মানুষের হাত থেকে বাঁচতে ফুলের রং অব্দি পাল্টে ফেলেছে এই উদ্ভিদ!

ধরুন আপনার চোখের দিকে ধেয়ে আসছে কোনো সূচালো তির। বা নিদেনপক্ষে পাথরের টুকরোও। আপনা থেকেই প্রতিবর্ত ক্রিয়া সজাগ করে দেবে আপনাকে। আর আপনি দ্রুত বুজিয়ে ফেলবেন চোখ। এও তো আত্মরক্ষার এক কৌশল। কিন্তু শুধুই কি প্রাণীদের মধ্যেই দেখা যায় এই ঘটনা? এতদিন জানা ছিল সেরকমই। সম্প্রতি মিলল বিরল ব্যতিক্রম। ‘ফ্রিটিলারিয়া ডেলাভায়ি’ নামের একটি উদ্ভিদের মধ্যেও দেখা গেল প্রতিবর্ত ক্রিয়ার উপস্থিতি।

হাজার হাজার বছর ধরেই, চিনের হেংডুয়ান পর্বতের পাথুরে জমিতে দেখতে পাওয়া যায় এই গাছ। বিশেষত্ব উজ্জ্বল সবুজ বর্ণের ফুল। যা কিনা ফোটে পাঁচ বছরে মাত্র একবার। সেইসঙ্গে এই ফুলের রয়েছে চিকিতসাগত উপকারিতাও। ফলে ফ্রিটিলারিয়ার মূল শত্রুই হয়ে উঠেছে মানুষ। ক্রমাগত ফুল সংগ্রহের ফলে ধীরে ধীরে অবলুপ্তির পথে হাঁটছে এই বিস্ময়-প্রজাতিই।

তবে মানুষের হাত থেকে বাঁচতে ছদ্মবেশ বা কেমোফ্লাজের এক অদ্ভুত ক্ষমতা রপ্ত করেছে এই উদ্ভিদ। সম্প্রতি এমনটাই চোখে পড়েছে বিজ্ঞানীদের। উজ্জ্বল সবুজ নয়, বরং ফুলের রং এখন পাথুরে মাটির মতোই ধূসর। একদম কাছ থেকে না দেখলে তাকে চিহ্নিত করা এক প্রকার অসম্ভবই হয়ে দাঁড়িয়েছে ফুল-সংগ্রাহকদের কাছে।

সম্প্রতি চিনের কুনমিং ইনস্টিটিউট অব বোটানি এবং এক্সেটার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষকের চোখেই প্রথম ধরা দেয় ঘটনাটি। প্রাথমিকভাবে তাঁরা ভেবেছিলেন কোনো তৃণভোজী প্রাণীদের থেকে বাঁচতেই এই ধরণের অভিযোজন এই প্রজাতির। তবে সেই ধারণা ভাঙতে দেরি হয়নি। বিস্তারিত গবেষণায় উঠে আসে আসলে মানুষের জন্যই কেমোফ্লাজের পথ বেছে নিয়েছে ফ্রিটিলারিয়া। 

আরও পড়ুন
বছরে মাত্র একদিনই ফোটে এই ফুল; মহামারীর আবহে বদলে ফেলল ক্যালেন্ডারও

বিগত ২০০০ বছর ধরেই চিনের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন ঔষধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই ফুল। বিরল এই ফুলের দামও আকাশ ছুঁয়েছে বর্তমানে। ফলে লাভের জন্যই পাল্লা দিয়েছে বেড়েছে ফুল-আহরণ। গবেষণার স্বার্থে স্থানীয় পুষ্প-সংগ্রহকারীদের সাক্ষাৎকার নেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের অনেকেরই ধারণা, দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে ফুল। কিংবা কেউ কেউ চিহ্নিত করতেই ব্যর্থ হচ্ছেন ফ্রিটিয়ারিয়াকে। 

আরও পড়ুন
দিন কাটে বৃদ্ধাশ্রমেই, সেইসব মায়েদের কাছেও পৌঁছে গেল ফুলের স্তবক

কাজেই বলাই বাহুল্য, সর্বতোভাবেই সার্থক ফ্রিটিলারিয়ার এই বিবর্তন। নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই এমন অদ্ভুত প্রকৌশলে তাজ্জব গবেষকরাও। এতদিন লজ্জাবতী লতার বৈশিষ্ট্যই ছিল এক রহস্য। ছুঁলেই তৎক্ষণাৎ গুটিয়ে যায় তার পাতা। কিন্তু আগাম বিপদের আভাস পেয়ে আত্মরক্ষার কৌশল কোনো উদ্ভিদের যে থাকতে পারে, এমনটা ভাবা ছিল কার্যত কল্পনাতীত। এবার সেটাই সত্যি করে দেখাল ফ্রিটিলারিয়া। আরও একবার মনে করিয়ে দিল ডারউনের বহু বছর আগের তৈরি সেই তত্ত্ব। ‘অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম’...

আরও পড়ুন
পাতা বা ফুল ছিঁড়লে যন্ত্রণায় চিৎকার করে গাছও, ধরা পড়ল মাইক্রোফোনে

Powered by Froala Editor