বিতর্ক প্রথম দানা বেঁধেছিল আজ থেকে ১৬০ বছর আগে। চিনদেশে পাওয়া গিয়েছিল একটি জীবাশ্ম। আর তাতে দেখা গিয়েছিল সরীসৃপের মতো শক্ত চোয়াল, চোয়ালের উপর সারি সারি দাঁতের সঙ্গেই আছে দুটি পালকে মোড়া ডানা। হ্যাঁ, আর্কিওপটেরিক্সের কথাই বলা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা তখন ভেবে পাননি, এটা সরীসৃপ, নাকি পাখি? শেষ পর্যন্ত যদিও আর্কিওপটেরিক্সকে সরীসৃপ ও পাখির মধ্যবর্তী মিসিং লিঙ্ক হিসাবেই ধরে নেওয়া হয়। কিন্তু পালকের উৎপত্তি নিয়ে রহস্য আজও ঘোচেনি। আর সেই প্রশ্নকেই নতুন করে উস্কে দিচ্ছে চিনদেশে পাওয়া একটি ডাইনোসরের জীবাশ্ম।
সরীসৃপ থেকে পাখির জন্মের সময়ে পালকের উৎপত্তি হয়েছে ধরে নিলে মেনে নিতে হয়, ডাইনোসর যুগের শেষ দিক থেকে তাদের শরীরে পালক গজাতে শুরু করে। কিন্তু টেরোসোরাস নামের এই ডাইনোসরের জন্ম শেষভাগে তো নয়ই, বরং বেশিরভাগ ডাইনোসরের বিলুপ্তির অনেক আগেই এই প্রজাতিটি হারিয়ে যায় বলে বিশ্বাস বিশেষজ্ঞদের। অথচ সম্প্রতি চিনে সন্ধান পাওয়া টেরোসোরাসের জীবাশ্মে লোমশ উপবৃদ্ধি দেখে তাকে পালক ছাড়া অন্যকিছু বলে মানতে রাজি নন অনেকেই। যদিও এই নিয়ে এখনও একমত নন সমস্ত বিশেষজ্ঞ। কিন্তু কীভাবে টেরোসোরাসের শরীরে এমন লোমশ উপবৃদ্ধি দেখা দিল, এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর কারোরই জানা নেই।
টেরোসোরাস ছাড়াও এশিয়া ও ইউরোপে বেশ কিছু ডাইনোসরের শরীরে ডানার মতো গঠনের সন্ধান আগেই পাওয়া গিয়েছে। অর্থাৎ, কিছু কিছু ডাইনোসর উড়তে পারত বলেই বিশ্বাস বিশেষজ্ঞদের। যদিও সেই সমস্ত ডানা চামড়া দিয়ে তৈরি ছিল বলেই মনে করা হয়। কিন্তু ডাইনোসরের মতো বিরাট প্রাণী কি শুধু চামড়ার তৈরি ডানায় ভর দিয়ে উড়তে পারত? এই প্রশ্নের উত্তরও দেওয়া শক্ত। যদিও তাদের বেশিরভাগের শরীরে পালকের মতো কোনো গঠনও পাওয়া যায়নি। তবে পালক না হলেও, ‘প্রোটোফেদার’ বা পালকের মতো গঠনের অন্য উপবৃদ্ধি থাকা অসম্ভব নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। আবার কিছু স্তন্যপায়ীর শরীরে যেমন ক্ষণস্থায়ী লোমের সৃষ্টি হয়, ডাইনোসরের মধ্যেও তেমনটা দেখা যেত বলে মনে করছেন অনেকে। এখনও কোনো তত্ত্বের পিছনেই সঠিক কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে টেরোসোরাসের সঙ্গে আর্কিওপটেরিক্সের চেহারার অদ্ভুত সাদৃশ্য সত্যিই অবাক করে। হয়তো পরবর্তী কোনো জীবাশ্ম থেকে আরও বিশদ তথ্য জানা যাবে। ততদিন পর্যন্ত পালকের সৃষ্টি রহস্যেই ঢাকা থাকবে।
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
দ্রুত হারে কমছে হংসচঞ্চুর সংখ্যা, হারিয়ে যাবে এই জীবন্ত জীবাশ্মও?