বিস্মৃতির অতলে সিরাজউদ্দৌলার প্রাসাদ; নদীগর্ভে বিলীন, না লুকিয়ে আছে চাষের জমিতেই?

ভাগীরথী নদীর তীরে বাংলার এক সময়ের রাজধানী মুর্শিদাবাদ। বলা হয়, এখানে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে ইতিহাস কুড়িয়ে পাওয়া যায়। তবে সেইসব ইতিহাস অনেক বিচ্ছিন্ন ঘটনার টুকরো টুকরো কিছু ছবি। কিন্তু তবু মুর্শিদাবাদ বললেই এখনও প্রথমেই মনে আসে সিরাজউদ্দৌলার কথা। বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ। কিন্তু রাজা-বাদশা-নবাব বললেই তো প্রথমেই মনে আসে বিরাট দরবারের কথা। অথচ মুর্শিদাবাদের অগণিত ইতিহাসের মধ্যে কোথায় সিরাজের সেই দরবার?

মুর্শিদাবাদে সিরাজের মাত্র দুটি স্মৃতি বেঁচে আছে। একটি ইমামবড়ার মদিনা, আর অন্যটা খোসবাগের সমাধি। যাঁরা মুর্শিদাবাদে গিয়েছেন, তাঁরাও জানেন এছাড়া আর কোনোকিছুর কোনো সন্ধান পাওয়া যায় না। তবু কি কোথাও নেই সিরাজের দরবার? আছে। ধ্বংসের পরেও তার স্মৃতিচিহ্ন বেঁচে আছে। তবে তাকে খুঁজে বের করাটা খুব সহজ নয়।

সিরাজের প্রাসাদ সম্পর্কে শোনা যায়, ভাগীরথীর গর্ভে এক সময় তলিয়ে যায় সেটি। সেটা অবশ্য সিরাজের মৃত্যুর বেশ কিছু বছর পরে। পলাশির যুদ্ধের পর এই প্রাসাদ থেকেই বেগম লুৎফাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন নবাব। আর তারপর প্রাসাদ এবং সংলগ্ন হীরা ঝিলের দখল নিয়েছিলেন বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর। কিন্তু আজ মীর জাফরের প্রাসাদ বেঁচে থাকলেও কোথাও নেই সিরাজের প্রাসাদ।

তবে ঐতিহাসিকদের কাছে বিশদ তথ্য না থাকলেও মুর্শিদাবাদের গ্রামবাসীরা মনে রেখেছেন সিরাজের হারিয়ে যাওয়া প্রাসাদের কথা। এখন অবশ্য সেখানে চাষের জমি। কিন্তু তার মধ্যেও একটু খুঁজে দেখলে দেখা যাবে পুরোনো ইঁটের কিছু কাঠামো পড়ে আছে। আর আছে একটা পাথরের গম্বুজাকৃতি কাঠামো। ঐতিহাসিক পূর্ণচন্দ্র মজুমদার জানিয়েছেন, ১৯০৪ সাল নাগাদ কেবলমাত্র মনসুরগঞ্জ প্রাসাদের নিকাশি ব্যবস্থা টিকে ছিল। আর এই পাথরের কাঠামো সম্ভবত সেই নিকাশি ব্যবস্থারই অবশেষ।

আরও পড়ুন
কলকাতার নাম বদলে হল ‘আলিনগর’, ইংরেজদের শহর থেকে তাড়িয়ে ছাড়লেন সিরাজ

তবে অনেক ঐতিহাসিক এতদিন এই ধ্বংসাবশেষকে মনসুরগঞ্জ সমাধি বলে মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। এমনকি এই প্রাসাদের নদীগর্ভে হারিয়ে যাওয়ার ইতিহাসও মানতে চান না অনেকেই। তবে সম্প্রতি কলকাতা হেরিটেজ ওয়াকের প্রতিষ্ঠাতা তথাগত নিয়োগী দাবি করেছেন, স্যাটেলাইট প্রেরিত ছবি থেকে তিনি নিশ্চিত যে মুর্শিদাবাদের ইতিহাস অনেকটাই হারিয়ে গিয়েছে নদীর গর্ভে। আর সেই রেখা মিলিয়ে দেখলে গ্রামবাসীদের দেওয়া অবস্থান অনেকটাই মিলে যায়। কিন্তু আজও পুরোটাই অন্ধকারে। পর্যটকদের অনেকেই মুর্শিদাবাদের পরিচিত স্থাপত্যগুলি দেখেই ফিরে আসবেন। সিরাজের প্রাসাদের অস্তিত্ব জানবেন না অনেকেই।

ঋণ – মুর্শিদাবাদ কাহিনী, নিখিলনাথ রায়
দীপাঞ্জন ঘোষ

আরও পড়ুন
গির্জা ধ্বংস করলেন সিরাজ, তৈরি হল কলকাতার প্রথম তিনতলা বাড়ি

Powered by Froala Editor

More From Author See More