নাসার ঐতিহাসিক মঙ্গল অভিযানে জয়-জয়কার ভারতীয়দের। পৃথিবীর বুক থেকে রকেট ছাড়ার মুহূর্ত থেকে নেভিগেশনের সমস্ত দায়িত্ব সামলেছেন স্বাতী মোহন। অনুভব দত্ত, সৌম্য দত্ত এবং জে বলরাম— জড়িত ছিলেন মঙ্গলের হেলিকপ্টার ইনজেনুইটি এবং অবতরণের প্যারাসুট নির্মাণের সঙ্গে। এবার সামনে এল আরও এক ভারতীয় প্রকৌশলীর নাম। ডাঃ বন্দনা ভার্মা। নাসার রোবটিক্স অপারেশন দলের প্রধান প্রকৌশলীই তিনি। মঙ্গলের বুকে কোনো লক্ষ্যবস্তুকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ব্যাপারে পার্সিভারেন্স রোভারকে পরিচালিত করবে তাঁরই তৈরি সফটওয়্যার এবং প্রোগ্রামিং।
বন্দনা ভার্মার জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ভারতেই। হালওয়ারায়। বাবা ছিলেন ভারতীয় বিমান বাহিনীর পাইলট। পাঞ্জাবের চন্ডীগড়ের একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বৈদ্যুতিন প্রযুক্তিবিদ্যায় স্নাতক হন বন্দনা। পরবর্তীকালে তারপর কার্নেগি মেলন বিশ্ববিদ্যালয়ে রোবটিক্সে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। পিএইচডিও সেখান থেকেই।
ছাত্রাবস্থাতেই বিজ্ঞানীদের নজরে পড়েছিলেন বন্দনা। প্রযুক্তিজগতে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছিল তাঁর ‘ট্রাকটেবল পার্টিকলস ফিলটার ফর রোবট ফল্ট ডায়াগনোসিস’ নামের থিসিসটি। দুর্গম অঞ্চলে রোবটের মধ্যে কোনো যন্ত্রাংশের সমস্যা হলে কীভাবে তা দ্রুত স্বয়ং সারিয়ে তুলতে সক্ষম হয় রোবট— তা নিয়েই ছিল এই গবেষণা।
পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীনই একটি অভিনব রোবট বানিয়েছিলেন বন্দনা। যা সক্ষম নিজেই নেভিগেট করতে। তবে সাধারণ কোনো পথ নয়, গোলকধাঁধা কিংবা অজ্ঞাত পরিবেশের মধ্যেও ঠিক পথ খুঁজে নিতে পারত সেই রোবট। আর্কটিক এবং অ্যান্টার্কটিকের দুর্গম অঞ্চলে বিস্তর পরীক্ষাও চলেছিল সেই রোবট নিয়ে।
আরও পড়ুন
অস্ট্রেলিয়ার কোভিড মোকাবিলায় অবদান ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানীরও
২০০৮ সাল থেকে নাসার জেপিএল ল্যাবরেটরিতে কর্মরত বন্দনা। এর আগে কিউরিওসিটি রোভারের পরিচালনাতেও তত্ত্বাবধান করেছেন তিনি। ‘মার-এ স্পিরিট’ ও ‘মার-বি অপার্চুনিটি’ রোভারের সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে তাঁর নাম। পার্সিভারেন্স রোভারের মূল পরিকল্পনার পিছনেও রয়েছে তাঁর মস্তিষ্কই।
আরও পড়ুন
নাসার মঙ্গল-অবতরণের অন্যতম কাণ্ডারী দুই বাঙালি-সহ চার ভারতীয় বংশোদ্ভূত
বছর কয়েক আগে প্লেক্সিল (পিএলইএক্সআইএল)-নামে একটি অত্যাধুনিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ তৈরি করে নাসা। সেই প্রোগ্রামিংয়ের সহ-লেখক ছিলেন বন্দনা। পার্সিভারেন্সের স্বয়ংক্রিয়তার জন্য দায়ী সেই ভাষাই। নাসার আগামী অন্যান্য প্রোজেক্টেও ব্যবহৃত হবে এই ভাষা। তবে শুধু প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজই নয়, তাঁর কাজের পরিধি আরও সুদূরপ্রসারী। মঙ্গলে যেন পৃথিবী থেকে রোভারের মাধ্যমে অণুজীব না পৌঁছাতে পারে তারজন্য বিশেষ অ্যাস্ট্রোবায়োলজিক্যাল ব্যবস্থাও করেছেন বন্দনা। আর এই কারণেই বিগত ৩ বছর তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য কাটাতে হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকায় আটাকামা মরুভূমিতে। কারণ মঙ্গলপৃষ্ঠের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যায় এই মরুভূমির প্রতিকূল পরিবেশের।
আরও পড়ুন
নাসায় হোয়াইট হাউসের প্রতিনিধি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভব্যা
ইতিমধ্যেই ৬টি নাসার সাম্মানিক পুরস্কার ও ২টি এমএসএল পুরস্কার পেয়েছেন বন্দনা। সবে চল্লিশের কোঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি। এখনও যে অনেক পথ চলা, থুড়ি ‘ওড়া’ বাকি রয়েছে তাঁর। যে উড়ান এই পৃথিবীর পরিধি ছাড়িয়ে আরও আরও দূরের…
Powered by Froala Editor