আঙুলের ইশারায় হাওয়ার মধ্যেই জ্বলে উঠছে অগ্নিবৃত্ত। আর খুলে যাচ্ছে অন্য এক জগৎ বা পৃথিবীরই অন্যপ্রান্তে পৌঁছে যাওয়ার দরজা। কল্পবিজ্ঞানের ভাষায় যার নাম ইন্টার-ডিমেনশনাল পোর্টাল। যাঁরা কমিক চরিত্র ‘ডক্টর স্ট্রেঞ্জ’-এর ব্যাপারে ওয়াকিবহাল, এই দৃশ্য তাঁদের সকলের কাছেই অতিপরিচিত। সিলভার স্ক্রিনে এমন আশ্চর্য থুড়ি ‘ম্যাজিক্যাল’ কাণ্ডকারখানা দেখতে রোম খাড়া হয়ে যায় যে-কারোরই। কিন্তু এমনই যদি ঘটে বাস্তবে?
হ্যাঁ, এমনই আশ্চর্য ঘটনা সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করতে গেলে পৌঁছে যেতে হবে ইউরোপে। পোল্যান্ড এবং তার প্রতিবেশী রাষ্ট্র লিথুয়ানিয়ার মধ্যে রয়েছে এমনই আশ্চর্য এক ‘পোর্টাল’ (Portal)। লিথুয়ানিয়ার (Lithuania) অন্যতম প্রাচীন শহর ভিলনিয়াস এবং পোল্যান্ডের (Poland) লুবলিনের মধ্যে সংযোগস্থাপন করে এই আশ্চর্য পোর্টালটি। আর এই দুই শহরের মধ্যে দূরত্ব ৩৭৫ কিলোমিটার। কিন্তু কী প্রযুক্তির ওপর নির্ভর করে তৈরি হয়েছে এই পোর্টাল? তবে কি কোয়ান্টাম টেলিপোর্টেশনকে সত্যিই বশীভূত করতে পেরেছে মানুষ?
না, তেমনটা একেবারেই নয়। এই পোর্টালের ভেতর প্রবেশ করে এক শহর থেকে অন্য শহরে পৌঁছে যাওয়ার ব্যাপার নেই কোনো। আদতে এই পোর্টাল বৃত্তাকার প্রকাণ্ড এক এলইডি স্ক্রিন। পাশাপাশি তার সঙ্গেই রয়েছে উন্নত মানের ক্যামেরা। এই ক্যামেরার মাধ্যমেই এক শহরের ছবি ২৪ ঘণ্টাই লাইভ টেলিকাস্ট করা হয় অন্য শহরটিতে। আর এই আশ্চর্য পোর্টাল দুই দেশের মানুষের কাছে পরিচিত ‘প্লাক লাইটোস্কি’ নামে।
তবে এই দুই দেশের ইতিহাসও বেশ প্রাচীন। আজ থেকে প্রায় পাঁচশো বছর আগের কথা। ১৫৬৯ সালে লিথুয়ানিয়া এবং পোল্যান্ডের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল লুবলিনের শক্তি। দুটি রাষ্ট্র মিলিয়ে তৈরি হয় লুবলিন কমনওয়েলথ। তৎকালীন সময়ে ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ দেশ ছিল লুবলিন বা পোল্যান্ড কমনওয়েলথ। আঠারো শতকের শেষে ফের বিভাজিত হয় এই দুই দেশ। পরিণত হয় দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রে। তবে পরবর্তী বিশ্বযুদ্ধের সময় লিথুয়ানিকে অধিগ্রহণ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত সোভিয়েতেরই অঙ্গরাজ্য ছিল লিথুয়ানিয়া।
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে লিথুয়ানিয়া। ২০০১ সালে যোগ দেয় ন্যাটোতে। তারপর থেকেই পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে একাধিক মৈত্রী চুক্তি। সেই বন্ধুত্বের প্রতীক হিসাবেই তৈরি হয়েছিল এই বিশেষ পোর্টালটি। নেপথ্যে ছিলেন পোলিশ স্থপতি বেনেডিক্টাস গাইলিস। ২০১৬ সালেই শুরু হয়েছিল এই আশ্চর্য পোর্টালের নির্মাণ কাজ। ১৩০ মিলিয়ন ডলার খরচে, দীর্ঘ পাঁচ বছরের প্রচেষ্টায় তা বাস্তবায়িত হয় ২০২১ সালে। সেবছরই ২৬ মে খুলে দেওয়া হয়েছিল এই পোর্টাল। তারপর থেকেই ক্রমশ বেড়ে চলেছে এই পোর্টালের জনপ্রিয়তা। এমনকি মহামারীর সময় বহু মানুষই এই পোর্টালের সামনে হাজির হতেন প্রতিবেশী মানুষের কাছে সান্ত্বনা বার্তা পৌঁছে দিতে। সবমিলিয়ে বলতে গেলে আজকের দিনে দাঁড়িয়ে যেন ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠেছে এই ম্যাজিক পোর্টাল…
Powered by Froala Editor