দুটি হাত, দুটি পা, একটি মাথা - ঠিক মানুষ না হলেও মানুষের জাতভাই বানর বা শিম্পাঞ্জি হিসেবে ধরে নেওয়াই যায়। কিন্তু একটু ভালো করে দেখলেই অবাক লাগে। মানুষের বা বানরগোত্রের অন্যান্য প্রাণীর মতো লম্বা খাদ্যনালি নয় তার। বরং তার বদলে আছে এক গোলাকার প্রকোষ্ঠ। আর বিরাট দুটি অক্ষিগোলক যেন দুদিকে অনেক বেশি টানা। কপালের পরিসরও অনেক বেশি চওড়া। এতক্ষণে নিশ্চই বুঝে গিয়েছেন কোন প্রাণীর কথা বলা হচ্ছে। চোখের সামনে দেখার সুযোগ না হলেও গল্পের বইতে এমন ছবি সবাই দেখেছেন। ভিনগ্রহের প্রাণী বা এলিয়েন। হ্যাঁ, তবে এটা কোনো শিল্পীর কল্পনা থেকে আঁকা ছবি নয়। বরং অটোপ্সি টেবিলে শুয়ে থাকা এক প্রাণীর একটি আলোকচিত্রের নেগেটিভ সম্প্রতি ই-কমার্স মাধ্যমে নিলামে উঠেছে। ইতিমধ্যে তার দাম ১১ লক্ষ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। সেইসঙ্গে উঠে আসছে বেশ কিছু পুরনো বিতর্কও। কোথায় পাওয়া গেল এমন অবাক করা আলোকচিত্র?
এই তথ্য অনুসন্ধান করতে গেলে পিছিয়ে যেতে হবে ৭ দশক। ১৯৪৭ সালের ঘটনা। নিউ মেক্সিকোর রসওয়েল শহরে কিছু মানুষ দাবি করেন, তাঁরা সকালের আকাশে একটি পিরিচের আকৃতির অতিকায় বস্তুকে উড়ে বেড়াতে দেখেছেন। মুহূর্তে রটে যায় সেটি আর কিছুই নয়, ভিনগ্রহ থেকে আসা এক আকাশযান। এরপর গুজব আরও ছড়াতে থাকে। শোনা যায় রসওয়েল শহর থেকে কিছু দূরে সেই অজানা উড়ন্ত বস্তুটিকে পড়ে থাকতে দেখে মার্কিন সেনাবাহিনী। শুধু তাই নয়, আকাশযানের ভিতর থেকে উদ্ধার হয় ভিনগ্রহের এক প্রাণীর মৃতদেহও। অত্যন্ত গোপনে নাকি তার পোস্ট-মর্টেম পরীক্ষাও করা হয়। সেদিন অবশ্য এমন সব কথার প্রেক্ষিতে কোনো কথাই বলেনি মার্কিন সেনাবাহিনী। একেবারে মুখে কুলুপ আঁটা যাকে বলে।
তবে সম্প্রতি আলোচনার শিরোনামে উঠে এসেছে সেই রহস্যময় পোস্ট-মর্টেম পরীক্ষাই। সেই পরীক্ষার সময় নাকি একটি ছবিও তোলা হয়েছিল। দীর্ঘদিন গোপন নথি হিসাবে তা লুকানো থাকলেও তা এবার একেবারে নিলামের আসরে। সেইসঙ্গে পাওয়া গিয়েছে নন-ফাঙ্গিবল টোকেন বা এনএফটি তকমাও। এর অর্থ, ছবিটি বিকৃত নয়, তা একেবারে একটি নিখাদ আলোকচিত্র। তাহলে কি সত্যিই পৃথিবীর বাইরেও কোনো অতি উন্নত প্রাণী আছে? মাঝে মাঝে তারা পৃথিবীর কক্ষপথেও চলে আসে? এই প্রশ্নের উত্তর যদিও ততটা সহজ নয়। কারণ এনএফটি তকমা পেলেও আজও এই রহস্যময় নেগেটিভ ঘিরে বিতর্কের শেষ নেই।
১৯৯২ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর এক ক্যামেরাম্যানের কাছ থেকে নেগেটিভটি কিনে নিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের চলচ্চিত্র প্রযোজক রে সান্টিলি। সেই থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। অনেকেই দাবি করতে থাকেন, নেহাৎ ঠকে গিয়েছেন সান্টিলি। এমন কোনো ছবির অস্তিত্ব থাকতেই পারে না। সেই বিতর্ক স্বীকৃতি পায় ২০০৬ সালে। আমেরিকার এক মূর্তি নির্মাতা, জোন হামফ্রে প্রকাশ্যে দাবি করেন ছবিটি বাস্তব হলেও তাতে যে প্রাণীটি দেখা যাচ্ছে সেটি বাস্তব নয়। বরং ১৯৪৭ সালে এমন একটি মূর্তি তাঁকে দিয়ে বানানো হয়েছিল মানুষকে বোকা বানানোর জন্য। ২০১৭ সালে স্পায়রোস মেলারিস নামের এক চিত্রনির্মাতা জানান, তিনিও যুক্ত ছিলেন সেই ষড়যন্ত্রে। এত কিছুর পর আর সন্দেহ থাকে না যে ছবিটি নেহাৎ তুচ্ছ। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় এখানেই বিতর্কের সমাধান হল না।
আরও পড়ুন
আকাশগঙ্গায় বহুদিন আগেই অবলুপ্ত হয়ে গেছে ভিনগ্রহীরা, জানাল সাম্প্রতিক গবেষণা
২০১৯ সালে প্রকাশ্যে আসে ন্যাশানাল ইনস্টিটিউট অফ ডিসকভারি সায়েন্স সংস্থার একটি স্বাধীন গবেষণার রিপোর্ট। যদিও সংস্থাটি তখন অস্তিত্ব হারিয়েছে। কিন্তু এই পরীক্ষা করা হয়েছিল ২০০১ সালে। আর তাতে দাবি করা হয় নেগেটিভে কোনো কৃত্রিম মূর্তি নেই, আছে একটি মৃত প্রাণী। সেই প্রাণীর চেহারার সঙ্গে যে বিজ্ঞানীদের চেনা কোনো প্রাণীর কোনো মিল নেই, সে-কথা বলাই বাহুল্য। এতকিছুর পরেও তাই বিতর্কের প্রকৃত মীমাংসা হল না। কিন্তু সান্টিলি আর নিজের কাছে রাখতে রাজি নন নেগেটিভটি। অতএব ‘রারিবল’ নামের ই-কমার্স মাধ্যমে নিলামে তোলা হয়েছে। ইতিমধ্যে অন্তত ১০ লক্ষ মানুষ সেই নিলামে অংশ নিয়েছেন। তবে আবারও প্রশ্ন উঠছে, এই বিপুল অর্থ ব্যয় করে আবারও কি কেউ কোনো গোপন ষড়যন্ত্রের শিকার হতে চলেছেন?
আরও পড়ুন
ভিনগ্রহের প্রাণী নয়, মানুষের হাতেই তৈরি দুবাইয়ের ফুলের মতো হ্রদ
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
এই ছায়াপথেই রয়েছে অন্তত ৩৬টি ভিনগ্রহের সভ্যতা, বিজ্ঞানীদের গবেষণায় চাঞ্চল্য