একটি ভাষার সম্পদ তার শব্দভাণ্ডার। ঠিক কতগুলি শব্দ জানা আছে আপনার? একসময় ব্রিটিশ উপনিবেশে ইংরেজি শব্দভাণ্ডার ছিল কেরানির চাকরি পাওয়ার যোগ্যতার মাপকাঠি। তবে এখনও বাংলাদেশে রয়েছেন এমন একজন মানুষ, যাঁর শব্দভাণ্ডারে রয়েছে ২৫ লক্ষ ইংরেজি শব্দ। হ্যাঁ, ২৫ লক্ষ। আর এই শব্দভাণ্ডারের উৎস ১৮টি ডিকশনারি এবং গ্রামার বই। সবই মুখস্থ রেজাউল ইসলামের। তবে এই বিরল স্মৃতিশক্তির অধিকারি রেজাউলের এখন দিন কাটে হয় অনাহারে নয়তো অর্ধাহারে। বিশেষ করে অতিমারী করোনা পরিস্থিতিতে একেবারে সহায়সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন তিনি।
ছোটো থেকেই জীবনের সঙ্গে লড়াই করে দিন কেটেছে রেজাউলের। পাবনা জেলার ভারেঙ্গা জেলায় ছিল তাঁর আদি বাসস্থান। দরিদ্র পরিবারের ছেলে রেজাউল। অর্থনৈতিক কষ্ট তো ছিলই। আর ছিল বাবার উৎপীড়ন। ১৯৭৯ সালে পঞ্চম শ্রেণীর পরীক্ষা দেওয়ার পর আর বাবার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বাড়ি ছাড়লেন রেজাউল। শুরু হল তাঁর যাযাবর জীবন। কখনও কখনও কারোর আন্তরিক সাহায্য পেয়েছেন। আবার অধিকাংশ সময়েই নিজের ভাগ্য তৈরি করে নিতে হয়েছে নিজেকেই। ঢাকা শহরের একটি ভিসিআর-এর দোকানে শিশুশ্রমিক হিসাবে প্রথম যোগ দেন। বদলে হলের মধ্যেই রাত্রিযাপনের সুযোগ পেতেন। আর্থিক প্রয়োজনে গৃহপরিচারকের কাজও করেছেন রেজাউল।
এর মধ্যেই ১৯৮৫ সালে ধোবাখোলা করোনেশন (নাটিয়াবাড়ি) উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে ১৯৮৭ সালে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাস করেন রেজাউল। এরপর আর প্রথাগত শিক্ষালাভ হয়নি। শিক্ষার জন্য কলকাতাতেও এসেছিলেন রেজাউল। তবে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশের ছাত্রকে এভাবে ভর্তি নেওয়া যাবে না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও সিলেবাসে বাঁধা পড়াশোনা ভালো লাগেনি তাঁর। তবে এর মধ্যেই চালিয়ে গিয়েছেন একটি কাজ। ইংরেজি ডিকশনারি এবং গ্রামার বই মুখস্থ করা। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ার সময় তাঁদের গ্রামে এসেছিলেন এক ইংরেজ। সেই থেকেই ইংরেজি শেখার ইচ্ছা জাগে। স্থানীয় এক শিক্ষক তাঁকে কয়েকটা ডিকশনারি উপহার দিয়েছিলেন। এরপর অর্নামেন্টাল, ফেদম, ওয়েবস্টারস, কেপিলার্স, আলেকজান্ডার, এলনস, জেসি নেসফিল্ডস, ওকেন্স, কেমব্রিজ ও অক্সফোর্ড সহ মোট ১৮টি গ্রামার বই ও ডিকশনারি মুখস্থ করে ফেলেন তিনি। একবার কোনোকিছু পড়লে ভুলে যান না তিনি।
তবে স্মৃতিতে যত তথ্য জমা করেছেন, ততই বেড়েছে তাঁর অসুখ। অসুখ বলতে মাথার যন্ত্রণা। নানা চিকিৎসাতেও কোনো ফল হয়নি। এই অসুখের কারণে বহুজাতিক সংস্থার মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে দিতে হয়েছে। গ্রামে স্কুলপড়ুয়াদের টিউশনি পড়ানোর কাজ শুরু করেছেন। অর্থনৈতিক অবনতির কারণে সংসার টেকেনি। আবার করোনা পরিস্থিতিতে টিউশনিও বন্ধ হয়ে যায়। রোজগারের একমাত্র রাস্তাও হারিয়ে ফেললেন রেজাউল। সামান্য যা সঞ্চয় ছিল, তাও শেষ। সেইসঙ্গে বাড়ছে মাথার যন্ত্রণা। এরপর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আর কোনোদিন পড়ূয়াদের পড়াতে পারবেন না বলে আশঙ্কা করছেন রেজাউল। এভাবেই হয়তো অনাহার আর অর্ধাহারের সঙ্গে লড়াই করতে করতে হারিয়ে যাবেন এই বিরল স্মৃতিশক্তির অধিকারী রেজাউল।
আরও পড়ুন
একমাত্র বাঙালি শিশু বিজ্ঞানী হিসেবে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানমেলায় বীরভূমের অনিরুদ্ধ
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
তিনটি বইয়ের প্রতিটি শব্দেরই আদ্যক্ষর ‘ক’, অভিনব সাহিত্য রচনা বাঙালি লেখকের