ঠান্ডাযুদ্ধের সময় সোভিয়েতের তৈরি ভূগর্ভস্থ নগরী! আজও টিকে আছে জর্জিয়ায়

পানীয় জলের পাইপলাইন, দৈত্যাকার রিজার্ভার, টানেলের মধ্যে দিয়ে রাস্তা, সরু রেলপথ, চিকিৎসার পরিকাঠামো, সারি সারি শয়ন কক্ষ এবং কন্ট্রোলরুম। পরিত্যক্ত হলেও অনায়াসেই এই প্রকাণ্ড আয়োজন বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারে আজকের দিনেও। জর্জিয়ার (Georgia) রাজধানী তবিলিসির নিচে লুকিয়ে রয়েছে এমনই একটি প্রকাণ্ড ভূগর্ভস্থ শহর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই রাশিয়া (Russia) এবং যুক্তরাষ্ট্রের (USA) মধ্যে শুরু হয়েছিল শক্তিবৃদ্ধির প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সূত্রপাত হয়েছিল ঠান্ডাযুদ্ধের (Cold War)। সেই সময়ই নির্মিত হয়েছিল এই গোপন ভূগর্ভস্থ নগরী।

মূলত, প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র এবং উচ্চপদস্থ রুশ সেনা আধিকারিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্বদের সুরক্ষা প্রদান করতেই গড়ে উঠেছিল এই ভূগর্ভস্থ নগরী। সবমিলিয়ে শুধু এই নগরেই লুকিয়ে রয়েছে সাড়ে চারশোর বেশি বাঙ্কার। যেগুলির প্রত্যেকটিই একে অপরের সঙ্গে যুক্ত টানেলের মাধ্যমে। ট্রলি জাতীয় ছোটো ট্রেন চলাচলের জন্য রয়েছে সরু রেলপথও। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা এবং অন্যান্য যুদ্ধাস্ত্রের আক্রমণকে অনায়সেই ঠেকাতে পারে এই সুরক্ষাকবচ। অন্তত এমনটাই দাবি নির্মাণ প্রযুক্তিবিদদের। অবশ্য তার কোনো প্রয়োজন পড়েনি কখনও। দুই দেশের মধ্যে প্রায় তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে স্নায়ুযুদ্ধ চললেও, বড়োসড় রক্তপাত হয়নি সেসময়। তবে একটা সময় এই গুপ্ত নগরী থেকেই পরিচালিত হত সোভিয়েতের গোয়েন্দা বিভাগের নানান কর্মসূচি। বিভিন্ন গুপ্ত আলোচনাসভাও আয়োজিত হত এই ভূগর্ভস্থ বাঙ্কারেই। 

১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই নগরী পরিত্যক্ত করে জর্জিয়া প্রশাসন। তখন স্বতন্ত্র রাষ্ট্র জর্জিয়া। তার ক্ষমতাও সোভিয়েতের তুলনায় বহুগুণ সীমিত। ফলে, একপ্রকার অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিল এই নগরী। মানুষের অবর্তমানে ক্রমশ তাতে বাসা বাঁধে বাদুড়, ইঁদুর এবং অন্যান্য প্রাণী। পরিচর্যার অভাবে জীর্ণকায় হলেও, প্রায় তিন দশক পেরিয়ে এসে আজও বেশ ‘সুস্থ-সবল’ রয়েছে জর্জিয়ার এই ভূগর্ভস্থ শহর। 

আরও পড়ুন
বিশ্বের বৃহত্তম দেশ, প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশও; কেন ‘অজেয়’ রাশিয়া?

তবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকলেও, আজও সাধারণ মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ সেখানে। হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র বাঙ্কারে বিশেষ অনুমতি নিয়ে প্রবেশাধিকার দেওয়া হয় সাংবাদিক ও গবেষকদের। বাকি গুপ্তকক্ষের রহস্য এখনও অজানা। ভবিষ্যতে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধলেও যাতে সাধারণ মানুষের আশ্রয়কেন্দ্র হিসাবে নির্দ্বিধায় ব্যবহার করা যায় এই বাঙ্কারগুলি— সে জন্যই হয়তো তাদের তথ্য ও পরিকাঠামো গোপন রেখেছে জর্জিয়া প্রশাসন…

আরও পড়ুন
রাশিয়ার দখলে চের্নোবিলের অভিশপ্ত পারমাণবিককেন্দ্র, ইউরোপজুড়ে বাড়ছে উদ্বেগ

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
ছেড়ে গেছে অধিকাংশ মানুষ, মৃত্যুর অপেক্ষায় রাশিয়ার এই শহর