জঙ্গলের মধ্যেই বাস তাঁদের। ছোটো ছোটো কুঁড়েঘরে মানুষের সঙ্গেই বেড়ে ওঠে ভালুকশাবক। এক থালায় খাবার খায় দুই প্রজাতির প্রাণী। এরপর একসময় সেই মানুষরাই পরিণত ভালুকদের মেরে তাদের মাংস খায়। তবে তার আগে একটি দম্পত্তিকে জঙ্গলে পৌঁছে দেয়। সেই দম্পত্তি যাতে আগামী সময়ে সন্তান উৎপাদন করতে পারে। আদিম জীবনযাত্রার মধ্যেই জীববৈচিত্র্য রক্ষা করার এক অদ্ভুত প্রথা সত্যিই আশ্চর্যজনক।
জাপানের উত্তরে হোক্কাইডো অঞ্চলে বাস করেন এমনই এক আদিম উপজাতি। আজ তাদের অস্তিত্ব প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। তবুও কয়েকজন আইনু উপজাতির মানুষ টিকে আছেন অবহেলায়। একসময় জাপানের মূল ভূখণ্ড থেকে উত্তরে রাশিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তাঁদের বসতি। মূল ভূখণ্ডের সভ্য জাপানিদের সঙ্গে তাঁদের কিছুই মেলে না। না ভাষা, না সংস্কৃতি। আর এই অমিল থেকেই শুরু হল সংঘাত। শুরু হল আইনু উপজাতির মানুষদের উপর নির্যাতন। সে উৎপীড়ন কোথাও ভাষাগত, কোথাও রাজনৈতিক। এই বিষম লড়াইতে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হলেন আইনুরা। কেউ নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেন, আবার কেউ জঙ্গলের মধ্যে আত্মগোপন করলেন।
১৮৯৯ সালে জাপানে তৈরি হল একটি আদিবাসী সুরক্ষা আইন। কিন্তু তার উদ্দেশ্যের সঙ্গে নামের সাদৃশ্য পাওয়া সম্ভব নয়। আদিবাসীদের রক্ষা করার নামে প্রবল হয়ে উঠল সাংস্কৃতিক উৎপীড়ন। জোর করে নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত করা হল তাঁদের। ক্রমশ হারিয়ে যেতে থাকল সেইসব সংস্কৃতি। আইনু উপজাতিও হারিয়ে যেতে থাকল ক্রমশ। তবু শতাব্দীর শোষণ সহ্য করেও কিছুটা বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিলেন তাঁরা। আর সেইটুকু দিয়েই হোক্কাইডোর সাপ্পোরো শহরের বুকে তৈরি হয়েছে একটি ছোট্ট গ্রাম বা আইনু কোটান। ২০০৩ সালে তৈরি এই গ্রামে এখন পর্যটনের উদ্দেশ্যে আসেন দেশ-বিদেশের বহু মানুষ। আইনু উপজাতির সংরক্ষণের বিষয়েও সচেতনতা গড়ে উঠছে ধীরে ধীরে।
২০১৯ সালেই নতুন করে আদিবাসী সংরক্ষণ আইন তৈরি হয়েছে জাপানে। আইনু উপজাতিকে ভাষাগত এবং সাংস্কৃতিক অধিকার দেওয়ার বিষয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। তবুও যেন নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না গবেষকরা। আজও যে কয়েকজন আইনু মানুষ টিকে আছেন, তাঁরা বিশ্বাস করতে পারেন না সভ্য মানুষদের। সবসময় দূরত্ব বজায় রাখেন। সাপ্পোরো শহরের কোটানে পর্যটকদের ভিড় হলেও সেখানে আইনু মানুষরা থাকেন না। থাকতে ভয় পান। এই অবিশ্বাসের বাতাবরণে সহাবস্থান সম্ভব নয়। তাঁদের ভাষা ও সংস্কৃতি কি তবে ঐতিহাসিক সামগ্রী হয়ে জাদুঘরে শোভা পাবে? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় যদিও এখনই আসেনি।
আরও পড়ুন
পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতা আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ান উপজাতিদের, প্রমাণ নয়া পরীক্ষায়
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
মানুষের সমাধি ঘিরে বন্যপ্রাণীর মূর্তি, ক্ষমতা ‘নিয়ন্ত্রণে’র অদ্ভুত বিশ্বাস কলম্বিয়ার উপজাতিদের