নিঃসঙ্গতার খোঁজে অরণ্যচারী জার্মানরা

চারিদিকে নিঃসঙ্গ বনভূমি। নির্বাক গাছেদের সঙ্গে আছে কিছু পাখি। মানুষ নেই কোথাও। সেখানে গলা ছেড়ে বেসুরে গান গাইলে কেউ শুনবে না। কোনো লজ্জা, কোনো জড়তা থাকবে না। এই সমস্ত অনুভূতিকে যদি একটা শব্দে ব্যাখ্যা করতে হয়, তাহলে কী বলবেন? শব্দভাণ্ডার হাতরে হয়তো কিছুই পাবেন না। কিন্তু আপনি জার্মান ভাষা জানলে বলতে পারবেন, ‘ওয়াল্ডাইন্সামকাইট’। এই একটি শব্দের সঙ্গে জড়িয়ে আছে জার্মানির মানুষের যাপন। পৃথিবীর আর কোনো ভাষায় বোধহয় এর কোনো প্রতিশব্দ নেই।

চলতি অভিধানে দেখবেন, ‘বনভূমির নির্জনতা’। তবে এতে হয়তো কিছুই বোঝানো যায় না। আসলে সেই নির্জনতার মধ্যে মানুষের অনুভূতিই আসল। এমনটাই মনে করেন জার্মান ভাষার বিশেষজ্ঞরা। সেই নির্জনতার মধ্যে সমস্ত সামাজিকতাকে ভুলে যাওয়া যায়। আর করোনা পরিস্থিতিতে এই যাপন আরও অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। লকডাউনের মধ্যে বেশি দূরে যেতে পারেননি কেউই। তাই অবসর যাপনের জন্য খুঁজে নিয়েছিলেন বাড়ির পাশের বনভূমিই। জার্মানির বনবিভাগের নথি বলছে, ২০২০ সালে জঙ্গলে মানুষের যাওয়া-আসা দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। তার কারণ খুঁজতে সম্প্রতি বেশ কিছু গবেষণাও হয়েছে। প্রত্যেকেই একমত, জঙ্গলের আধ্যাত্মিক একাকিত্বকে উপভোগ করতেই মানুষ সেখানে ভিড় করছেন।

জার্মানির সমগ্র ভূখণ্ডের ৩৩ শতাংশই জঙ্গলে ঢাকা। সেখানে ১২১৫ প্রজাতির উদ্ভিদের সমাহার। ঐতিহাসিক সময় থেকেই মানুষ সেখানে নিজের অস্তিত্বকে নতুন করে আবিষ্কার করেছে। জার্মানির সসাহিত্যে, শিল্পে বারবার উঠে এসেছে অরণ্যের একাকিত্বের বর্ণনা। সেই একাকিত্বের মধ্যে পোশাকও যেন বাহুল্য। শিল্পবিপ্লবের প্রথম পর্যায়ের শরিক হয়েও এই যাপনে ছেদ পড়েনি কোথাও। তবে বনভূমির পরিমাণ অনেকটাই কমে এসেছে। তবে মানুষের দীর্ঘদিনের অভ্যাসকে তো সহজে বদলে ফেলা যায় না। এই একাকিত্বের মধ্যেই যে জার্মানির নাড়ির যোগ। সাহিত্যিক ভন শেফেল হোক বা দার্শনিক হাইডেগার কিম্বা স্বৈরতান্ত্রিক অ্যাডলফ হিটলার, অরণ্যের একাকিত্বে মুগ্ধ হয়েছেন সকলেই। আর এই সমস্ত অনুভূতিকে ধরে রেখেছে একটাই শব্দ। ‘ওয়াল্ডাইন্সামকাইট’।

Powered by Froala Editor

আরও পড়ুন
যুক্তরাষ্ট্রের ‘মুক্ত খাদ্য অরণ্য’, বিনামূল্যেই পেতে পারেন ফলমূল-সবজি

More From Author See More