করোনাকালে কেমন আছে ‘ভারতের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন গ্রাম’?

করোনা আতঙ্কে সারা পৃথিবীর মানুষ গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন। ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে নিরাপদ উপায় তো তাই। তবে কেরালার ওয়ায়ানদ জেলার চোলনায়ক উপজাতির মানুষদের কাছে এটা কোনো নতুন বিষয় নয়। দশকের পর দশক তো তাঁরা এভাবেই কাটিয়ে দিচ্ছেন। পারাপ্পনপারা গ্রামকে ঘিরে বাস ৬০ জন মানুষের। গ্রামের বাইরে পা রাখেন না প্রায় কেউই। ভারতের সবচেয়ে বিচ্ছিন্ন গ্রাম নামে পরিচিত এই পারাপ্পনপারা। প্রশাসন নানাভাবে তাঁদের মূল স্রোতের সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সেই ব্যর্থতা শেষ পর্যন্ত সুখবর হয়েই ধরা দিল অতিমারী পরিস্থিতিতে। এখনও অবধি ৬০ জনের মধ্যে একজনের শরীরেও ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েনি।

চোলনায়ক উপজাতির মানুষদের জীবনযাত্রা সবটাই অতিবাহিত হয় প্রকৃতির মধ্যেই। জঙ্গলের মধ্যে থেকেই পেয়ে যান প্রায় সমস্ত ফলমূল, শাকসব্জি। বাকি যা প্রয়োজন হয়, প্রাচীন পদ্ধতিতে তার চাষও চলে। আর নদীর মাছ তো আছেই। বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু প্রয়োজন, সবই তাঁরা পেয়ে যান প্রকৃতি থেকেই। আর তাই প্রথাগত শিক্ষার প্রয়োজনও অনুভব করেননি কখনও। রোগের প্রকোপও সেভাবে দেখা যায় না। একমাত্র বছরে একবার করে জ্বরের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে। তবে তার ওষুধও পেয়ে যান জঙ্গলের গাছ-গাছড়া থেকেই।

ওয়ায়ানদ জেলা প্রশাসনের বক্তব্য অনুযায়ী, তাঁরা এর আগে বহুবার উপযুক্ত আধুনিক পরিকাঠামোর প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে চেষ্টা করেছেন চোলনায়ক উপজাতির মানুষদের। বিশেষ করে, হাতির উপদ্রবে যখন তাঁদের ঘর ভেঙে যায় তখন পাকা ঘরের প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়েছেন। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত করেননি পারাপ্পনপারা গ্রামের মানুষ। বরং হাতিদের দমন করতে গেলে গ্রামবাসীরাই বাধা দিয়েছে বনবিভাগকে। প্রশাসনের কাছে এতদিন এটা ছিল ব্যর্থতার সামিল। কিন্তু করোনা অতিমারীর মধ্যে চোলনায়কদের এই আচরণই ইতিবাচক চেহারায় ধরা দিয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, ওয়ায়ানদ জেলার অন্যান্য উপজাতির মধ্যেও করোনা সংক্রমণের হার নেহাৎ কম নয়। ইতিমধ্যে জেলার অন্তত ৪৩০০ মানুষ কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। আর উপজাতি সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই অনাক্রম্যতা অনেক কম। তবে চোলনায়কদের কেউ এখনও কোভিড আক্রান্ত হননি। কিছুদিন আগে বিশেষ মেডিক্যাল টিম প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে। কিন্তু তাতেও ফলাফল ইতিবাচক। অতিমারীর মধ্যে অন্তত এই ৬০ জন মানুষ তো নিরাপদ আছেন। গ্রামবাসীরা বিশ্বাস করেন, তাঁদের দেবতাই রক্ষা করছেন তাঁদের। এই বিশ্বাসের জোরেই হয়তো অতিমারী পেরিয়ে যেতে পারবেন তাঁরা।

আরও পড়ুন
এখনও অবধি করোনা সংক্রমণ শূন্য, অবাক করছে ওড়িশার গ্রাম

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
প্যারোডিকে অস্ত্র করেই করোনা-যুদ্ধে সামিল ঝাড়খণ্ডের শ্রমিক