ধর্ম কিংবা সংস্কৃতির দিক থেকে দেখতে গেলে, দীর্ঘ সময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যের সবথেকে বৈচিত্র্যময় দেশ ছিল আফগানিস্তান। ভৌগলিক অবস্থানের জন্য, বিশেষত সিল্ক রুটের ওপর অবস্থিত হওয়ায় হিন্দু, বৌদ্ধ, জোরাস্ট্রিয়ান, ইসলাম এবং খ্রিস্টান— বিভিন্ন ধর্ম ও সংস্কৃতির সংমিশ্রণ ঘটেছিল আফগানিস্তানে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৈচিত্র্যময় সেই ইতিহাসে ঘুণ ধরেছে ক্রমশ। মৌলবাদী শক্তির দৌরাত্ম্যে আফগানিস্তানের বুক থেকে ধীরে ধীরে অস্তিত্ব হারিয়েছে একাধিক ধর্ম, সংস্কৃতি। এবার স্থায়ীভাবে দেশ ছাড়লেন আফগানিস্তানের শেষ ইহুদি ব্যক্তি (Last Jew Of Afghanistan)।
জেবুলন সিমেন্টভ (Zebulon Simentov)। দেশ ছাড়ার পর এবার ইজরায়েলে আশ্রয় নিতে চলেছেন ‘কাবুলের শেষ ইহুদি’। তবে আজ নয়, মাস দেড়েক আগে তালিবান আফগানিস্তানের দখল নেওয়ার পরেই দেশ ছেড়েছিলেন জেবুলন। তারপর আশ্রয় পাওয়ার জন্য তাঁকে পালিয়ে বেড়াতে হয়েছিল একের পর এক দেশে। প্রাথমিকভাবে পরিচয় গোপন করে পাকিস্তানে বেশ কিছুদিন লুকিয়ে ছিলেন জেবুলন। তারপর সেখান থেকে অলাভজনক সংস্থা টেজেডেক অ্যাসোসিয়েশনের সাহায্যে তাজাকিস্তান-ঘুরে পৌঁছেছিলেন তুরস্কে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী আশ্রয়ের জন্য আবেদন করলেও, আমেরিকার ভিসা পাওয়াই দুরূহ হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে। শেষ পর্যন্ত তাঁর ত্রাতা হয়ে এগিয়ে আসে বিশ্বের একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র ইজরায়েল। জেবুলনের ধর্মপরিচয়ের জন্য নাগরিকতা পেতেও কোনোরকম অসুবিধা হবে না বলেই জানিয়েছে ইজরায়েল প্রশাসন।
কয়েক দশক আগে উত্তর আফগানিস্তানের একটি গুহা থেকে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল প্রায় ১০০০ বছরের পুরনো হিব্রু ভাষায় লিখিত বেশ কিছু ইহুদি পুঁথি। সেখান থেকেই প্রত্নতাত্ত্বিকরা ধারণা করেছিলেন, উত্তর আফগানিস্তানের বুকে সুদূর অতীতে অস্তিত্ব ছিল আস্ত ইহুদি সম্প্রদায়ের। এমনকি উনিশ শতকের শেষের দিকেও প্রায় ৪০ হাজার ইহুদির বাসস্থান ছিল আফগানিস্তান। ১৯৪৮ সালে ইজরায়েল তৈরি হওয়ার পর ক্রমশ কমতে থাকে আফগান ইহুদিদের সংখ্যা।
১৯৫৯ সালে পশ্চিম আফগানিস্তানের হেরাট শহরে জন্ম সিমেন্টভের। তার দু’দশকের মধ্যেই আফগানিস্তান থেকে ইহুদিদের অস্তিত্ব প্রায় মুছে যায় বললেই চলে। ১৯৭৯ সাল সেটা। সোভিয়েত আক্রমণের সময়, দেশ ছাড়েন ইজরায়েলের শেষ ইহুদি পরিবার। বাবা-মা এবং পাঁচ ভাই ইজরায়েলে আশ্রয় নিলেও সে-সময় আফগানিস্তান ছাড়েননি বছর কুড়ির জেবুলন। আরেক আফগান ইহুদি আইস্যাক লেভির সঙ্গে তিনি বসবাস করতেন কাবুলের সিনাগগ ভবনে। কাবুলের বুকেই চালাতেন একটি কাবাবের দোকান।
আরও পড়ুন
ক্যাম্প-পালানো দুই ইহুদি তরুণীকে বাঁচিয়েছিলেন প্রপিতামহ, জানাল পুরনো চিঠি
২০০৫ সালে আইস্যাকের মৃত্যুর পর, আফগানিস্তানের একমাত্র ইহুদি নাগরিক ছিলেন সিমেন্টভ। পরিবার থেকে একাধিকবার ইজরায়েলের নাগরিকতা নেওয়ার আহ্বান করা হলেও দেশ ছাড়েননি তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় তালিবান শাসনকালে পরিস্থিতির কাছে যেন হার মানতে বাধ্য হলেন তিনি।
আরও পড়ুন
ভারতের ‘হারিয়ে যাওয়া’ ইহুদিদের গল্প
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
৪০ হাজার ইহুদির প্রাণ বাঁচিয়ে হলোকাস্ট-হিরো জাপানের সুগিহারা