মহাকাশবিজ্ঞানীদের কাছে ২০২০-র ডিসেম্বর অনেকটা স্বপ্নের মতোই। গত তিন সপ্তাহের মধ্যে দেখা মিলেছে সূর্যগ্রহণ, জেমিনিড উল্কাবৃষ্টির। পাশাপাশি একই সরলরেখায় এসেছিল বৃহস্পতি এবং শনি। এবার আরও একটি বিরলতম ঘটনা ঘটতে চলেছে আজ সন্ধেবেলাতেই। ৪০০ বছরে এই প্রথম সৌরজগতের দুই দৈত্যাকার গ্রহ বৃহস্পতি ও শনি সবথেকে কাছাকাছি অবস্থান করবে। আকাশ পরিষ্কার থাকলে সন্ধে গড়ালেই খালি চোখে দেখা যাবে এই মহাজাগতিক দৃশ্য।
বৃহস্পতি আর শনির এই যুগলবন্দি বা ‘গ্রেট কনজাঙ্কশন’ শেষ দেখা গিয়েছিল ১৬২৩ সালে অর্থাৎ আজ থেকে ৩৯৭ বছর আগে। সেসময় জীবিত ছিলেন পৃথিবীর অন্যতম মহাকাশবিজ্ঞানের পথিকৃৎ গ্যালিলিও গ্যালিলেয়ি। ততদিনে তাঁর হাত ধরে আবিষ্কৃত হয়ে গিয়েছিল টেলিস্কোপও। কিন্তু সদ্য আবিষ্কৃত সেই টেলিস্কোপ তখনও পৌঁছায়নি সকল মহাকাশবিজ্ঞানীদের কাছে। পাশাপাশি আকাশ পরিচ্ছন্ন না থাকায় এই ঘটনা ঘটায় খালি চোখে দৃশ্যমানও হয়নি মহাজাগতিক ঘটনা।
৪০০ বছর আগের সেই অতিবিরল ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবার সুযোগ করে দিচ্ছে মানবসভ্যতার কাছে। তবে জীবদ্দশায় একবারই সুযোগ মেলে এমন দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার। নাসা জানিয়েছে দুটি গ্রহের মধ্যে কৌণিক তফাৎ থাকবে মাত্র ১ ডিগ্রির এক-দশমাংশ। অর্থাৎ, প্রায় সমাপতিত হবে দুই গ্রহ। এই মহাজাগতিক ঘটনার পাশাপাশি আজ কাকতালীয়ভাবেই পৌষ-সংক্রান্তি। দিনের দৈর্ঘ্য উত্তর গোলার্ধে হবে সর্বনিম্ন। এও যেন এক অদ্ভুত সমাপতন। দুই গ্রহের এই যুগলবন্দিকে ‘ক্রিস্টমাস স্টার ২০২০’ হিসাবে নামকরণ করেছে নাসা।
অন্যদিকে সার্চ ইঞ্জিন জায়েন্ট গুগল প্রায় প্রতিদিনই উল্লেখ্য ঘটনাগুলিকে মনে করিয়ে দেয় নিত্যনতুন ডুডলের মধ্যমে। এক্ষেত্রেও অন্যথা হয়নি তার। ‘ডবল প্ল্যানেট’-এর এই বিরল ঘটনাকে সৃজনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলল গুগল। আজ সারাদিন গুগল খুললেই দেখা মিলবে ছোট্ট ডুডল ভিডিও’র। সেখানে দেখা যাবে বৃহস্পতির সঙ্গে হাত মিলিয়ে আবার দূরে সরে যাচ্ছে শনি। পৃথিবীর দীর্ঘতম রাত এবং বড়দিনের কথা মাথায় রেখেই দেখানো হয়েছে ক্রিসমাস হ্যাট পরিহিত নীলগ্রহকেও। সব মিলিয়ে অতিবিরল এই ঘটনার সাক্ষী থাকতে ক্রমশ বাড়ছে উত্তেজনার পারদ। আগ্রহে অন্ত নেই সাধারণ মানুষেরও। কারণ একবার হাত-ছাড়া হলে এ জীবনে আর এমন সুযোগ যে ফিরে পাওয়ার নয়...
Powered by Froala Editor