কলকাতার একমাত্র ‘গ্রিন ট্যাক্সি’ তাঁরই, লকডাউনে অসুস্থদের পাশে ধনঞ্জয়

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে সারা দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। যোগাযোগ ব্যবস্থাও রীতিমতো অপ্রতুল। অথচ পৃথিবীতে আরও নানা রোগে প্রতিদিন ভুগতে হয় মানুষকে। সেসবের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে পৌঁছতেই নাজেহাল হচ্ছেন বহু মানুষ। আর এই সময়েই এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে হাজির কলকাতার এক ট্যাক্সি চালক। সমস্ত আইন মেনেই শরীরকে দূরত্ব বজায় রেখে দুঃস্থ রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন তিনি। টালিগঞ্জ করুণাময়ী ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের সকলের পরিচিত ধনঞ্জয় চক্রবর্তী ওরফে বাপিদা, এভাবেই অসহায় মানুষদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি।

কোনো রকম সংক্রামক রোগ ছাড়া অন্য যেকোনো রোগের জন্য রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন বাপিদা। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে তাঁর এই উদ্যোগ। অবশ্য করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ সবসময় সহজে বোঝা যায় না। ফলে আশঙ্কা তো থেকেই যায়। কিন্তু এটুকু ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানো নিজের দায়িত্ব বলেই মনে করছেন বাপিদা। "নাহলে অসহায় মানুষরা কী করবে?" প্রশ্ন করেন তিনি। সুরক্ষার জন্য অবশ্য মাস্ক এবং স্যানিটাইজারের বন্দোবস্ত আছে তাঁর ট্যাক্সিতেই। সেইসঙ্গে প্রত্যেক যাত্রী ওঠানামার পর ডেটল দিয়ে পরিষ্কার করেন গাড়ি। এতে যতটুকু প্রতিরক্ষা নেওয়া যায়।

রাস্তায় অবশ্য অন্য কোনো ট্যাক্সি বা ক্যাব নেই। ফলে নানা জায়গা থেকেই ডাক আসছে তাঁর। সারা শহর ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে তাঁকে। অবশ্য এই পরিশ্রমের পর অসুস্থ মানুষদের মুখের হাসি দেখেই তাঁর সমস্ত ক্লান্তি চলে যায়, জানালেন বাপিদা। আর এভাবেই আরও একবার কলকাতার বুকে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গড়ে তুলতে পেরে সত্যিই আনন্দিত তিনি।

তবে, এটাই প্রথম নয়। এর আগেও বিভিন্ন ব্যতিক্রমী কাজে নজর কেড়েছেন তিনি। সেটা বাপিদার ট্যাক্সি দেখলেই বোঝা যায়। ট্যাক্সির মাথায় একটা সবুজ বাগান। মোটরগাড়ি কি বাতাসে শুধুই দূষণ ছড়ায়? বাপিদার ট্যাক্সি অক্সিজেনও ছড়ায়। বছর ছয় আগে তিনি এই বাগান তৈরি করেন ট্যাক্সির মাথায়। এমন ‘গ্রিন ট্যাক্সি’ কলকাতার রাস্তায় এই একটিই আছে।

তার দুবছর পর নিলেন আরও একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। তাঁর ট্যাক্সির গায়ে কার্টুনের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুললেন কলকাতার নানা ঐতিহ্যের বর্ণনা। সেইসঙ্গে ট্যাক্সির মধ্যে রাখলেন কার্টুনের বই। "ছোটোরা তো সারাদিন মোবাইল নিয়েই থাকে। আমার গাড়িতে উঠলে যদি একটু বই পড়ে।" এমনটাই আশা করেছিলেন বাপিদা। এভাবেই কলকাতার হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখছে তাঁর ট্যাক্সি।

আর সেই বাপিদাই এবার লকডাউনের জেরে বিপর্যস্ত রোগীদের পাশে এসে দাঁড়ালেন। আইন ভাঙতে অবশ্য আগ্রহী নন তিনি। অসুস্থতা ভিন্ন অন্য কোনো কারণেই তাঁর গাড়ি ভাড়া করা যাবে না। তবে অসহায় রোগীদের পরিবহনের জন্য সবসময় প্রস্তুত তিনি। এক্ষেত্রে তাই পুলিশও কোনোরকম বাধা দিচ্ছে না বলে জানালেন তিনি।

More From Author See More