বাঘ ভাবতেন নিজেকে, বদলে ফেলেছিলেন চেহারাও!

দুটি ফোলা ফোলা গালের মাঝখানে একটি তিলমাত্র নাক। আর তার নিচেই মাঝখানে কাটা ঠোঁট। মুখ খুললেই বেরিয়ে আসবে তীক্ষ্ণ ক্যানাইন দাঁতের সারি। মুখ থেকে শুরু করে সারা শরীরজুড়ে ডোরাকাটা দাগ। কিন্তু না, বাঘ নয়, তিনি একজন মানুষ। পেশায় কম্পিউটার মেকানিক ডেনিস আভনার। কিন্তু মনের নেশায় তিনি একজন বাঘ। আর তাই একটু একটু করে বদলে ফেলেছেন নিজের চেহারাকে। অবশ্য আমেরিকার মানুষ তাঁকে ‘স্টকিং ক্যাট’ বা শুধুমাত্র ‘ক্যাট’ নামেই বেশি চেনেন।

১৯৫৮ সালে মিশিগান শহরের কাছে জন্ম ডেনিস আভনারের। তবে আমেরিকার শহুরে জীবন ছাড়িয়ে হুরোন এবং লাকোটা উপজাতির মানুষদের সঙ্গেই কেটেছে তাঁর শৈশবের অধিকাংশ সময়। এই দুই উপজাতির মানুষের কাছেই বাঘ অন্যতম উপাস্য প্রাণী। আর সেই সংস্কৃতির প্রভাবই পড়ে ডেনিসের মানসিকতায়। তিনি নিজেকেই বাঘ মনে করতে শুরু করেন। তাই নিজের শরীরের উপর জন্মায় একধরনের বিতৃষ্ণা। ১৯৮১ সালে ২৩ বছর বয়সে ডেনিস ঠিক করলেন তিনি তাঁর শরীরকে বদলে ফেলবেন। আর তাই শরীরে ট্যাটু করে আঁকলেন ডোরাকাটা দাগ।

কিন্তু এটুকুতে তৃপ্তি পেলেন না ডেনিস। বাঘ মানে তো শুধু গায়ে ডোরাকাটা দাগ নয়। বাঘের থাবা থাকে, থাবার মধ্যে থাকে তীক্ষ্ণ নখ। বাঘের মুখ, চোখ, নাক সবই অন্যরকম। প্লাস্টিক সার্জারির সাহায্যে যে সমস্তকিছুই করা সম্ভব তা জানতেন ডেনিস। কিন্তু আমেরিকার কোনো সার্জেনই এমন অপারেশন করতে রাজি হলেন না। একটা নির্দিষ্ট সীমার পর দৈহিক গঠনের পরিবর্তন আমেরিকার আইনের বিরোধী। ফলে চিকিৎসকের লাইসেন্স পর্যন্ত বাজেয়াপ্ত হতে পারে। শেষ পর্যন্ত স্টিভ হাওয়ার্ড নামের এক ব্যক্তি এগিয়ে এলেন। না, তিনি কোনো লাইসেন্সপ্রাপ্ত সার্জেন নন। তবে সার্জিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট তৈরির একটি কারখানা আছে তাঁর। এছাড়াও প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে একটু আধটু পড়াশোনা আছে হাওয়ার্ডের। তিনিই গোপনে শুরু করলেন অস্ত্রপ্রচার।

প্রথমে নিজের কানদুটো বদলে ফেলেছিলেন ডেনিস। সেই প্রথম অপারেশনই ছিল তীব্র যন্ত্রণার। কারণ লাইসেন্সপ্রাপ্ত সার্জেন ছাড়া কেউ অ্যানাস্থেসিয়া করতে পারেন না। ফলে গোটা অপারেশনটাই হয়েছে ডেনিসের জ্ঞান থাকা অবস্থায়। প্রথম অপারেশনের ধাক্কা সামলাতে কয়েক বছর লেগে গিয়েছিল। কিন্তু আবারও হাওয়ার্ডের কাছে গেলেন তিনি। এরপর বারবার যেতে শুরু করলেন। একটু একটু করে নাক, ঠোঁট, দাঁত, হাতের গঠন সবই বদলে ফেললেন। অপারেশনের যন্ত্রণাও আর তাঁকে কষ্ট দেয় না। তবে বাঘের মতো গোঁফ তৈরি তো সম্ভব নয়। তার জন্য প্লাস্টিকের গোঁফের বন্দোবস্ত করা হল।

আরও পড়ুন
ছুঁড়ে ফেলা হল বাঘের খাঁচায়, মুক্তিযোদ্ধা সালাহউদ্দিনকে নৃশংস হত্যা পাক-বাহিনীর

একসময় ডেনিস বুঝতে পারলেন আশেপাশের মানুষরা তাঁকে ভয় পেতে শুরু করেছে। তখন দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার একটি জনবিরল অঞ্চলে ঘর ভাড়া নিলেন। সেখানে বসেই টুকটাক কম্পিউটার সারানোর কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে শুরু করলেন। তবে কিছুদিনের মধ্যেই ডেনিস রীতিমতো সেলিব্রেটি হয়ে উঠলেন। ২০০২ সালে ল্যারি কিং লাইভ টিভি সিরিজে প্রথন দেখানো হয় তাঁর কাহিনি। এরপর তাঁকে নিয়ে দুটি পূর্ণদৈর্ঘ্যের তথ্যচিত্র ছাড়াও তৈরি হয়েছে অসংখ্য টিভি এবং ওয়েবসিরিজ। গিনেস বুকে দেহের সর্বাধিক পরিবর্তনের জন্য নামও ওঠে ডেনিসের। ২০১২ সালে ৭৪ বছর বয়সে মৃত্যু হয় ডেনিসের। অনেকের ধারণা, তিনি আত্মহত্যা  করেছিলেন। এরপর তাঁর গিনেস বুকের রেকর্ডও ভেঙেছে। কিন্তু স্টকিং ক্যাটের কিংবদন্তি থেকে গিয়েছে আমেরিকায়।

আরও পড়ুন
বাঘকে ঘাস খাওয়ানো কিংবা মালা পরানোর ইচ্ছে – অদ্ভুত যে সব পাগলামি কেড়েছে প্রাণ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
কুস্তি লড়তেন বাঘের সঙ্গে, কবর ফুঁড়ে উঠে এসেছিলেন বাংলার সুশীলা সুন্দরী