আমাজনের গভীর অরণ্যের মধ্যে লুকিয়ে আছে কত না রহস্য। অ্যানাকোন্ডা বা পিরানহা মাছের কথা তো মোটামুটি সকলেরই জানা। কিন্তু ঘোস্ট ডগের কথা সেভাবে শোনেননি অনেকেই। না, নাম শুনে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভূতের মতো সে ভয় দেখায় না। বরং মানুষ দেখলেই খানিকটা ভয়ে ত্রস্ত হয়ে থাকে সে। আর সে কারণেই তার সন্ধান পাওয়া বেশ কঠিন। এই কারণেই এমন নামকরণ। বিজ্ঞানের জগতে সব থেকে কম আলোচিত কুকুর শ্রেণীর প্রাণীর কথা বললে সম্ভবত এই নামটিই আসবে।
ছোট ছোট কানের জন্য এই কুকুরের পোষাকি নাম শর্ট-ইয়ার্ড ডগ। সেইসঙ্গে বিশেষ বৈশিষ্ট্য বলতে আছে সরু মুখ এবং ঝাউয়ের মতো লেজ। অর্থাৎ চেহারার মধ্যে নেকড়ের সঙ্গে খানিকটা মিল পাওয়া যায়। কিন্তু ব্যবহারে একেবারেই উলটো। মানুষের কোনো চিহ্ন দেখলেই দূরে সরে যায়। আর তাই দীর্ঘদিন পর্যন্ত তার সম্বন্ধে প্রায় কোনো তথ্যই জানা যায়নি। হয়তো পশু চিকিৎসক রেটানা লিট পিটম্যান না থাকলে চিরকাল রহস্যের অন্ধকারে থেকে যেত ঘোস্ট ডগ।
পিটম্যান যখন আমেরিকায় তাঁর কর্মজীবন শুরু করতে চলেছেন, তখনই এক পর্যটকের থেকে খবর পেলেন পেরুর জঙ্গলে নাকি গত দুই বছরে ১০টির বেশি ঘোস্ট ডগের সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা। আর এই খবর শুনেই সঙ্গে সঙ্গে গবেষণার কাজে পাড়ি দিলেন পিটম্যান। সেটা ২০০০ সাল। তবে এরপর প্রায় তিন বছর সেখানে কাটানোর পরেও কোনো কুকুরের দেখা পেলেন না তিনি। শুধু স্থানীয় উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষদের থেকে বেশ কিছু তথ্য জানতে পারলেন। সেইসব তথ্য সম্বল করে যখন অন্য একটি জায়গায় বেস ক্যাম্প তৈরির পরিকল্পনা করছেন, তখনই খবর আনল এক গ্রামবাসী। স্থানীয় এক শিকারির কাছ থেকে সে কিনেছে একটি ঘোস্ট ডগ। আর সেই গ্রামবাসী তাকে পোষ মানানোর চেষ্টা করছে। নাম রেখেছে ‘সোলো’।
এই প্রথম গবেষণার একটি সূত্র খুঁজে পেলেন পিটম্যান। বন্য এই প্রাণীটিকে পরীক্ষা করার পাশাপাশি তাকে জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করতে থাকেন। শেষে প্রায় এক বছর পর সেই গ্রামবাসী কিছু অর্থের বিনিময়ে রাজি হলেন। কুকুরটিকে জঙ্গলের সঙ্গে পরিচিত করার পাশাপাশি তার চরিত্র পরীক্ষার চেষ্টাও করেছেন। গলায় ভিডিও ট্র্যাকার লাগিয়ে তার চালচলন নজরে রেখেছেন। তবে এভাবে বছর চারেক চলার পরেই হঠাৎ সেই কুকুর জঙ্গলের ভিতরে এক জঙ্গলি উপজাতির মধ্যে মিশে যায়। আর তখন ট্র্যাকারের ব্যাটারিও শেষের দিকে। কিন্তু ওই জঙ্গলি উপজাতির মধ্যে যাওয়ার অনুমতি পেলেন না পিটম্যান। ফলে আর বিস্তৃত কোনো তথ্যই জানা যায়নি। কিন্তু যা জানা গিয়েছে তাও নিতান্ত অকিঞ্চিৎকর নয়।
আরও পড়ুন
আমাজনের এক চামচ মাটিতে আছে কয়েক হাজার প্রজাতির ছত্রাক!
স্পষ্ট কোনো হিসাব না থাকলেও পিটম্যানের অনুমান আনুমানিক ১৫০০০ ঘোস্ট ডগ আছে আমাজনের জঙ্গলে। তবে ক্রমশ জঙ্গলের ঘনত্ব কমে আসায় বিপদে এই প্রাণীরা। আর পিটম্যানের মতে ঘোস্ট ডগের বাসস্থানের ৩০ শতাংশই গত ১ বছরে মুছে গিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো আর বেশিদিন তার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। মানুষের অবাধ আগ্রাসনের মুখে এমন কত প্রজাতিই তো হারিয়ে যাচ্ছে রোজ।
আরও পড়ুন
আবারও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে আমাজন, বিধ্বংসী বন্যার কবলে আদিবাসী উপজাতিরা
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আমাজনের আদিবাসী কিশোরের শরীরে করোনা, আশঙ্কা গোষ্ঠী সংক্রমণের