রাতের অন্ধকার চিরে এগিয়ে আসছেন এক সেনানী। গগলসে ঢাকা চোখদুটো যেন জ্বলজ্বল করে উঠছে। মার্কিন সেনাবাহিনীর নাইট ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এই ছবি। আফগানিস্তানের বুক থেকে তখন পা উঠিয়ে নিচ্ছেন শেষ মার্কিন সেনা। মেজর জেনারেল ক্রিস ডোনাহু। সকাল হতে না হতেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গিয়েছে সেই ছবি। ৩১ আগস্টের মধ্যে আমেরিকার সমস্ত সেনা প্রত্যাহার করা হবে, জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। কথা রেখেছেন অক্ষরে অক্ষরে। মধ্যরাতের ঘণ্টা বাজার ঠিক এক মিনিট আগে সমস্ত সেনা বিমানে চড়ে বসেছেন।
চলতি মাসেই আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা অপসারণের বিষয়টি তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব নিয়ে গিয়েছিলেন ডোনাহু। অবশ্য এর আগেও একাধিকবার আফগানিস্তানে গিয়েছেন তিনি। ইউনাইটেড স্টেটস মিলিটারি অ্যাকাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯৯২ সালে সেকেন্ড লেফট্যানেন্ট হিসাবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেই থেকে ১৭ বার আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের নানা দেশে গিয়েছেন। করেছেন সামরিক শাসনাধীন স্কুল-কলেজ এবং অন্যান্য সংস্থা পরিচালনার কাজও। তবে বিগত বেশ কয়েক বছর মার্কিন বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নিয়ে পেন্টাগনেই ছিলেন ডোনাহু। আফগানিস্তানকে হাতের তালুর মতো চেনেন তিনি। এক সময় আফগানিস্তানের অপারেশন ফ্রিডম সেন্টিনেলের মতো অভিযানের মুখ্য দায়িত্ব ছিল তাঁর উপর।
শেষ মুহূর্তে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়ে গিয়েছে তালিবান শাসন। এই মুহূর্তে আফগানিস্তান থেকে সেনা অপসারণের কাজ বেশ কঠিন ছিল বলেই মনে করছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের অফিসাররা। আর সেই কারণেই বেছে নেওয়া হয়েছিল ডোনাহুর মতো দক্ষ অফিসারকে। সোমবার সকাল থেকে দফায় দফায় বিমানে করে আমেরিকা ফিরেছেন সৈনিকরা। সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের বেশ কয়েকজন কর্মচারীও ফিরে গিয়েছেন। প্রতিটা বিমানের সুরক্ষার দায়িত্ব ছিল ডোনাহুর উপর। এবং তিনি সেটা সফলভাবেই পালন করেছেন। একেবারে শেষ বিমানের যাত্রী ছিলেন তিনি নিজে। বিমানে ওঠার আগে তালিবান প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি। তাঁদের জানিয়ে দিয়ে এসেছেন শেষ সেনা প্রত্যাহারের বিষয়টি। বিমানে উঠে সংক্ষিপ্ত বেতার বার্তা পাঠিয়েছেন আমেরিকায়।
তবে ডোনাহুর প্রশংসার পাশাপাশি উঠে আসছে কিছু অভিযোগও। আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকার সেনাপ্রত্যাহার কি পরোক্ষভাবে তালিবান শক্তিকেই মদত দিচ্ছে না? যদিও প্রেসিডেন্ট বাইডেন জানিয়েছেন, প্রতিশ্রুতি রাখতে সেনা প্রত্যাহার করতেই হত।
Powered by Froala Editor