পৃথিবীর দীর্ঘতম হাঁটা পথ, সংযুক্ত করে তিন মহাদেশকে

প্রযুক্তির দৌলতে আজ গোটা বিশ্ব হাতের মুঠোয়। পৃথিবীর দুর্গমতম অঞ্চল আন্টার্কটিকাতেও গড়ে উঠেছে এয়ারস্ট্রিপ। তাছাড়া জলপথ তো রয়েছেই। কিন্তু ভ্রমণপিপাসুদের কাছে পায়ে হেঁটে নতুন জায়গার অন্বেষণ করা, অজানা পথে ঘুরে বেড়ানো একপ্রকার স্বর্গসম। তবে চাইলে পায়ে হেঁটেই অস্ট্রেলিয়া বা আমেরিকায় পৌঁছে যাওয়া যায় না। মহাদেশের মাঝে সমুদ্রের অবস্থানই প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়ায় মানুষের কাছে। প্রশ্ন থেকে যায়, সর্বাধিক কতটা পথ পায়ে হেঁটে অতিক্রম করতে পারি আমরা?

‘ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং’-এর রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের দীর্ঘতম (World's Longest) হাঁটাপথের (Walking Route) দৈর্ঘ্য ২২ হাজার ৩৮৯ কিলোমিটার। ঠিক আন্দাজ করা গেল না, নিশ্চয়ই? ভারতের কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর দূরত্ব সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার। অর্থাৎ, এই পথ তার প্রায় সাত গুণ। আরও ভালো করে বলতে গেলে, প্রতিদিন গড়ে ৮ ঘণ্টা হাঁটলে এই পথ অতিক্রম করতে মানুষের সময় লাগবে ৫৮৭ দিন। তবে বাস্তবে তা অসম্ভব। যদি সত্যিই কোনো ব্যক্তি এই পথে পাড়ি দেন, তবে গন্তব্য পৌঁছাতে তাঁর সময় লাগবে প্রায় তিন বছর। কিন্তু কোথায় রয়েছে এই পথ? 

এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া একটু কঠিন। কারণ, এই রাস্তা শুধু ভিন্ন ভিন্ন দেশই নয়, সংযুক্ত করে রেখেছে তিনটি মহাদেশকে। হ্যাঁ, এশিয়া থেকে ইউরোপ ঘুরে এই রাস্তা পৌঁছেছে আফ্রিকায়। কোনোরকম যানবাহন, নৌকা কিংবা স্টিমার ছাড়াই এ-পথ ধরে উত্তর-পূর্ব রাশিয়ার ম্যাগাদান শহর থেকে পৌঁছে যাওয়া যায় সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে। অবশ্য এই দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে গিয়ে নদী পেরোতে হবে না, এমনটা ভাবা ভুল। তবে এই পথের মধ্যে অবস্থিত নদীগুলি অনায়াসেই পেরিয়ে যাওয়া যায় সেতুর সাহায্যে। 

একদিকে যেমন এই বিস্তৃত পথজুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য, তেমনই এই পথ ধরে পাড়ি দিতে গেলে প্রতিবন্ধকতারও সম্মুখীন হতে হবে প্রতি পদে। রাশিয়ার ম্যাগাদান শহরের কথাই ধরুন। আর্কটিক অঞ্চলে অবস্থিত এই শহর বরফে ঢাকা থাকা সারা বছর। ম্যাগাদান থেকে দক্ষিণে পাড়ি দিলে মঙ্গোলিয়ায়। সেখানে আবার শুষ্ক আবহাওয়া। এরপর কাজাখস্তান, তুরস্ক কিংবা মিশরে দেখা মিলবে মরুভূমির। তারপর আফ্রিকায় পা দিলেই ঘন ক্রান্তীয় অরণ্য কিংবা তৃণভূমি। সেখানে হিংস্র বন্যপ্রাণীদের উপস্থিতি তো রয়েছেই। তবে শুধু প্রকৃতিই নয়, এই পথ ধরে আফ্রিকায় যেতে গেলে মানুষের হিংসারও সাক্ষী হবে হবে যে-কোনো যাত্রীকে। সিরিয়া, কাজাখস্তান, দক্ষিণ সুদান, জাম্বিয়াতে আজও গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি। অন্যদিকে বেলারুশের মতো স্বৈরতান্ত্রিক দেশে নিয়মিত অত্যাচার চলছে মানুষের উপর। আর্মেনিয়া, আজারবাইজানের আবহাওয়াও উত্তপ্ত। যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব লেগেই রয়েছে সেখানে। 

তবে বলাই বাহুল্য, জীবিত অবস্থায় সমগ্র এই পথ অতিক্রম করতে পারলে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে এই অভিযান। শুধু ১৭টি ভিন্ন ভিন্ন দেশভ্রমণই নয়, যাত্রাপথে ৬টি ঋতুই উপভোগ করতে পারবেন আপনি, চেখে দেখতে পারবেন ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতিকে। কী ভাবছেন রুকস্যাক গুছিয়ে বেরিয়ে পড়বেন পৃথিবীর দীর্ঘতম এই হাঁটা পথে? 

Powered by Froala Editor