ফিরে দেখা ২০২০ : জনজীবন থমকে দিয়েছিল যেসব ভয়ংকর বিপর্যয়

/১৫

২০২০ সাল এক অভিশপ্ত বছর। সারা পৃথিবীতেই দুর্ঘটনার সংখ্যা নেহাত কম নয়। কোথাও প্রাকৃতিক কারণে, আবার কোথাও মানুষের গাফিলতিতেই বিপর্যস্ত হয়েছে জনজীবন। বছরশেষে, তেমনই কিছু অভিশপ্ত ঘটনার কথা।

/১৫

অস্ট্রেলিয়ার দাবানল ২০১৯ সালের জুন মাসেই অস্ট্রেলিয়ার ভিক্টোরিয়া উপকূল অঞ্চলে অগ্নিকাণ্ড ঘটে। সেই আগুন জ্বলেছে ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত। প্রায় ৪ কোটি ৬০ লক্ষ হেক্টর বনভূমি আগুনের কবলে চলে গিয়েছে। সরকারি হিসাবে মারা গিয়েছেন ৩৪ জন মানুষ। এছাড়া বন্যপ্রাণীর হতাহতের সংখ্যা এখনও হিসাব করে ওঠা হয়নি। মনে করা হচ্ছে শুধু মৃত স্তন্যপায়ীর সংখ্যাই ৩০ লক্ষ। এছাড়া কত পাখি, সরীসৃপ ও পতঙ্গের মৃত্যু হয়েছে, তার হিসাব নেই। দাবানলের ফলশ্রুতি হিসাবে আসে খরা। আজও সেই ক্ষরার প্রভাব চলছে সমগ্র দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ায়। সরকারি হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

/১৫

ইন্দোনেশিয়ার বন্যা ২০২০ সালের প্রথম দিনেই ইন্দোনেশিয়ার বুকে নেমে আসে প্রকৃতির অভিশাপ। আগের দিনের অবিশ্রান্ত বৃষ্টির পর রাজধানী জাকার্তায় দেখা দিল বন্যা। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০০৭ সালের পর ইন্দোনেশিয়ার বুকে এমন বিধ্বংসী বন্যা আর হয়নি। অন্তত ৪ লক্ষ মানুষ বাসস্থান হারান। বন্যায় মৃত্যু হয় ৬৬ জনের। ১ মাস ধরে রাজধানী জাকার্তা কার্যত স্তব্ধ ছিল। বন্যার কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। আজও তার সম্পূর্ণ মেরামতি সম্ভব হয়নি।

/১৫

তাল অগ্ন্যুদ্গার জানুয়ারি ১২, ঠিক মধ্যরাতে ফিলিপাইনের তাল আগ্নেয়গিরিতে ঘটে গেল বিষ্ফোরণ। রাত ঠিক ৩:২০, পাহাড়ের চূড়া থেকে বেরিয়ে আসতে থাকল লাভার স্রোত। সবাই সচেতন হওয়ার সুযোগটুকুও পেলেন না। বিষ্ফোরণের ফলে ৩৯ জন মানুষের মৃত্যু হল। ধ্বংস হল বিস্তীর্ণ বনভূমি। ৪.৩ রিখটার তীব্রতায় কেঁপে উঠল আশেপাশের মাটি। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহণেও গোলযোগ সৃষ্টি হল। আজও ফিলিপাইনের বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে ছাইয়ের গুঁড়ো। বাকি পৃথিবীর অনেক আগেই মাস্ককে আপন করে নিয়েছেন ফিলিপাইনের মানুষ।

/১৫

কুরিল ভূমিকম্প ২৫ মার্চ, ২০২০। ঠিক দুপুরে রাশিয়ার কুরিল দ্বীপ কেঁপে উঠল। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭.৫। সরকারি হিসাবে হতাহতের কোনো সংখ্যা জানানো হয়নি। তবে অনেকের আহতের সংখ্যা কোনোভাবেই ৫০০ জনের কম নয়। সমুদ্রের কাছে ভূমিকম্প হওয়ায় সুনামির সতর্কতাও জারি করা হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যায়নি।

/১৫

ক্যালিফোর্নিয়া দাবানল মার্চ মাসে হঠাৎ ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন শহরে লাল সতর্কতা জারি করে সরকার। জানা যায়, উপকূলীয় বনভূমিতে আগুন লেগেছে। দেখতে দেখতে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এখনও অবধি ৯ হাজার বর্গ কিলোমিটারের বেশি এলাকা আগুনের গর্ভে চলে গিয়েছে। অনেক শহর থেকে মানুষের বসতি সরিয়ে নিতে হয়েছে। কিছুদিনের মধ্যেই বদলে যেতে থাকে ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশের রং। ছাইয়ের স্তর ভেদ করে সূর্যের আলো এসে আকাশকে কমলা করে তুলেছে। এখনও সমানে জ্বলছে ক্যালিফোর্নিয়ার দাবানল।

/১৫

ইস্টার টর্নেডো ঠিক ইস্টারের প্রাকমুহূর্তে আমেরিকা মহাদেশের দক্ষিণে আছড়ে পড়ে এই বিধ্বংসী ঘুর্ণিঝড়। আটলান্টিক মহাসাগরে টর্নেডোর প্রকোপ নতুন নয়। প্রতিবারের মতো এবারেও হঠাৎ চারিদিক কাঁপিয়ে ছুটতে থাকে ঝড়ো হাওয়া। মিসিসিপির দক্ষিণে হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৯০ কিলোমিটারের কাছাকাছি। ১২ এবং ১৩ এপ্রিল সাউথ ক্যারোলিনার ১৫টি অঞ্চলে নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়। অবশ্য আগাম সতর্কতা থাকায় ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই এড়ানো গিয়েছে।

/১৫

ঘূর্ণিঝড় আমফান ২০২০ সালের সবচেয়ে বড়ো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসাবে স্বীকৃত বঙ্গোপসাগরের বুকে তৈরি হওয়া ঘূর্ণিঝড় আমফান। ১৬ এপ্রিল ঝড় দানা বাঁধতে শুরু করে। তখন থেকেই সতর্কতা দেখা যায়। কিন্তু তার পরেও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সমস্ত কল্পনাকে ছাপিয়ে যায়। ২০ এপ্রিল পশ্চিমবঙ্গের উপকূল অঞ্চলে আছড়ে পড়ে এই ঘূর্ণিঝড়। এরপর ২১ এপ্রিলের মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ উপকূল লণ্ডভণ্ড করে আমফান হারিয়ে যায়। আগে থেকে সতর্ক হওয়ায় মানুষের জীবন বাঁচানো গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বিস্তীর্ণ জঙ্গল ও কৃষিজমি নষ্ট হয়েছে। তছনছ হয়ে গিয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। সরকারি হিসাবে দুই দেশ মিলিয়ে ১৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পদ নষ্ট করেছে আমফান।

/১৫

উত্তরাখণ্ডের দাবানল ২৪ মে, ২০২০; গারোয়াল জেলার শ্রীনগরে হঠাৎ আগুন লেগে যায়। আগুন লাগার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তবে একে একে ৪৬টি বিচ্ছিন্ন অঞ্চলে সেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। সব মিলিয়ে ৭১ হেক্টর বনভূমি নষ্ট হয়ে যায়। ২ জন মানুষ সহ অসংখ্য বন্যপ্রাণী প্রাণ হারায় এই দুর্ঘটনায়।

১০/১৫

বাঘজান তৈলখনি দুর্ঘটনা ২৭ মে আসামের বাঘজান তৈলখনির ৫ নং ট্যাঙ্কে হঠাৎ আগুন লাগে। প্রাথমিকভাবে কিছু কর্মচারীর উপরে দুর্ঘটনার দায় চাপানো হলেও ক্রমশ বে-আইনি তেল উত্তোলনের বিষয়টি সামনে আসতে থাকে। তবে এইসব্বিতর্কের মধ্যেই ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে আগুন। প্রভাব পড়ে আশেপাশের অরণ্য প্রকৃতিতেও। তবে অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের একাধিক চেষ্টার পরেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এমনকি সিঙ্গাপুর থেকে আসা বিশেষজ্ঞরাও সফল হননি। নভেম্বর মাস নাগাদ আগুনকে একটি সীমানার মধ্যে ঘিরে ফেলা গেলেও তাকে সম্পূর্ণ নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হয়নি আজও।

১১/১৫

বাঘজান তৈলখনি দুর্ঘটনা ২৭ মে আসামের বাঘজান তৈলখনির ৫ নং ট্যাঙ্কে হঠাৎ আগুন লাগে। প্রাথমিকভাবে কিছু কর্মচারীর উপরে দুর্ঘটনার দায় চাপানো হলেও ক্রমশ বে-আইনি তেল উত্তোলনের বিষয়টি সামনে আসতে থাকে। তবে এইসব্বিতর্কের মধ্যেই ক্রমশ ছড়িয়ে পড়তে থাকে আগুন। প্রভাব পড়ে আশেপাশের অরণ্য প্রকৃতিতেও। তবে অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেডের একাধিক চেষ্টার পরেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি। এমনকি সিঙ্গাপুর থেকে আসা বিশেষজ্ঞরাও সফল হননি। নভেম্বর মাস নাগাদ আগুনকে একটি সীমানার মধ্যে ঘিরে ফেলা গেলেও তাকে সম্পূর্ণ নিভিয়ে ফেলা সম্ভব হয়নি আজও।

১২/১৫

বাংলাদেশ বন্যা জুন মাসের শুরুতেই বাংলাদেশের উত্তরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। ভারতের পার্বত্য অঞ্চল থেকে জল নিচে নেমে এমনটা প্রায় প্রতি বছরই দেখা যায়। কিন্তু সেই জল নেমেও যায়। এবছর বারবার বন্যা থেমে যাওয়ার বিষয়ে আশা প্রকাশ করা হলেও প্রায় দুমাস ধরে তার প্রকোপ চলতে থাকে। অন্তত ৪০ হাজার মানুষ বন্যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ভেসে গিয়েছে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি।

১৩/১৫

বেইরুট বিস্ফোরণ ৪ আগস্ট, ২০২০; লেবাননের বেইরুট বন্দর হঠাৎ কেঁপে উঠল বিস্ফোরণে। আগে থেকে কোনো সতর্কতা ছিল না। ফলে হতাহতের সংখ্যা মাত্রা ছাড়ায়। সরকারি হিসাবে ২০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি। এর মধ্যে লেবানন ছাড়াও আরও ২২টি দেশের মানুষ রয়েছেন। তদন্তে জানা গিয়েছে বন্দরে সঞ্চিত অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকেই বিস্ফোরণ ঘটে। সামান্য অসতর্কতার ফলে ১৫০ জন মানুষ স্থায়ী বিকলাঙ্গে পরিণত হয়েছেন।

১৪/১৫

রাজস্থান বন্যা মরুভূমির দেশ রাজস্থান। কিন্তু প্রকৃতির খামখেয়ালিপনায় সেখানেও দেখা দিল বন্যা। ১৬ আগস্ট লুনি নদী থেকে বন্যার শুরু। এরপর ক্রমশ তা দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। মহারাষ্ট্রের মুম্বাই শহর পর্যন্ত বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে যায়। পশ্চিমভারতের বুকে এমন ভয়াবহ বন্যা সাধারণত দেখা যায় না।

১৫/১৫

করোনা অতিমারী তবে এই সমস্ত দুর্ঘটনাকে ছাপিয়ে যায় সারা পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়া অতিমারী করোনা। ২০১৯ সালেই চিনের উহান প্রদেশে এই ভাইরাসের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সঠিক সময়ে সতর্কতা না নেওয়ায় ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশে রোগ ছড়িয়ে পড়তে থাকে। এখনও অবধি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ১ কোটি ৮০ লক্ষ মানুষ। মৃত্যু হয়েছে ১৭ লক্ষ ৮০ হাজার জনের। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আমেরিকা এবং ভারত। এমনকি আন্টার্কটিকার বুকেও ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস। এর মধ্যেই ডিসেম্বর মাসে করোনা ভাইরাসের নতুন প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে ব্রিটেনে। নতুন বছরেও করোনা আতঙ্ক আমাদের তাড়া করে বেড়াবে।

Powered by Froala Editor

More From Author See More