ভাসমান স্থাপত্যের প্রসঙ্গ আসলেই, চর্চায় উঠে আসে ভেনিসের নাম। তবে পিছিয়ে নেই ভারতও। নেপথ্যে স্বর্গরাজ্যের রাজধানী শ্রীনগর। সেখানেই রয়েছে বিশ্বের একমাত্র ভাসমান পোস্ট অফিস, রয়েছে বিশ্বের প্রথম ভাসমান এটিএম-ও। আর ভাসমান গির্জা? না, কাশ্মীর নয়, বরং তার দর্শন পেতে ছুটতে হবে দক্ষিণ ভারতে।
বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে হেমাবতী নদীর ধারেই ছোট্ট গ্রাম শেট্টিহাল্লি। কর্ণাটকের (Karnataka) হাসান জেলায় অবস্থিত এই গ্রামেই রয়েছে ভারতের একমাত্র ভাসমান গির্জা (Floating Church)— শেট্টিহাল্লি রোজারি চার্চ। যা পরিচিত ‘নিমজ্জিত গির্জা’ নামেও। আসলে জন্মলগ্ন থেকেই এই গির্জা ভাসমান কিংবা জলে নিমজ্জিত নয়। বরং, কালের আবহেই তা তলিয়ে গেছে নদীগর্ভে।
১৮১০ সালের কথা। ফরাসি ধর্মপ্রচারক জিন-অ্যান্টোইন ডুবোইসের হাতে নির্মিত হয়েছিল এই গির্জা। দুটি ঘণ্টা বিশিষ্ট এই গির্জাটি নির্মিত হয়েছিল ইউরোপে প্রচলিত দ্বাদশ শতাব্দীর গথিক স্থাপত্যের অনুকরণে।
মূলত, ভারতে খ্রিস্টধর্ম প্রচার ও স্থানীয়দের ধর্মান্তরের লক্ষ্যেই এই গির্জা ও মিশনারি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। তাছাড়া ব্রিটিশ ও ফরাসি সাহেবদের উপাসনারও অন্যতম কেন্দ্র ছিল এই গির্জা। তবে দীর্ঘদিন ভারতে থাকতে থাকতে ভারতীয় সংস্কৃতি এবং হিন্দু ধর্মের প্রতি আকর্ষণ বাড়ে ডুবোইসের। স্থানীয় পোশাক পরিধান, হিন্দু জীবনধারা কিংবা নিরামিষাশী আহারে অভ্যস্থ হয়ে পড়েন তিনি। যার ফলাফল ছিল বেশ ইতিবাচক। রোজারি চার্চ শুধু খ্রিস্ট-ধর্মাবলম্বীদের জন্যই নয়, বরং হয়ে উঠেছিল ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দরিদ্র এবং অভাবীদের আশ্রয়কেন্দ্র। ১৮৩৩ সালে সালে ফের ফ্রান্সে ফিরে যান ডুবোইস। সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর। তবে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন হয়নি শেষ জীবনেও। মৃত্যুর ভারতের সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান নিয়ে প্রামাণ্য গ্রন্থ ‘ইনডোলজি’ লেখেন ডুবোইস।
আরও পড়ুন
নোতরদাম গির্জার ধ্বংসাবশেষের নিচে মিলল ত্রয়োদশ শতকের কফিন! অবাক প্রত্নতাত্ত্বিকরা
প্রাথমিকভাবে ডুবোইসের তৈরি একতলা গির্জাটি ছিল অনাড়ম্বর। তাঁর ফ্রান্স প্রত্যাবর্তনের পর ১৮৬০ সালে নতুন করে সাজানো হয় এই গির্জাকে। পুনর্নিমিত হয় গির্জার দুটি নতুন ভবন। বিদেশ থেকে কাচের দরজা, বিভিন্ন দামি আসবাবপত্র ও সামগ্রীও আমদানি করা হয়েছিল গির্জাটিকে সাজানোর জন্য।
আরও পড়ুন
পরিত্যক্ত বাড়ি ও গির্জা সংরক্ষণে স্কটিশ তরুণরা
এর ঠিক একশো বছর পরের ঘটনা। কর্ণাটকের হেমবতী নদীরও বাঁধ ও জলাধার নির্মাণের ফলে ক্রমশ বাড়তে থাকে নদীর জলতল। সে-সময় প্লাবনের শিকার হয় নদী তীরবর্তী ২৮টি গ্রাম। যার মধ্যে ছিল শেট্টিহাল্লির নামও। স্বাভাবিকভাবেই ধীরে ধীরে জলের তলায় তলিয়ে যায় রোজারিও চার্চও। বর্তমানে এই নদীর মাঝেই পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে এই গির্জা। সারা বছরই হাঁটুজল সেখানে। তবে বর্ষায় হেমাবতী ফুলেফেঁপে উঠলে কেবলমাত্র এক-তৃতীয়াংশ দেখা যায় এই গির্জার। আর সেই কারণেই ‘ভাসমান গির্জা’ বা ‘নিমজ্জিত গির্জা’-র তকমা জুটেছে তার কপালে। নষ্ট হয়েছে গির্জার অভ্যন্তরীণ অলঙ্করণ ও সজ্জা। ভেঙে পড়েছে ছাদও। তবু তার দেওয়ালগুলো দাঁড়িয়ে রয়েছে আজও। দাঁড়িয়ে রয়েছে পাথরের তৈরি যিশু-মূর্তি। এই গির্জার মতোই তাঁর বয়স ২১৩ বছর…
আরও পড়ুন
ইউরোপের বিভিন্ন গির্জায় ছড়িয়ে সন্ত ভ্যালেন্টাইনের দেহাবশেষ!
Powered by Froala Editor