রোবটের মিউজিয়াম, নির্মাণও করেছে রোবটরাই!

চ্যাট জিপিটি, বার্ড, নাইটক্যাফে কিংবা ভিড— সাম্প্রতিক সময় সংবাদমাধ্যমে বার বার নানাভাবে উঠে এসেছে এইসব নাম। হ্যাঁ, উপরে উল্লেখিত প্রতিটি নাম আসলে ভিন্ন ভিন্ন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। কোনোটি মানুষের বর্ণনা শুনে প্রস্তুত করে দেয় ছবি, কোনোটি আবার নির্দেশ পেলেই লিখে দেয় গবেষণাপত্র, কবিতা, চিঠি, কঠিন কঠিন প্রশ্নের উত্তর। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স কাজ করে কীভাবে? কীভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিবর্তিত হয়েছে এই প্রযুক্তি? ভবিষ্যতে কোন কোন কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে তাকে?

২০১৮ সাল। এমন চিন্তাভাবনা থেকেই এক বিশেষ জাদুঘর (Museum) তৈরির পরিকল্পনা করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া (South Korea)। যেখানে শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিবর্তনই নয়, বরং প্রদর্শিত হবে তাদের কর্মপ্রক্রিয়াও। নিজের অজান্তেই কীভাবে দৈনন্দিন জীবনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করে চলেছে সাধারণ মানুষ, সে-সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলাই ছিল দক্ষিণ কোরিয়ার মূল উদ্দেশ্য। চলতি বছরে জুলাই মাসেই সাধারণের জন্য খুলে যেতে চলেছে এই ‘ইউটোপিয়ান’ মিউজিয়ামের দরজা। 

হ্যাঁ, ইউটোপিয়াই বললে এতটুকু ভুল হয় না কোথাও। রেইম— রোবট অ্যান্ড এআই মিউজিয়াম। দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সেওলে অবস্থিত এই মিউজিয়াম যে-কারোর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে তার বাহ্যিক আকারের জন্য। গোলাকার এই মিউজিয়াম বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে যেন পৃথিবীর বুকে অবতরণ করেছে কোনো ভিনগ্রহীদের যান। যদিও আসল চমক রয়েছে মিউজিয়ামের ভেতরে। গোটা মিউজিয়াম-জুড়ে শুধুই রোবট আর রোবট। সেখানে মানবকর্মীর চিহ্নমাত্র নেই কোথাও। মিউজিয়াম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা থেকে শুরু করে, দর্শনার্থীদের টিকিট বিতরণ, গোটা মিউজিয়াম ঘুরিয়ে দেখানো কিংবা বিভিন্ন প্রযুক্তির ডেমোনস্ট্রেশন— প্রতিটা কাজের দায়িত্বই রয়েছে রোবট এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাদের কাঁধে। ভার্চুয়াল রিয়্যালিটি, অগমেন্টেড রিয়্যালিটি থেকে শুরু করে হলোগ্রাম— যে-সব প্রযুক্তি সাধারণ সিনেমার পর্দায় দেখে অভ্যস্ত আমরা, তার সবকিছুই দেখা মিলবে এই আশ্চর্য জাদুঘরে। 

এখানেই শেষ নয়। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম এই রোবট মিউজিয়াম তৈরিও হয়েছে রোবটদের হাতে। হ্যাঁ, শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি। এই স্থাপত্য নির্মাণের নেপথ্যে রয়েছে তুরস্কের সংস্থা ‘এমএএ’— মেলিকে আল্টিনিসিক আর্কিটেক্টস। নিজেদের তৈরি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমেই এই মিউজিয়ামের নকশা প্রস্তুত করেছে তুরস্কের সংস্থাটি। পাশাপাশি এই ভবন তৈরিতেও ব্যবহৃত হয়েছে অসংখ্য রোবট। সেক্ষেত্রে মানবকর্মীর সংখ্যা ছিল নামমাত্র। বিশ্বের প্রথম রোবট নির্মিত মিউজিয়াম হিসাবে ইতিমধ্যেই এক আশ্চর্য ইতিহাসও তৈরি করেছে এই মিউজিয়াম। আর সেই কারণেই হয়তো আশ্চর্য এই স্বপ্নরাজ্যের নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে মাত্র দু’বছরের মধ্যে। 

এআই-এর ব্যবহার আদৌ ভালো নাকি ক্ষতিকর— তা নিয়ে বর্তমানে দ্বিবিভক্ত সমাজ। বার বার অভিযোগ উঠছে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণে বাড়ছে বেকারত্ব। সেখানে দাঁড়িয়ে সেওলের এই মিউজিয়াম দেখাবে, আগামীদিনে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে গেলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গেই হাত মেলাতে হবে মানুষকে। না-হলে গতিরুদ্ধ হয়ে স্রোত হারাবে সভ্যতার অগ্রগতি…

Powered by Froala Editor