যতদূর দেখা যায় জল আর জল। তার মাঝে মাথা উঁচিয়ে রয়েছে এক ফালি দ্বীপ। সেখানেই ছোট্ট একটা বাড়ি। কিন্তু গোটা দ্বীপজুড়ে রাস্তাঘাট নেই কোনো। নেই দ্বিতীয় কোনো জনবসতি। কে থাকে জঙ্গলে মোড়া প্রত্যন্ত এই দ্বীপে?
বর্ণনা শুনে মনে মনে অনেকেই হয়তো ভেবে ফেলেছেন রবিনসন ক্রুসোর ছবি। না, গল্প বা উপন্যাসের কথা হচ্ছে না। এ যেন বাস্তবের রবিনসন ক্রুসো। বিগত আড়াই দশক ধরে এভাবেই নিসঙ্গবাস করে চলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা ডেভিড গ্লাসহেন (David Glashen)। কেপ ইয়র্ক উপমহাদেশের উত্তর কুইন্সল্যান্ডের উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত ‘রেস্টোরেশন’ দ্বীপে তিনি ঠাঁই নিয়েছিলেন ১৯৯৭ সালে। তারপর প্রায় ২৫ বছর ধরে কাটাচ্ছেন হারমিটদের জীবন।
না, এই নিঃসঙ্গবাসের সঙ্গে জাহাজডুবি বা অন্য কোনো দুর্ঘটনার সম্পর্ক নেই কোনো। সেটা আশির দশক। ডেভিড সে-সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিলিয়নেয়ার ছিলেন। ছিলেন সে-দেশের খ্যাতনামা স্টক ব্রোকার। তবে ১৯৮৭ সালে বিপর্যয় ঘনিয়ে আসে তাঁর রাজত্বে। ‘ব্ল্যাক টিউসডে’ ক্র্যাশ-এ নিজের সম্পত্তির অধিকাংশটাই খুইয়েছিলেন ডেভিড। এর বছর চারেক পরই বিবাহবিচ্ছেদ। ধীরে ধীরে জীবনের প্রতি মায়া চলে গিয়েছিল ডেভিডের। আর সেখান থেকেই নিঃসঙ্গবাসের পরিকল্পনা।
স্টক মার্কেটে ব্যবসা করাকালীন সময়েই এই দ্বীপটি কিনেছিলেন ডেভিড। স্থাবর সম্পত্তির মধ্যে সেটিই ছিল তাঁর একমাত্র সম্বল। ১৯৯৭ সালে এই দ্বীপে স্থানান্তরিত হন ডেভিড। সঙ্গে নিয়েছিলেন তাঁর বইপত্র, তিনটে জামা, দুটি প্যান্ট, ধারালো ছুরি, টর্চ এবং টুথব্রাশ ও টুথপেস্ট। হ্যাঁ, এটুকুই। বাকি সবকিছুই ছেড়ে এসেছিলেন আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে। এই দ্বীপে এসেই যেন শুরু হয়েছিল তাঁর বেঁচে থাকার লড়াই। নিজে হাতে বাসস্থানও নির্মাণ করেছেন ডেভিড। বর্তমানে সে বাড়ির চেহারা বদলেছে অনেকটাই। এসেছে সোলার প্যানেলের বিদ্যুৎ। টেলিফোন। তবে একটা দীর্ঘসময় কেবলমাত্র মোম আর কাঠের আগুনই ছিল তাঁর রাত্রির দিশা।
আরও পড়ুন
খরার বিরুদ্ধে লড়াই ‘ওয়াটার চ্যাম্পিয়ন’ নীতার
অবশ্য তাঁকে নিঃসঙ্গ বললে ভুল হবে খানিকটা। মানুষের সঙ্গ না পেলেও, তাঁর নিত্যদিনের সঙ্গী তাঁর প্রিয় দুই সারমেয়। তাদের নিয়েই মৎস্য শিকারে বেরোন ডেভিড। কখনও জঙ্গলে যান ফল-মূল জোগাড় করতে। বুনো আমন্ড, স্ট্রবেরি, নারকেল— এসব খেয়েই দিন চলে তাঁর। মাঝেসাঝে দরকার পড়লে মোটরচালিত নৌকা নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রের মূল শহরগুলিতে। নিয়ে আসেন ব্যাটারি, ড্রাইফুড-এর মতো অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
আরও পড়ুন
ইছাপুর খাল, চৈতন্য-মিথ ও ঘোলা জলের নিঃসঙ্গতা
তবে জীবনসায়হ্নে এসে বর্তমানে বেশ ভালোরকমই প্রতিবেশীর অভাব বোধ করছেন ডেভিড। কিছুদিন আগেই আকস্মিক অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ডেভিড। মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন তিনি। ভেঙেছিল কোমরের হাড়। কিন্তু ফোনের টাওয়ার না থাকায় কারোর সঙ্গেই যোগাযোগ করে ওঠা হয়নি তাঁর। ৮০ বছর বয়সেও নিজের প্রাথমিক চিকিৎসা করতে হয়েছিল নিজেকেই। আর সেই কারণেই প্রতিবেশীর খোঁজ চালাচ্ছেন ডেভিড। চাইছেন মধ্যবয়স্ক কোনো দম্পতি যেন জায়গা করে নেন তাঁর এই দ্বীপে। মোটা অঙ্কের বেতন দেওয়ার সামর্থ্য না থাকলেও সাধ্যমতো স্টাইপেন্ড দেবেন তিনি। সম্প্রতি, একাধিক মার্কিন সংবাদমাধ্যমে এই কথা জানিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এককালীন মিলিয়নেয়ার…
আরও পড়ুন
৪৭ সন্তানের পিতা হয়েও নিঃসঙ্গ! আক্ষেপ যুবকের
Powered by Froala Editor