বিশ্বের প্রবীণতম জীবিত স্থলচর, বয়স শুনলে চমকে উঠবেন আপনিও

উনিশ শতকের শেষের দিক কথা। দক্ষিণ আটলান্টিক অতিক্রম করেই সেসময় লাটিন আমেরিকায় পাড়ি দিত ইতালির বাণিজ্যতরী। যদিও খুব একটা সুবিধের ছিল না এই পথ। জলদস্যুদের আক্রমণ লেগে থাকত হামেশাই। কিন্তু সুদূর ইউরোপ থেকে থেকে সেনা নিয়ে গিয়ে বণিকদের সুরক্ষা দেওয়া কার্যত অসম্ভব ছিল ইতালির। অন্যদিকে আফ্রিকা এবং আফ্রিকা সংলগ্ন আটলান্টিক মহাসাগরীয় দ্বীপগুলিতে তখন একছত্র আধিপত্য ব্রিটেনের। বণিকদের সুরক্ষার জন্য তাই ব্রিটিশদের কাছেই দ্বারস্থ হয়েছিল ইতালি। ১৮৮২ সালে ব্রিটিশ অধ্যুষিত সেন্ট হেলেনা দ্বীপের গভর্নর স্যার উইলিয়াম গ্রে-ইউলসনকে বিশেষ উপহার পাঠায় ইতালি। আজও এই দ্বীপে গেলেই দেখা মিলবে সেই উপহারের। কিন্তু কী ছিল সেই উপহার?

না, কোনো দৈনন্দিন ব্যবহারের সামগ্রী নয়। সেটি ছিল একটি পোষ্য। তবে আমাদের চিরায়ত পোষ্যের ধারণার সঙ্গে বেশ বেমানান এই প্রাণীটি। কারণ, তার ওজন প্রায় চারশো কিলোগ্রাম। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছেন। ব্রিটিশ গভর্নরকে খুশি করতে প্রকাণ্ড এক কচ্ছপ (Giant Tortoise) উপহার দিয়েছিল ইতালি। ‘জোনাথন’-খ্যাত সেই দৈত্যাকার কচ্ছপ আজও জীবিত রয়েছে সেন্ট হেলেনায়। এমনকি জোনাথনই এই বিশ্বের প্রবীণতম জীবিত স্থলচর প্রাণী (Oldest Living Land Animal)। 

চলতি বছরেই ১৯০ বছরে পা দিয়েছে জোনাথন। যদিও এটি তার ন্যূনতম আনুমানিক বয়স। আনুমানিক বলার কারণ, কোনো চিড়িয়াখানা কিংবা কৃত্রিম প্রজননক্ষেত্রে জন্মায়নি জোনাথন। ভারত মহাসাগরীয় সেশেলিস দ্বীপপুঞ্জ থেকেই নিয়ে আসা হয়েছিল তাকে। বন্যপ্রাণীর বয়স নির্ণয় করার কোনো প্রযুক্তি সেভাবে আবিষ্কৃত হয়নি তখনও। ফলে, ১৮৮২ সালের নথিতে জোনাথনের বয়স সম্পর্কে কোনো উল্লেখ নেই। তবে কীভাবে নির্ণীত হল তার বয়স?

১৮৮২ ও ১৮৯০ সালের বেশ কিছু ছবি থেকেই এই অনুমান গবেষকদের। ভিন্ন ভিন্ন ছবির বিশ্লেষণে গবেষকরা দেখেছেন, ৮ বছরের ব্যবধানে কোনো পরিবর্তনই ঘটেনি জোনাথনের। ২০ বছরের ব্যবধানেও সেইভাবে বৃদ্ধি হয়নি তার। তার অর্থ সেন্ট হেলেনায় আসার আগেই প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠেছিল জোনাথন। অর্থাৎ, তখন তার বয়স ন্যূনতম পঞ্চাশ বছর তো বটেই। সেই হিসাবেই ২০২২ সালে ১৯০ বছরে পা দিল জোনাথন। 

আরও পড়ুন
পোষ্য পাচারের জেরে সংকটে ভারতের সবচেয়ে ‘সুন্দর’ কচ্ছপ

হিসেব মতো, রানি ভিক্টোরিয়ার সিংহাসনপ্রাপ্তি থেকে শুরু করে দুই বিশ্বযুদ্ধ, তিনটি মহামারী— সবকিছুরই সাক্ষী থেকেছে জোনাথন। তবে মজার বিষয় হল, বিশ শতকের শেষের দিকেও ভাবা হত জোনাথন ভারত মহাসাগরীয় দৈত্যাকার কচ্ছপ প্রজাতির প্রাণী। তবে পরে দেখা যায় সেশেলিস জায়েন্ট টরটয়েস সেটি। যা সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং অবলুপ্তপ্রায় একটি প্রজাতি। এবং আশ্চর্যজনক বিষয় হল, এই কচ্ছপ জলের স্পর্শ সহ্য করতে পারে না একেবারেই। ১৪০ বছরের ইতিহাসে হাতে গুনে মাত্র কয়েকবারই চান করেছে সে। 

আরও পড়ুন
এক শতাব্দী আগে বিলুপ্ত কচ্ছপের প্রজাতি এখনও লুকিয়ে গ্যালাপাগোসের অরণ্যে

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দৃষ্টিশক্তি ঝাপসা হয়েছে জোনাথনের। তবে এখনও তার শ্রবণশক্তি ঝরঝরে। চিকিৎসক জো হলিন্সের কথায় দিব্যি সাড়া দেয় সে। হলিন্সের অভিমত, এখনও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জোনাথন। ফলে, ২০০-তে পা দেওয়াও তার কাছে অস্বাভাবিক কিছুই নয়…

আরও পড়ুন
লিটল আন্দামানে পর্যটন শিল্পে ‘উন্নয়ন’, বিপন্ন বৃহত্তম কচ্ছপ প্রজাতি

Powered by Froala Editor

Latest News See More