দুঃসময়েও ইতিবাচক ভাবনাকে উস্কে দিতেই ‘এলো মা দুগ্গা’

“একটা রিয়েলিটি শোয়ের মধ্যে প্রতিযোগীদের মধ্যে নানারকম সম্পর্ক থাকে। কিন্তু শো শেষ হলে সেই বন্ধুত্ব একইভাবে টিকে থাকে না সচরাচর। এরা সত্যিই একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।” সাম্প্রতিক দুটি কাজের শেষে এমনটাই বলছিলেন চিত্রগ্রাহক প্রশান্ত কুমার সুর। সেই বন্ধুত্বের ছোঁয়া আছে গোষ্ঠীর নামের মধ্যেও। ‘এসো বন্ধু’, এই নামেই ফিরে এলেন জি-বাংলা সা-রে-গা-মা-পা ২০১৮-১৯ সিজনের সব মিলিয়ে ১৬ জন শিল্পী। ইতিমধ্যে ‘রু মিউজিক’-এর প্রযোজনায় প্রকাশ পেয়েছে গোষ্ঠীর প্রথম ভিডিও, ‘এলো মা দুগ্গা’।

দুর্গাপুজোর আবহে ‘এলো মা দুগ্গা’ মন কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য শ্রোতার। আর এই বছরের পুজোটা তো ঠিক বাকি বছরের মতো নয়। শিল্পী অনন্যা চক্রবর্তী বলছিলেন, “এই করোনা পরিস্থিতিতে বহু মানুষ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ নিজে বেঁচে থাকার জন্য, কেউ অন্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আমরা এই মিউজিক ভিডিও-র মাধ্যমে তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধা জানাতে চেয়েছি। সেটা ভিডিওটা দেখলেই বুঝতে পারবেন।” আসলে পুজোর একটা গানের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছিল আগে থেকেই। আর করোনা পরিস্থিতিতে তখনও মঞ্চানুষ্ঠানের সুযোগ ছিল না। তাই মিউজিক ভিডিওর কথাই ভাবা হয়েছিল। “এই সময়েই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করল ‘রু মিউজিক’। আমরাও রাজি হয়ে গেলাম। মহামারীর মধ্যেও যে মা আসছে, এই আনন্দের ছোঁয়াটাই ধরতে চেয়েছি।” বলছিলেন শিল্পী গৌরব সরকার।

করোনা পরিস্থিতিতে এত বড় একটা কাজ করাও বেশ সমস্যার ছিল। কারোর কারোর বাড়িতে রেকর্ডিং স্টুডিও আছে। সেখানে গিয়েই বাকিরাও রেকর্ড করেছেন। বাংলাদেশ থেকে রেকর্ডিং পাঠিয়েছেন অবন্তী সিঠি। এভাবেই টুকরো টুকরো রেকর্ডিং জুড়ে তৈরি হয়েছে পুরো গান। কিন্তু গানের জন্য ভিডিও দরকার। আর তার জন্য যাওয়া হল ডানকুনির কাছে করালগাছা রাজবাড়িতে। সেখানেই প্রায় পুজোর আয়োজন করে ফেলা হয়েছিল। প্রহরকে সেইসব অভিজ্ঞতার কথা শোনাচ্ছিলেন অনন্যা ও গৌরব। প্রায় হৈ-হৈ করেই হয়ে গেল প্রথম কাজ। আর এই এক সপ্তাহে দেড় লক্ষের বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়েছে সেই কাজ।

তবে এখানেই শেষ নয়। খুব শিগগিরি আসতে চলেছে ‘এসো বন্ধু’-র দ্বিতীয় কাজ। পুজোর প্রেক্ষাপটে তৈরি হলেও সেই কাজ একটা সামাজিক বার্তা দিতে চাইছেন শিল্পীরা। আর তার জন্য তাঁরা পৌঁছে গিয়েছেন আমফান বিধ্বস্ত সুন্দরবনে। বকখালি, মৌসুনি দ্বীপ অঞ্চলে গিয়ে তৈরি করেছেন দ্বিতীয় ভিডিও। এমনকি সেখানকার বিপর্যস্ত মানুষদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করেছেন নিজেরাই। সঙ্গে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ‘হাত বাড়ালেই বন্ধু’ নামের একটি এনজিও। বন্ধুত্ব যেন শুধু শিল্পীদের মধ্যেই নয়, বরং সমাজের সমস্ত স্তরে সেই বার্তাই পৌঁছে দিতে চাইছে ‘এসো বন্ধু’। পুজোর প্রেক্ষাপটে এমন দুটো কাজ যে শ্রোতাদের মন জয় করবে সে-বিষয়ে আশাবাদী শিল্পীরাও। গৌরব সরকারের কথায়, “মা আসছেন, আর মা এলে আমাদের সব সমস্যার সমাধান হবেই। এমন একটা ইতিবাচক চিন্তাই তুলে ধরতে চেয়েছি আমরা।” দুঃসময় তো আছেই। শুধু তার থেকে মুক্তির আশাটুকুই বাঁচিয়ে রাখা দরকার।

Powered by Froala Editor