দৈর্ঘ্য ৫০ ফুট! সত্যিই কি কঙ্গোয় লুকিয়ে এমন দৈত্যাকার সাপ?

বিশ্বের বৃহত্তম সর্পপ্রজাতি হিসাবে ধরে নেওয়া হয় অ্যানাকোন্ডাকে। সর্বোচ্চ ৩০ ফুট বা ৯ মিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে আমাজনের এই বাসিন্দা। দেহের ব্যাস ছাড়িয়ে যায় ১ ফুট। অথচ, অ্যানাকোন্ডার আয়তনের প্রায় দ্বিগুণ বড়ো এক অজানা সাপের (Gigantic Snake) অস্তিত্ব রয়েছে এই পৃথিবীতেই। তবে লাতিন আমেরিকা নয়, বরং তার অস্তিত্ব রয়েছে আফ্রিকায়। ১৯৫৯ সালে এমনই এক আশ্চর্য দাবি করেছিলেন এক বেলজিয়ান পাইলট।

শুরু থেকেই বলা যাক ঘটনাটা। সেটা ১৯৫৯ সাল। কঙ্গো (Congo) তখনও পর্যন্ত বেলজিয়ান শাসন। তবে সে-দেশ থেকে উপনিবেশ গোটানোর তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে বেলজিয়াম শাসকরা। চূড়ান্ত সামরিক তৎপরতা কঙ্গো-জুড়ে। বেলজিয়াম অধিকৃত কঙ্গোর কামিনা বিমানঘাঁটি থেকে রুটিন মাফিক হেলিকপ্টারে চেপে রাজ্য পরিদর্শনে বেরিয়েছিলেন বেলজিয়ান বিমান বাহিনীর কর্নেল রেমি ভ্যান লিয়ের্দে। 

এই গল্প বলার ফাঁকে, পরিচয় দিয়ে রাখা যাক তাঁরও। ১৯১৫ সাল অর্থাৎ প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বেলজিয়ামের ওভারবোলারেতে জন্ম রেমির। ১৯৩৫ সালে বেলজিয়ান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বেলজিয়াম এবং ব্রিটেন— উভয় দেশের হয়েই বিমান উড়িয়েছেন তিনি। ধ্বংস করেছিলেন ৬টি জার্মান লুফটওয়াফে বিমান। পেয়েছিলেন ‘আরএএফ’ এবং ‘স্কোয়াড্রন লিডার’-এর তকমা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সময়ে তিনি বেলজিয়াম প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ডেপুটি চিফ স্টাফ হিসাবে নিযুক্ত হন তিনি। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে বিমানবাহিনীর ডিরেক্টর হিসাবে তাঁকে পাঠানো হয় কঙ্গোতে। 

এই ঘটনা সেই সময়েরই। কামিনা বিমানঘাঁটি থেকে দক্ষিণ কঙ্গোর লুম্বাবাসি শহরে যাওয়ার পথেই হেলিকপ্টার থেকে তাঁর নজরে পড়েছিল এক আশ্চর্য দৃশ্য। নিচে হট-লোমানি অরণ্য। সবুজ শামিয়ানার ফাঁক দিয়ে তিনি দেখতে পেয়েছিলেন প্রকাণ্ড এক সাপকে। কর্নেল রেমির দাবি অনুযায়ী, দৈর্ঘ্য সেই সাপ কমপক্ষে ৫০ ফুট তো বটেই। চওড়ায় ২ ফুট। পাশাপাশি ৩ ফুট লম্বা ত্রিভুজাকার মাথা। 

না, হঠাৎ করে ভুল ঠাহর করা নয়। এই দৃশ্যকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে অন্ততপক্ষে ৩ বার হেলিকপ্টারে করে প্রদক্ষিণ করেছিলেন তিনি। এমনকি তাঁর এক সহকর্মী ক্যামেরাবন্দি করেন এই আশ্চর্য দৃশ্যের ছবি। সাপটি হেলিকপ্টারের স্ট্রাইং রেঞ্জের মধ্যে থাকলেও, পাইলটকে গুলি না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন পশুপ্রেমী কর্নেল। কিন্তু কোন প্রজাতির সাপ এটি? 

এই প্রশ্নই আজীবন তাড়া করে বেরিয়েছে কর্নেলকে। তাঁর দাবি অনুযায়ী, সাপটির রং গাঢ় সবুজ। তার ওপর বাদামি বর্ণের আঁশের দাগ। পাশাপাশি তার মাথার নিচের অংশ নাকি সাদা। এই আশ্চর্য প্রাণীটির সম্পর্কে জানতে, বিশ্বের বিভিন্ন খ্যাতনামা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের কাছে দ্বারস্থ হয়েছিলেন রেমি। তবে সঠিক উত্তর মেলেনি কোথাও। 

কেউ বলেছিলেন এধরনের সাপ আজ পর্যন্ত আবিষ্কৃত হয়নি। অনেকে বিশ্বাসই করেননি কর্নেলের কথা। গোটা বিষয়টাকেই ভুয়ো বলে দাবি করেছিলেন একদল মানুষ। তা নিয়ে সে-সময় রীতিমতো চর্চাও চলেছিল গোটা বিশ্বজুড়ে। তবে সময়ের সঙ্গেই তা থিতিয়ে পড়ে ধীরে ধীরে। আশ্চর্যের বিষয় হল, বিশ্বযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা সত্ত্বেও, আজ যে-কজন মানুষ তাঁর কথা মনে রেখেছে, তা এই প্রকাণ্ড সাপের ‘পর্যবেক্ষক’ হিসাবেই। 

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, সত্যিই কি ঠিক দেখেছিলেন তিনি? নাকি এই গল্প তাঁর কল্পনাপ্রসূত? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন। তবে গবেষকদের একাংশের বিশ্বাস, সাপটি ছিল আদতে বিশাল আকারের আফ্রিকান রক পাইথন। চলন্ত হেলিকপ্টার থেকে দেখে, তার আয়তন সম্পর্কে যথাযথ অনুমান করতে ব্যর্থ হন কর্নেল। আবার এই সম্ভাবনাও থেকে যায়, প্রাগৈতিহাসিক দৈত্যাকার ইওসিন সাপ ‘জাইগান্টোফিস’-এর শেষ বংশধর ছিল এটিই। কিছু গবেষকদের অভিমত এমনটাই। অবশ্য এই ঘটনার পর দ্বিতীয়বারের জন্য এহেন প্রাণীর দর্শন পাননি কেউ-ই। তবে কে-ই বা বলতে পারে, আজ থেকে কয়েক দশক পর হয়তো কঙ্গোর ঘন অরণ্য থেকে প্রথাগতভাবেই আবিষ্কৃত হবে এই প্রকাণ্ড সর্প প্রজাতি…

Powered by Froala Editor