সময়টা আজ থেকে ৫৫ বছর আগের। কিন্তু আজকের পরিস্থিতির মধ্যে সেই সময়টাকে বুঝতে খুব একটা সমস্যা হবে না। বছর তিনেক আগেই চিন সীমান্তে চূড়ান্তভাবে পর্যুদস্ত হয়েছে ভারত। ভারতীয় সেনাদের সাহসিকতার গল্প চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লেও অনুন্নত যুদ্ধ সরঞ্জামের জন্য শেষ পর্যন্ত পরাজয় ঘটল। এর মধ্যেই আবার কাশ্মীর নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গিয়েছে পাকিস্তানের সঙ্গে। শুরু হয়েছে নতুন যুদ্ধ। অবশ্য এখন অনেকটা প্রস্তুত ভারতীয় বাহিনী। সেই তুলনায় পাকিস্তানের হাতে যুদ্ধের সরঞ্জাম কম।
তবে ভারতের বুকে তখন আরও এক সমস্যা দেখা দিয়েছে। অনাবৃষ্টির ফলে প্রায় সারা দেশজুড়ে ফসল ওঠেনি কিছুই। কৃষকরা লাভের আশা ত্যাগ করেছেন। অন্তত খেয়ে-পরে বাঁচুক সবাই। সেটুকুও সংস্থান নেই। যুদ্ধের অজুহাতে বৈদেশিক সাহায্যের প্রার্থনা ফিরিয়ে দিয়েছে আমেরিকা। এদিকে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে কৃষক আত্মহত্যা। মাত্র ৮ বছর আগে স্বাধীনতা পাওয়া একটা দেশের পক্ষে এই যৌথ সমস্যা মোকাবিলা করা কি সম্ভব? ইতিহাস বলবে, হ্যাঁ সম্ভব। ১৯৬৫ সালের সেই কঠিন সময় পেরিয়ে আবারও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিল ভারত। আর সেই সময়েই জন্ম নিয়েছিল একটি স্লোগান। ‘জয় জওয়ান, জয় কিষান’।
১৯৬৫ সালে দিল্লির রামলীলা ময়দানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে প্রথম এই স্লোগান উচ্চারণ করেন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রী। আর তারপর দেখতে দেখতে সারা দেশে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ে এই স্লোগান। ভারতীয় জাতীয়তাবাদের নতুন শব্দ, ‘জয় জওয়ান, জয় কিষান’। তখন ১৫ পয়সার দুটি পোস্টাল স্ট্যাম্প প্রকাশিত হয়। একটিতে এক ফৌজির ছবি দিয়ে লেখা ‘জয় জওয়ান’। অন্যটিতে কৃষকের ছবির সঙ্গে লেখা ‘জয় কিষান’।
সঙ্কটের সময় মানুষের মনে সবচেয়ে বেশি করে দরকার আত্মবিশ্বাস। আর সেটা দিতে পারে সারা দেশ একসঙ্গে। এটা বুঝতে পেরেছিলেন লালবাহাদুর শাস্ত্রী। অবশ্য শুধু স্লোগানেই নয়। কাজেও তার প্রমান রেখেছিলেন। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়াইবি চবনের নেতৃত্বে ঢেলে সাজিয়েছিলেন সেনাবাহিনীকে। আর সেইসঙ্গে শুরু হয়েছিল কৃষিবিপ্লব। পাঞ্জাব-হরিয়ানা জুড়ে সবুজ বিপ্লবের পাশাপাশি গুজরাটে শুরু হয়েছিল শ্বেত-বিপ্লব। দুগ্ধ প্রক্রিয়াকরণ শিল্পকেও তো এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তখনই জন্ম নিয়েছিল ‘আমূল’। সীমান্তে এবং দেশের অভ্যন্তরে, দুই দিকেই যুদ্ধ করে আবারও মাথা তুলে দাঁড়াল ভারতবর্ষ। কোনোরকম বৈদেশিক শক্তির সাহায্য ছাড়াই।
আরও পড়ুন
কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন, সরকারি পদক ও সম্মাননা ফেরাচ্ছেন ১৫০ ক্রীড়াবিদ
সময়টা বোধহয় আজকের সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে খুব একটা সমস্যা হবে না। শুধু কিছুটা বদলেছে তো বটেই। এখন কৃষকদের আত্মহত্যা নিয়ে নিশ্চুপ সরকার। অন্যদিকে নিজেদের অধিকারের দাবিতে লড়াকু কৃষকদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে সেনাবাহিনীকেই। একসময় যাঁদের হাতে হাত রেখে এগিয়ে যেতে শিখিয়েছিলেন শাস্ত্রীজি। আর সেনারা? হ্যাঁ তাঁদের সম্মানে নানাধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করা হচ্ছে ঠিকই। তবে সেনাবাহিনীতে উপযুক্ত পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ তোলায় কর্তব্যরত ফৌজিকে বরখাস্তও হতে হচ্ছে। আজও তাই ভারতের কৃষিজীবীদের মুখে ফিরে আসছে সেই স্লোগানই। ‘জয় জওয়ান, জয় কিষান’।
(মতামত লেখকের ব্যক্তিগত)
আরও পড়ুন
কৃষক আন্দোলনে সামিল শাহীনবাগের ‘দিদা’, হরিয়ানা সীমান্তে আটক করল পুলিশ
তথ্যসূত্রঃ Jai Jawan, Jai Kisan: Memorable Slogan, But What Does It Mean?, AVIRAL VIRK, The Quint
Shastri united country through slogan 'Jai Jawan, Jai Kisan': Rajnath, PTI
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
বিক্ষোভে উত্তাল কৃষকরা, ভারতবাসীর স্বাদ ‘আমুল’ পাল্টে দিলেন ত্রিভুবনদাস