প্রতি ছ'মাসে দেশ বদলায় এই দ্বীপ!

অধিকাংশ মানুষই জন্মগতভাবে নাগরিকতা পেয়ে থাকে। কিন্তু এক দেশের নাগরিক হয়েও, ভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব অর্জন করা খুব একটা সহজ নয়। যেমন, ভারতের নাগরিক হতে গেলে অন্ততপক্ষে ৭ বছর অবিচ্ছিন্নভাবে ভারতে বসবাস করতে হয় কোনো বিদেশিকে। কিন্তু প্রতি ছ’মাস ছাড়াই যদি ভিন্ন ভিন্ন দেশের নাগরিক হওয়া যায়? শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। পৃথিবীর বুকেই রয়েছে এমন এক জায়গা, যা দেশ বদল করে প্রতি ছ’মাস অন্তর।

কথা হচ্ছে ফিসেন্ট আইল্যান্ডকে নিয়ে। পদ্মা যেমন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সীমান্তের কাজ করে। ঠিক তেমনভাবেই ফ্রান্স ও স্পেনের মাঝে সীমান্তরেখা হয়ে উঠেছে বিডাসোয়া নদী। আর এই নদীর বুকেই অবস্থিত ফিসেন্ট (Pheasant Island) দ্বীপ। আয়তন মাত্র ৭ হাজার বর্গ মিটার। 

ফিসেন্ট দ্বীপ নিয়ে ফ্রান্স ও স্পেনের দ্বন্দ্ব শুরু হয় আজ থেকে প্রায় ৪০০ বছর আগে। ১৬০০ শতক থেকে। প্রতিবেশী দেশের গা-ঘেঁষা এমন একটি নদী দ্বীপের গুরুত্ব যে-কোনো দেশের কাছেই অপরিসীম। ফলে, এই দ্বীপে অধিকার কায়েম করতে তৎপর হয়ে উঠেছিল দুই পক্ষই। একাধিক আলোচনায় সমাধান না হলে ষোড়শ শতকের পঞ্চাশের দশকে সরাসরি যুদ্ধে নামে ফ্রান্স ও স্পেন। যুদ্ধ চলেছিল টানা ৩ মাস। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ছিল যথেষ্ট। 

১৬৫৯ সালে শেষ পর্যন্ত শুভবুদ্ধির উন্মেষ ঘটে দু’পক্ষেই। ফরাসি ও স্প্যানিশ রাজের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় ঐতিহাসিক পাইরেনিস চুক্তি। হ্যাঁ, ফিসেন্টের পুরনো নাম এটাই। যাই হোক, সেই চুক্তিতেই ঠিক করে দেওয়া হয় এই দ্বীপ ৬ মাস থাকবে স্পেনের, বাকি ৬ মাস থাকবে ফ্রান্সের অধীনে। বিগত সাড়ে তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরেই চলে আসছে সেই প্রথম। 

আরও পড়ুন
জনমানবহীন দ্বীপে ২৫ বছর নিঃসঙ্গবাস সাবেক মিলিয়নেয়ারের!

কিংবদন্তি ফরাসি লেখক ভিক্টর হুগোর লেখাতেও উল্লেখিত হয়েছে এই দ্বীপের কথা। হুগো নিজেও ১৮৪৩ সালে ঘুরতে গিয়েছিলেন এই দ্বীপে। তাঁর বর্ণনায়, ‘ফিসেন্ট দ্বীপে বাড়ি-ঘর থাকলেও ফিসিয়ানদের দেখা পাওয়া যায় না।’ কিন্তু কাদের এই বাড়িঘর, মনুমেন্ট তৈরি করল এই দ্বীপে?

আরও পড়ুন
উত্থান ও অন্তর্ধান দুই-ই রহস্যময়, যে দ্বীপ ঘিরে তরজায় মেতেছিল ভারত-বাংলাদেশ

আজ, ফিসেন্টের কোনো স্থায়ী বাসিন্দা না থাকলেও, একটা সময় মৎস্যজীবীদের বসবাস ছিল এই দ্বীপে। পরবর্তীতে ফিসেন্টে নানা মনুমেন্ট এবং সেনা-আবাসিকও গড়ে তোলে ফ্রান্স ও স্পেন। যদিও শান্তি চুক্তির পরে এই দ্বীপের স্থায়ী বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। হয় ফ্রান্স, নয় স্পেনে জায়গা পান তাঁরা। আর এই দ্বীপ হয়ে ওঠে স্পেন ও ফ্রান্সের স্মারক। তবে আজ নিরাপত্তার খাতিরে বন্ধ করা হয়েছে পর্যটনও। শুধুমাত্র বিশেষ অনুমতিপত্র আদায় করেই এই দ্বীপে প্রবেশ করতে পারেন সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। তবে কোনো সৌধের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বারণ। 

আরও পড়ুন
৩ লক্ষ ইঁদুরের দৌরাত্ম্য, বেহাল হতে বসেছিল এই দ্বীপ!

কিন্তু স্থায়ী বাসিন্দা যদি নাই থাকে, তবে এই দ্বীপের রক্ষণাবেক্ষণ করে কারা? সেই ব্যবস্থা যৌথভাবে নিয়ন্ত্রণ করে ফরাসি ও স্প্যানিশ প্রশাসনই। নৌকায় করে আধিকারিকদের পাঠানো হয় এই দ্বীপে। এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে সামনে থেকে পরখ করার সুযোগ মেলে একমাত্র তাঁদেরই। বিশ্বের একমাত্র এহেন দ্বীপ হয়ে ইউরোপের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে বিতর্কিত এই দ্বীপটি…

Powered by Froala Editor

Latest News See More