মরণশয্যায় শুয়ে আছেন উসকোখুসকো চুলের এক বৃদ্ধ। চোখে মুখে ছাপ পড়েছে মৃত্যুর। নিউ জার্সির প্রিন্সটন হাসপাতালের কামরায় তখন উপস্থিত ডাক্তার থেকে নার্স। সময় যত এগোচ্ছে, ততই গাঢ় হচ্ছে শেষের ধ্বনি। এমন সময় মুখটা নড়ে উঠল ছিয়াত্তর বছর বয়সী বৃদ্ধের। কিছু যেন বলার চেষ্টা করছেন তিনি। কিন্তু কী বলছেন? বিশ্ব ইতিহাসের অন্যতম রহস্যের সামনে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছি আমরা। যে রহস্যের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন ওই বৃদ্ধ; বিজ্ঞানের জগতে যিনি মহীরুহ— অ্যালবার্ট আইনস্টাইন।
আপেক্ষিকতাবাদ, পদার্থবিদ্যা, বিজ্ঞান— আইনস্টাইনের কাজের পরিধি কেবল এখানেই আটকে ছিল না। একইসঙ্গে তিনি একজন চিন্তাবিদ, একজন বিশ্বনাগরিক এবং সঙ্গীতপ্রেমী। অনেক সময়ই যাঁর নিশ্চিত আশ্রয় ছিল ভায়োলিন। আবার পারমাণবিক বোমার সঙ্গেও জুড়ে যায় তাঁর নাম। একই আয়নায় ফুটে ওঠে অজস্র প্রতিবিম্ব। কিন্তু সব যাত্রার শেষেই তো দাঁড়ি পড়ে, আইনস্টাইনও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। অ্যাওর্টিক অ্যানইউরিসমের সমস্যায় ভুগছিলেন শেষ বয়সে। ডাক্তারের মত, শীঘ্রই অপারেশন করতে হবে। না হলে জীবন সংশয়। কিন্তু আইনস্টাইন কিছুতেই রাজি হলেন না। একজন অভিজ্ঞ পথযাত্রীর মতো নিজের যাত্রার শেষটা যেন দেখতে পাচ্ছিলেন। ডাক্তারকে বললেন, ‘আমার যা করার ছিল, তা করা হয়ে গেছে। এবার যাবার সময়। সেটাকে আটকাতে চাই না আমি।’ স্তব্ধ হয়ে রইল প্রিন্সটন হাসপাতাল…
পরের দিনই সেই অ্যানইউরিসম ফেটে গেল। বলা যেতে পারে, শরীরের ভেতরের শিরার একটি অংশ বিনষ্ট হয়ে গেল। ধীরে ধীরে শরীরও নিস্তেজ হতে শুরু করল। আইনস্টাইন বুঝতে পারলেন, মৃত্যু কড়া নাড়ছে। শেষ মুহূর্তে তাঁর মুখটা নড়ে উঠল। কিছু একটা বলার চেষ্টা করছেন। শেষ বক্তব্য? নার্স কানটা এগিয়ে নিয়ে এলেন আইনস্টাইনের মুখের সামনে। খুব আস্তে আস্তে কিছু কথা শোনা যাচ্ছে বটে, কিন্তু কিছুই বুঝতে পারছেন না তিনি। আইনস্টাইন ফিরে গেছেন জার্মানির উলম শহরে। সেখানকার স্থানীয় জার্মান ভাষাতেই বলে উঠেছিলেন শেষ শব্দগুলি। আমেরিকান নার্সের কাছে সেই শব্দগুলি সম্পূর্ণ অপরিচিত। কাজেই হারিয়ে গেল সেই শেষ কথা। তারপরেই মারা যান আইনস্টাইন। ঠিক কী বলেছিলেন তিনি? বিজ্ঞানের কথা? মানুষের কথা? নাকি পরমাণু বোমা নিয়ে আক্ষেপ? জানা যায়নি। জানা যাবে না কোনদিন…
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
নিজেকেই শত্রু ভাবলেন আইনস্টাইন, অনুশোচনায় দগ্ধ ওপেনহাইমার-ফেইনম্যানও