ফুটবলের ‘কবীর খান’: আদিবাসী মেয়েদের খেলা শিখিয়েই হারানো স্বপ্নের খোঁজ কোচের

ঝাড়খণ্ডের (Jharkhand) অরণ্য অঞ্চলের মাঝে ছোটো একটি গ্রাম কারমা (Karma Village)। গ্রামের অধিকাংশ পরিবারই আদিবাসী সম্প্রদায়ের। সেখানে মেয়েরা প্রায় বাড়ির বাইরেই পা দেন না। স্কুল-কলেজ বা কর্মক্ষেত্রে যাওয়া তো দূরের কথা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দৃশ্যটা বদলাচ্ছে একটু একটু করে। বদলাচ্ছে একটি খেলার হাত ধরে। আর সেই খেলার নাম ফুটবল। আজ কারমা গ্রামের কিশোরী ও যুবতীরা রাজ্য ও জাতীয় দলেও জায়গা পাচ্ছেন। বিদেশ থেকেও ট্রফি জিতে আসছেন তাঁরা। আর এই বিরাট পরিবর্তনের পিছনে রয়েছে একজন মানুষের নিরলস পরিশ্রম। তিনি গ্রামের ফুটবল প্রশিক্ষক আনন্দ প্রসাদ গোপ (Ananda Kumar Gope)।

কীভাবে শুরু হল এই বিরাট যাত্রাপথ? আনন্দ প্রসাদের মতে, তাঁর নিজের ব্যর্থতাই জেদ বাড়িয়ে দিয়েছিল। ছোটো থেকেই ফুটবলের সঙ্গে সখ্য আনন্দ প্রসাদের। স্কুল পালিয়ে খেলার মাঠে বল নিয়েই পড়ে থাকতেন সবসময়। একাধিকবার জেলা দলেও খেলেছেন আনন্দ। তবে জাতীয় স্তরে খেলার জন্য যে প্রশিক্ষণের প্রয়োজন, তা আনন্দর ছিল না। তাঁর পরিবার নেহাতই গরিব। ফলে ফুটবল খেলার স্বপ্ন নিয়ে বেশিদূর এগোতে পারেননি তিনি। এর মধ্যেই বছর কুড়ি বয়স হতেই আনন্দ বুঝতে পারেন তাঁকে রোজগারের রাস্তা খুঁজতে হবে। নাহলে সংসার চলবে না। রোজগারের জন্য প্রিয় খেলা ফুটবলকেই বেছে নিলেন তিনি। ব্যক্তিগতভাবে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করলেন। কিন্তু ফুটবল যে তাঁর ভালোবাসা। নিছক রোজগারের মাধ্যম নয়।


গ্রামের ছেলে আনন্দ দেখেছিলেন সেখানে মেয়েদের জীবন কীভাবে কাটে। প্রায় সকলেরই অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়। একটু বেশি কন্যাপণ পাওয়া গেলে তো আর কথাই নেই। এই নিয়মটাই বদলাতে চেয়েছিলেন আনন্দ। মেয়েদের মধ্যে আত্মসম্মান বাড়িয়ে জন্যই বেছে নিলেন ফুটবলকে। ঠিক করলেন, মেয়েদের নিয়েই তৈরি করবেন তাঁর দল। কিন্তু পরিকল্পনা যতটা সহজ, বাস্তবে ততটা সহজ হল না। অভিভাবকরা প্রায় কেউই রাজি নন। মেয়েদের অনেকেই ছেলেদের ফুটবল খেলতে দেখেছে। তাদের অনেকের মধ্যে ফুটবল খেলার ইচ্ছা রয়েছে। কিন্তু সমাজের নিয়ম টপকে সেই ইচ্ছা প্রকাশ করার সাহস নেই প্রায় কারোরই। শেষ পর্যন্ত ১৫ জন কিশোরীর অভিভাবকরা রাজি হলেন। ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে তাঁদের নিয়েই শুরু হল প্রশিক্ষণ।

আরও পড়ুন
ইউরোপিয় ফুটবলের জন্য লাফিয়ে বাড়ছে কার্বন ফুটপ্রিন্ট, প্রকাশিত চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট

তবে যে মেয়েরা আনন্দর কাছে ফুটবল খেলতে এসেছে, তাদেরও নানারকম বিদ্রূপ সহ্য করতে হয়েছে। শর্ট পরে খেলার জন্য কটূক্তি করেছেন অনেকে। কিন্তু তারপরেও লড়াই ছাড়েনি তারা। আনন্দও অভিভাবকের মতো আগলে রেখেছিলেন তাদের। দেখতে দেখতে এখন তাঁর প্রশিক্ষণে ছাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে। এই ৮ বছরে অন্তত ২৫০ জন কিশোরীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন আনন্দ। তাঁদের মধ্যে ৮ জন জাতীয় স্তরে খেলেছে। জাতীয় দলে ভারতের প্রতিনিধি হয়ে ইংল্যান্ডে গিয়েছে ৬ জন। এছাড়াও কাজাকিস্তান, উজবেকিস্তান থেকে ট্রফি জিতে এসেছে আনন্দর ছাত্রীরা। ইতিমধ্যে আসন্ন ফিফা বিশ্বকাপের প্রশিক্ষণ শিবিরে সুযোগ পেয়েছে ২ জন। আনন্দ নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারেননি। আজ তাঁর ছাত্রীদের মধ্যে দিয়েই সেই স্বপ্নকে সার্থক হতে দেখছেন।

আরও পড়ুন
অবশেষে পর্তুগালে ঠাঁই পেলেন আফগান মহিলা ফুটবলাররা

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
চলতি বছরে সর্বোচ্চ আয় কোন ফুটবলারদের? দেখে নিন তালিকা

More From Author See More