ব্যক্তিগত মারুতি তো বটেই, বাস, লরি, জেসিবি, ক্রেন, ট্রাক্টর, ফর্কলিফট, রোড রোলার, অটো এবং পেট্রোপণ্য বহনকারী ট্যাঙ্কার— বলতে গেলে প্রায় সমস্তরকম যানবাহনেই স্বচ্ছন্দ্য তিনি। সবমিলিয়ে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ১১ ধরনের চার চাকার যান চালানোর আনুষ্ঠানিক যোগ্যতাপত্র অর্থাৎ লাইসেন্স (License)।
রাধামণি আম্মা (Radhamani Amma)। কোচির থপুম্পাড়ির ৭৩ বছর বয়সি রাধামণিই ভারতের একমাত্র মহিলা যার কাছে ১০টিরও বেশি ভিন্ন ভিন্ন গোত্রের ভারী যানের লাইসেন্স। এবং মজার বিষয় হল, কেরলের ভারী যান চালানোর একমাত্র প্রশিক্ষকও তিনি।
তবে ছোটো থেকেই যে যান বাহনের প্রতি চরম আকর্ষণ ছিল তাঁর, ব্যাপারটা এমন নয় মোটেই। এমনকি তিনিই প্রথম গাড়ি চালাতে শিখেছিলেন ১৯৮১ সালে। তখন তাঁর বয়স ৩১ বছর। কোচির বুকেই ড্রাইভিং স্কুল ছিল তাঁর স্বামীর। আর তাঁর তত্ত্বাবধানেই প্রথম চালকাসনে বসে রাধামণির। সে-সময়ই ব্যক্তিগত চার চাকা চালানোর লাইসেন্স অর্জন করেন তিনি।
বাড়িতে ব্যক্তিগত মারুতি ছিল ঠিকই, তবে তা সত্ত্বেও এই লাইসেন্স খুব একটা কাজে লাগেনি তাঁর। মূলত, সওয়ারির আসনে বসতেই বেশি পছন্দ করতেন রাধামণি। তবে ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবেই প্রয়াত হন তাঁর স্বামী। বন্ধ হতে বসে তাঁর স্বপ্নের ড্রাইভিং স্কুল। পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরতে তাই বাধ্য হয়েই মাঠে নামতে হয় রাধামণিকে। ড্রাইভিং ট্রেনার হিসাবে শুরু হয় তাঁর জীবনের এক নতুন অধ্যায়।
প্রশিক্ষক হিসাবে কাজ করতে গিয়ে, রাধামণি লক্ষ করেন, কেরলে ব্যক্তিগত যান চালানোর প্রশিক্ষণকেন্দ্র থাকলেও, ভারী যান চালানোর কোনো প্রশিক্ষণকেন্দ্র নেই। ভারী যান অর্থে বাস, ট্রাক, ট্রাক্টর কিংবা জেসিবি-র মতো বাণিজ্যিক যান। এধরনের যান চালানোর প্রশিক্ষণ পেতে, স্থানীয়দের দৌড়াতে হয় ভিনরাজ্যে। তাঁদের সুবিধার্থে কি বিশেষ পরিকাঠামো গড়ে তোলা যায় না কোচিতে? এই প্রশ্নই ভাবিয়ে তুলেছিল রাধামণিকে।
যেমন ভাবনা, তেমনই কাজ। ২০১৪ সালে প্রথম থ্রি হুইলার অর্থাৎ অটোর লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেন তিনি। তারপর ভিনরাজ্যে গিয়ে শিখে আসেন বাস, ট্রাক, রোড রোলার, ক্রেন, ফর্কলিফ ইত্যাদি ভারী যান চালানো। একে একে লাইসেন্সও জোটে প্রতিক্ষেত্রে। তারপর নিজের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রেই এইসকল যান চালানোর প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন তিনি। উল্লেখ্য, এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রই ছিল কেরলের প্রথম হেভি ভেহিকল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট। আজ এহেন একাধিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র গড়ে উঠলেও, সে-রাজ্যের একমাত্র মহিলা প্রশিক্ষক হিসাবে ভারী যান চালানোর প্রশিক্ষণ দিয়ে চলেছেন ৭৩ বছর বয়সি ‘রাধে আম্মা’। বয়স যেন তাঁর কাছে শুধুই সংখ্যামাত্র!
Powered by Froala Editor