আবারও এক কালীপুজোর রাত। পাড়ার মোড়ে মোড়ে বেজে উঠছে শ্যামাসঙ্গীত। আর শ্যামাসঙ্গীত বলতেই প্রথম মনে আসে পান্নালাল ভট্টাচার্যের নাম। যে চিরকিশোর কণ্ঠ আজও কালীপুজোর রাতগুলোকে সুরের মূর্ছনায় ভাসিয়ে নিয়ে যায়। তবে সেখানে শুধুই রামপ্রসাদ বা রজনীকান্ত নয়, বেজে ওঠে নজরুল ইসলামের লেখা গানও। আর একজন গীতিকারের কথা অবশ্য প্রায় বলাই হয় না। কিন্তু প্রতি বছর তাঁর লেখা গান আমরা শুনতে পাই। আর সেই গান হল, ‘আমি মন্ত্র তন্ত্র কিছুই জানিনে মা’। আজও জনগণের উন্মাদনার আড়ালে থাকা সেই মানুষটির নাম দিলীপকুমার রায়।
দিলীপকুমার রায় রজনীকান্ত সেনের দৌহিত্র। গান তাঁর রক্তে প্রবাহিত। একদিন গ্রামোফোন কোম্পানি থেকে তাঁকে বলা হল, কালীপুজো উপলক্ষে ভক্তিগীতি লিখে এবং সুর করে দেওয়ার জন্য। প্রথমে রাজি হননি দিলীপকুমার। এরকম গান লেখার অভ্যাস তাঁর ছিল না। তবে শেষ পর্যন্ত নিমরাজি হয়েই লেখার কাজে হাত দিলেন। আর সেইসঙ্গে তৈরি হল একটি কিংবদন্তি। নেপথ্যে মানুষটির নাম সেভাবে মনে রাখেননি কেউই। আজও এই গানের গীতিকারের নাম জিজ্ঞেস করলে অনেকেই উত্তর দিতে পারেন না। ১০৪ বছর বয়সেও নিজেকে আড়ালেই রেখেছেন কিংবদন্তি এই মানুষটি।
১৯১৭ সালে ২৯ এপ্রিল জন্ম দিলীপকুমার রায়ের। সঙ্গীতের প্রতি আকর্ষণ প্রথম থেকেই। তবে রজনীকান্ত সেন, অতুলপ্রসাদ, নজরুল ইসলাম বা হিমাংশু দত্তের গান শেখাতেই বেশি ভালোবাসতেন। নিজেও বেশ কিছু রেকর্ড করেছেন। পান্নালাল ভট্টাচার্যকে রজনীকান্ত সেনের গান গাইয়েছিলেন দিলীপকুমারই। আর সেই পান্নালালের কণ্ঠেই অমর হয়ে থেকে গেল তাঁর লেখা দুটি গান।
“যদি তোর ভূ-মন্দিরের দ্বারে / তোমার লাগি কাঁদি অঝোর ধারে/ যদি নয়ন হতে লুপ্ত ভুবন হয়/ সেই সে অশ্রুতেই/ তবু আমার কাছে আসবি নে তোর এমন সাধ্য নেই” গানের সুরে কথায় যেন এমন এক জগতে নিয়ে গিয়েছিলেন তিনি, যেখান থেকে কেউ শূন্য হাতে ফিরে আসে না। এরপর পান্নালালের কণ্ঠেই রেকর্ড হয়েছিল আরও একটি গান। ‘আমি সব ছেড়ে মা ধরব তোমার রাঙা চরণ দুটি’। সেই একই জাদু। ভক্তিগীতির মধ্যেও নাগরিক জীবনের প্রতিফলন। আর এই জাদুই আজও গানগুলিকে মলিন হতে দেয়নি। স্রষ্টাকে ছাপিয়ে গিয়েছে তাঁর সৃষ্টি। কিন্তু স্রষ্টার খোঁজ আমরা আদৌ রেখেছি কি?
আরও পড়ুন
রক মিউজিকের মোড়কে শ্যামাসঙ্গীত, আজও তরুণদের কাছে জনপ্রিয় ‘প্রোজেক্ট মায়া’
বিশেষ কৃতজ্ঞতা – সপ্তর্ষি ঘটক, শ্রুতি গোস্বামী, শুভজিৎ সরকার
আরও পড়ুন
মুসলমান কবিরা লিখলেন শ্যামাসঙ্গীত, কালিকামঙ্গল - বাংলার ভক্তি ও মিলনের ইতিহাস
Powered by Froala Editor