আর পাঁচটা স্বাভাবিক দিনের মতোই লাসু গ্রামে শুরু হয়েছিল রোববারের সকাল। তবে খানিক বাদেই হঠাৎ লক্ষ করা যায় এক অদ্ভুত ছবি। ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৯টা। অলকানন্দা নদীর ধারে ভিড় করেছেন শতাধিক মানুষ। কারোর হাতে বালতি, কারোর হাতে আবার ঝুড়ি বা কাপড়ের থলি। অলকানন্দার ধার ঘেঁষে থিকথিক করছে মাছ। নদীপৃষ্ঠে ভেসে থাকার দরুণ মাছ ধরতে ছিপ কিংবা জালের প্রয়োজনই পড়ছে না কোনো।
লাসুগ্রামে যখন এই দৃশ্য, তখন ৭০ কিলোমিটার দূরে হয়তো ডঙ্কা বেজে উঠেছে বিপর্যয়ের। মাত্র এক ঘণ্টা পরই টের পাওয়া যায় তার। খসে পড়া হিমবাহের একাংশ ভয়ঙ্কর করে তোলে চামোলি জেলার পরিস্থিতি। শুধু চামোলিই নয়, হড়পা বানে প্লাবিত হয় উত্তরাখণ্ডের বিস্তীর্ণ অঞ্চল। নামে ভূমিধ্বস। অলকানন্দার জলে মাছেদের ভেসে ওঠা এই বিপর্যয়েরই পূর্বাভাস ছিল যেন।
শুধু অলকানন্দা নয়, ধৌলিগঙ্গা, নন্দপ্রয়াগ, ল্যাঙ্গাসু, কর্ণপ্রয়াগেও দেখা গিয়েছিল একই রকম অবাক করা কাণ্ড। মাহসির, কার্প, স্নো ট্রাউট ইত্যাদি মাছদের সার বেঁধে সাঁতার কাটতে দেখা গেছে নদীর কিনার ধরে। সাধারণত যাদের দেখা যায় গভীর জলে। এর সঙ্গে আরও একটি ঘটনা অবাক করেছিল স্থানীয়দের। ঘন সবুজ জলের রং যেন ধীরে ধীরে বদলে গেছে ধূসর রঙে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, উত্তরাখণ্ডের এই বিপর্যয় এবং মাছেদের অদ্ভুত আচরণের মধ্যে সত্যিই কি কোনো সম্পর্ক রয়েছে? সত্যিই কি তবে আগে থেকে বিপর্যয়ের কথা বুঝতে পেরেছিল মাছেরা? আর তা যদি হয়েও থাকে তবে কীভাবে? বিজ্ঞানীদের মতে, বিশাল বরফের চাঁই ভেঙে পড়ার আগে থেকেই শুরু হয়েছিল কম্পন। যা অনুভূত হয় মাছের শারীরিক ‘সেন্সর’-এ।
আরও পড়ুন
সুখী পর্যটকদের ভিড় কমুক হিমালয়ে, সীমিত হোক ‘উন্নয়ন'ও
মাছের শরীরে এই সেন্সর মূলত তার পার্শ্বীয় রেখা। যা এতটাই সংবেদনশীল, যে জলের গতির পরিবর্তন এবং চাপের সামান্যতম তারতম্যকেও শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এক্ষেত্রে সম্ভবত বন্যার আগে বরফের ঘর্ষণ কিংবা ফাটলের শব্দকে চিহ্নিত করতে পেরেছিল মাছেরা। আবার অনেকের মতে জলে তোড়ে কোনো বৈদ্যুতিক তার কিংবা শক্তির উৎস জলে ভেঙে পড়ায় স্বল্প মাত্রা বৈদ্যুতিক শক ছড়িয়ে পড়ে নদীতে। সেই ঘটনাই ট্রিগার করেছিল মাছেদের সংবেদনশীলতাকে। যাই হোক, মাছের এমন বিরল আচরণই হয়তো সতর্কবার্তা ছিল। যে পূর্বাভাস ধরতে পারেনি মানুষ…
আরও পড়ুন
প্রকৃতির রোষানলে উত্তরাখণ্ড, গত তিন দশকে ৪ বার নেমে এসেছে বিপর্যয়
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
নন্দাদেবীতে ভাঙন, ভয়াবহ তুষারধস উত্তরাখণ্ডে, নিখোঁজ ১৫০