মধ্যপ্রদেশের এই গ্রামে আজও কথ্যভাষা সংস্কৃত

সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির পাঠক্রম এবং দেব-দেবীর আরাধনা— এইটুকু ছোট্ট গণ্ডির মধ্যেই আজ আটকে রয়েছে সংস্কৃতের (Sanskrit) পরিধি। যদিও সংস্কৃত ভারতের সরকারি ভাষাগুলির মধ্যে একটি। তবে বহু যুগ আগেই কথ্য ভাষা হিসাবে মুছে গেছে তার পরিচয়। সত্যিই কি তাই? মধ্যপ্রদেশের জিরি (Jhiri) গ্রামে গেলে কিন্তু এমনটা মনে হবে না একেবারেই। সেখানের মানুষ আজও নিজেদের মধ্যে কথা বলেন সংস্কৃতে। হ্যাঁ, এই গ্রামে আজও দিব্যি কথ্য ভাষা হিসাবে বেঁচে রয়েছে সংস্কৃত। 

মধ্যপ্রদেশের কথ্য ভাষা মূলত হিন্দি। সেইসঙ্গে বাঘেলি, আওয়াধি-সহ আরও কিছু আঞ্চলিক ভাষার চল রয়েছে গোটা মধ্যপ্রদেশজুড়ে (Madhya Pradesh)। তবে রাজগড় জেলার সদর দপ্তর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ঝিরি গ্রামে এমন বিরূপ ছবি কেন? তার সঙ্গে জুড়ে আছে অন্য এক গল্প। একজন ব্যক্তির একক প্রচেষ্টাও। 

আজ থেকে বছর কুড়ি আগের কথা। ২০০২ সাল সেটা। মধ্যপ্রদেশের সমাজকর্মী বিমলা তিওয়ারির হাত ধরেই শুরু হয়েছিল ঝিরির সংস্কৃত-যাপন। বিমলা একজন স্কুল শিক্ষিকাও বটে। স্কুলে সংস্কৃত পড়াতেন তিনি। তিনি লক্ষ করেন, অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি পেরনোর পরেই এই ঐতিহ্যবাহী ভাষাটির সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় অধিকাংশ কিশোর-কিশোরীর। পরবর্তী উচ্চস্তরের শিক্ষাগ্রহণের কথা তো দূরের ব্যাপার, সংস্কৃত শব্দের অর্থও শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণভাবে ভুলে যায় একটু উঁচু ক্লাসে উঠলেই। অন্যদিকে বেসরকারি স্কুলগুলি তাদের পাঠক্রম থেকেই সরিয়ে ফেলে সংস্কৃতকে। কিন্তু একটা ভাষাকে এভাবে শিখিয়ে আদৌ কি লাভ আছে কোনো? এভাবে কি বাঁচিয়ে রাখা যেতে পারে ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে? 

উত্তর, না। বিমলা দেবী ভালোই বুঝেছিলেন, মানুষের জীবনযাপনের মধ্যে এই ভাষার বীজ বপন করতে না পারলে, এইরকমই পরিণতি হবে সংস্কৃতের। প্রাচীন ভাষাটিকে বাঁচিয়ে রাখতে তাই তিনি নিজের কাঁধেই তুলে নেন দায়িত্ব। সংস্কৃতের পাঠ দেওয়া শুরু করেন গ্রামের সাধারণ মানুষকে। বয়স নির্বিশেষে। 

আরও পড়ুন
শুধু সংস্কৃত নয়, তামিলও ‘দেবভাষা’; নিদান মাদ্রাজ হাইকোর্টের

কৃষক থেকে শুরু করে চর্মকার— অর্থনৈতিক বিভেদের ঊর্ধ্বে দিয়ে আজ সংস্কৃতে কথা বলেন এই গ্রামের প্রায় হাজারের বেশি মানুষ। সংস্কৃত লেখাতেও সাবলীল তাঁরা। ‘গুড মর্নিং’ না, বরং ঝিরিতে দিনের শুরু হয় ‘নমঃ নমঃ’ দিয়ে। এ গ্রামের বাড়ির দেওয়ালগুলিও ছেয়ে গেছে সংস্কৃতের শ্লোকে। আরও আশ্চর্যের বিষয় হল, শুধু সংস্কৃতে কথনই নয়, বৈদিক জীবনযাপনেও অভ্যস্ত ঝিরির বাসিন্দারা। 

আরও পড়ুন
পোড়ানো হল কামসূত্র; আদৌ ‘ভারতীয় সংস্কৃতি’র পরিপন্থী বাৎস্যায়নের মহাগ্রন্থ?

তবে শুধু ঝিরিতেই নয়, গ্রামের মহিলাদের মাধ্যমে এই ভাষা এখন ছড়িয়ে পড়ছে মধ্যপ্রদেশের অন্যান্য অঞ্চলেও। বিবাহের পর নতুন অঞ্চলে গেলে সেখানেও মহিলারা তাঁর পরিবারের মানুষজনদের শেখাচ্ছেন এই ভাষা। পাশাপাশি বিবাহ ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে সংস্কৃত গানের ব্যবহারও ক্রমশ জনপ্রিয় করে তুলছে এই ভাষাকে। ঐতিহ্য ও ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার এই উদ্যোগ সত্যিই অভিনব…

আরও পড়ুন
সংস্কৃতি জগতে আবারও নক্ষত্রপতন, চলে গেলেন বাচিকশিল্পী গৌরী ঘোষ

Powered by Froala Editor