Powered by Froala Editor
ভারতের বাইরেও যে-সব দেশে পালিত হয় রঙের উৎসব
১/১২
দোলযাত্রা, হোলি, বসন্ত উৎসব— দেশের এক এক প্রান্তে তার এক এক নাম। ভারতের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে তার সাংস্কৃতিক তাৎপর্যও আলাদা। কোথাও রঙের এই উৎসব পালিত হয় ফাল্গুনী পূর্ণিমায়, কোথাও আবার তার পরদিন। তবে এই উৎসবকে একান্ত ভারতীয় ধরে নিলে ভুল হবে। কারণ, ভারতের পরিসীমার বাইরেও বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন রূপে পালিত হয় রঙের এই উৎসব। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক তেমনই কিছু উদাহরণ—
২/১২
ওয়াটার ফাইট ডে— ছোট্ট বেলুনে ভরা রঙিন জল। তা ছুঁড়ে মারা হচ্ছে পথচলতি মানুষদের গায়ে। কিংবা পিচকারি দিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে রং। দোলের দিনের এ-দৃশ্যের সঙ্গে সকলেই পরিচিত আমরা। কিন্তু এমন দৃশ্য যদি বার্লিনে দেখা যায়? সে-দেশে এই জলকেলি পরিচিত ‘ওবারবাউমব্রুকে’ নামে। ওবারবাউমব্রুকে ব্রিজের ওপরই এই জলযুদ্ধের আয়োজন হওয়ায়, এমন নাম এই উৎসবের। রং ব্যবহৃত না হলেও, ১৭৩২ সাল থেকে উদযাপিত হয়ে আসা এই জলকেলির সঙ্গে বিস্তর মিল রয়েছে হোলির।
৩/১২
গ্লুচেস্টার চিজ ভেস্টিভ্যাল— পাহাড়ের উপর থেকে গড়িয়ে দেওয়া হল ৪-৫ কেজি ওজনের চিজের বল। পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে যাওয়া সেই বলটিকেই ধরতে পারলেই কেল্লা ফতে। ইংল্যান্ডের গ্লুচেস্টারের কুপার্স হিল প্রতিবছর আয়োজিত হয় এমনই এক আশ্চর্য উৎসব। এঁকে পাহাড়ি ঢাল, তার ওপর চিজের কারণে পিচ্ছিল পথ। চিজ-বল ধরতে গিয়েই মাখনে মাখামাখি হন অংশগ্রহণকারীরা। পড়ে গিয়ে চোটে শিকারও হন অনেকে। উল্লেখ্য এই উৎসবটির মাধ্যমেই বসন্তের উদযাপন হয় সে-রাজ্যে।
৪/১২
লা টোমাটিনা— বছর কয়েক আগের কথা। দেশ জুড়ে সাড়া ফেলে দিয়েছিল বলিউডের সিনেমা ‘জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা’। এই সিনেমা যাঁরা দেখেছেন, টোমাটিনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল তাঁরা সকলেই। কৃত্রিম রং নয়, বরং পাকা টোম্যাটো দিয়েই হোলি খেলা হয় স্পেনে। ১৯৪৫ সাল। স্পেনের সোম্ব্রে স্ট্রিটে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে স্থানীয় যুবকদের দুটি গোষ্ঠী। লাঠি, বন্দুকের বদলে তাদের অস্ত্র ছিল কাচা টোম্যাটো। মজার বিষয়, এই টোম্যাটো-যুদ্ধই পরবর্তীতে পরিণত হয় উৎসবে— ‘লা টোমাটিনা’-য়।
৫/১২
লা বাটাল্লা দেল ভিনো— কথাটার বাংলা করলে দাঁড়ায় ওয়াইনের উৎসব। নাম থেকেই দিব্যি বোঝা যায় এই উৎসবটিও আদতে স্প্যানিশ। তবে টোম্যাটোর বদলে এই উৎসব পালিত হয় রেড ওয়াইন ছোঁড়াছুঁড়ি করেই। স্পেনের বিলবাও শহর থেকে ১০০ কিমি দক্ষিণে রিওজা অঞ্চলে প্রতিবছর ২৯ জুন পালিত হয় লা বাটাল্লা দেল ভিনো।
৬/১২
বাত্তাইয়া ডেলে আরাঞ্চে— স্পেনের পর এবার গন্তব্য ইতালি। সেখানেও ‘হোলি’ পালিত হয় খাদ্যদ্রব্যে ছোঁড়াছুঁড়ি করেই। তবে টোম্যাটো বা ওয়াইন নয়, ইতালির মানুষদের রঙের জোগান দেয় কমলালেবু। ‘বাত্তাইয়া ডেলে আরেঞ্চে’ কথাটির আক্ষরিক অর্থও ‘ব্যাটেল অফ অরেঞ্জ’। মধ্যযুগীয় এক অত্যাচারী ডিউকের শাসন থেকে মুক্তি পাওয়াকে কেন্দ্র করেই ইতালির ইভরিয়া অঞ্চলে পালিত হয় এই উৎসব।
৭/১২
গ্রিসের ময়দা-যুদ্ধ— পরনে প্লাস্টিকের ভারী রেনকোট। চোখে মোটা গগলস। কারোর মাথায় আবার বাহারি পরচুলা। দক্ষিণ-মধ্য গ্রিসের ছোট্ট বন্দরনগরী গ্যালাক্সিডিতে এভাবেই উদযাপিত হয় ‘হোলি’। অবশ্য গ্রীসের এই ‘হোলি’ আদতে যুদ্ধ। ময়দা যুদ্ধ। হ্যাঁ, আবিরের বদলে ময়দা উড়িয়েই উদযাপন হয় এই উৎসবের। ময়দা-যুদ্ধের সঙ্গে পৌরাণিক যোগ তো রয়েছেই, পাশাপাশি এই উৎসব ঐতিহাসিকভাবেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। উনিশ শতকে অটোমান শাসনের আওতায় ছিল গ্রিস। আর সে-সময় খাদ্যদ্রব্য সরবরাহ বন্ধ করেই যুদ্ধে নেমেছিল গ্রিসের মানুষ। পরবর্তীকালে এই বিষয়টিই মুখ্য কারণ হয়ে ওঠে ফ্লাওয়ার-ওয়্যারের।
৮/১২
চিনচিলা মেলন ফেস্টিভ্যাল— অস্ট্রেলিয়ার চিনচিলা প্রদেশ। সেখানেই তরমুজকে কেন্দ্র করেই সেখানে আয়োজিত হয় আশ্চর্য এক উৎসব। তরমুজ দিয়ে একদিকে যেমন তৈরি হয় বিভিন্ন পানীয়, তেমনই তরমুজ থেঁতো করে তার নির্যাস ব্যবহার করা হয় রং হিসাবে। মাখামাখি করেন সাধারণ মানুষ। তাছাড়াও আয়োজিত হয় তরমুজ স্কিইং, টস, বাঞ্জি জাম্পিং, আয়রন-ম্যান রেস-সহ হরেক কিসিমের প্রতিযোগিতা। প্রতিবছর এই উৎসবে অংশ নেন ২০ হাজারেরও বেশি মানুষ।
৯/১২
সংক্রান— এবার ফিরে আসা যাক এশিয়ায়। ভারতীয় হোলি কিংবা দোলের ‘থাই’-সংস্করণ হল সংক্রান। বরফ-ঠান্ডা জলে রং মিশিয়ে খেলা হয় এই উৎসবটি। ব্যবহৃত হয় পিচকারি। তবে আবিরের বদলে থাইল্যান্ডের মানুষরা ব্যবহার করেন রঙের পেস্ট। বৌদ্ধ নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বছরের প্রথম দিনটা এভাবেই উদযাপিত হয় সে-দেশে। এমনকি এই উৎসব নাকি বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো জলযুদ্ধ! এদিন পাথরনির্মিত বুদ্ধমূর্তিগুলি স্নান করানো হয় দেশজুড়ে। বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও ভিক্ষুদের গায়ে রঙিন জল ছিটিয়ে জ্ঞাপন করা হয় সম্মান!
১০/১২
বোরিয়ং ফেস্টিভ্যাল— ইউরোপের পর এবার ফিরে আসা যাক এশিয়ায়। কোরিয়ান উপদ্বীপের বোরিয়ং শহর। জুলাই মাসের দু-সপ্তাহ ধরে সেখানে চলে এক আশ্চর্য উৎসব— মাডফেস্ট। হ্যাঁ, আক্ষরিক অর্থেই কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি। আর এই উৎসবে সামিল হতে দেশ-বিদেশ থেকে হাজির হন হাজার হাজার মানুষ। ১৯৯৯ সাল থেকে শুরু হয়েছিল এই আশ্চর্য উৎসব উদযাপন। উদ্দেশ্য ছিল, কাদা থেকে তৈরি প্রসাধনীর প্রচার। আয়োজকদের মতে, বোরিয়ং শহরের কাদায় নাকি জার্মেনিয়াম এবং বেন্টোনাইটের মতো খনিজ রয়েছে। যা থেকে নির্গত ইনফ্রারেড রশ্মি বিশেষভাবে উপকারী ত্বকের জন্য!
১১/১২
অ্যানুয়াল মাড ডে— কাদা ছোঁড়াছুঁড়িতে কোরিয়ার থেকে কোনো অংশ পিছিয়ে নেই যুক্তরাষ্ট্রও। দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগানের মাঠগুলিই এই উৎসবে হয়ে ওঠে কাদার পুল। বিশাল বিশাল গর্ত তৈরি করা হয় সেখানে। তারপর সেখানে আয়োজিত হয় দৌড়-সহ নানাধরনের প্রতিযোগিতা। মূলত ৫-১২ বছর বয়সি শিশুদের জন্যই এই উৎসব শুরু হলেও, পরবর্তীতে তাতে যোগ দেন প্রাপ্তবয়স্করাও। বর্তমানে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির উৎসব পরিণত হয়েছে মিশিগানের ঐতিহ্যে।
১২/১২
এ তো গেল হোলির অনুরূপ উৎসবের কথা। এবার সরাসরি হোলি বা দোলে ফিরে আসা যাক। ভারতের বাইরে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, কম্বোডিয়া-সহ একাধিক দেশেই পালিত হয় হোলি। সেই উদযাপনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে রাধা-কৃষ্ণ। সবমিলিয়ে রংবাহারি উৎসবে ভারতের থেকে কোনো অংশেই পিছিয়ে নেই বিশ্বের অন্যান্য দেশ…