দেওয়া যায় না। তাই তৃতীয় সাধারণ নির্বাচনের আগেই ভারত সরকার মাইশোর পেইন্টস অধিগ্রহণ করে। বিভিন্ন সরকারি গবেষণা সংস্থার উপাদান সরবরাহ করা ছাড়া এই সংস্থার প্রধান কাজ শুধুই ভোটের কালি তৈরি করা। আর শুধুই ভারতে নয়, গোটা এশিয়াতেই এই একটি কারখানাতে তৈরি হয় ভোটের কালি। আর এখান থেকেই পৌঁছে যায় মালয়, সিঙ্গাপুর সহ ১৬টি দেশে।
আরও পড়ুন
জোট-ঘোঁট-ভোট (৬) : ‘আমার আগে রাজীবকে রিটায়ার করাব’
নানা দেশেই ভোটের কালি ব্যবহার করা হয়। আবার অনেক সময় বিশেষ পরিস্থিতিতে হয় না। ভারতেই এমন ঘটনা বিরল নয়। ৯০-এর দশকে প্রবল মাওবাদী আতঙ্কের সময় ঝাড়খণ্ডের নির্বাচনে ভোটের কালি ব্যবহার করা হয়নি। তবে সাধারণভাবে ভোট দেওয়ার চিহ্ন মানেই এই কালি। ২ সপ্তাহ কি ৪ সপ্তাহ থাকে। তারপর মিলিয়ে যায়। কিন্তু এই কালির জোরে তৈরি সরকার টিকে যায় ৫ বছর।
আরও পড়ুন
চিনেভাষায় 'খেলা হবে', ভোটের দেওয়াল জুড়ে 'চিনে কলকাতা'
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
ভোটে কারচুপি, ডুয়েল কিংবা অতর্কিত মৃত্যু; মার্কিন নির্বাচনের সঙ্গে জড়িয়ে হাজারো কালো অধ্যায়