সালটা ১৯৯৫, জুলাইয়ের শেষ দিন। অন্যান্য দিনের মতোই রাস্তায় বেরিয়েছে মানুষ। স্কুলে-অফিসে যাচ্ছে, বিকেল হলেই খেলতে বেরোবে পাড়ার বাচ্চারা। আপাতভাবে অন্যান্য দিনের থেকে আলাদা কিছু ছিল না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে একটা বদলের মুহূর্ত তৈরি হচ্ছিল ভারতে। দেশের প্রাক্তন আর বর্তমান রাজধানী অর্থাৎ কলকাতা এবং নিউ দিল্লিতে প্রস্তুত হচ্ছিল মঞ্চ। দিনের শেষে ৩১ জুলাই, ১৯৯৫ তারিখটি ইতিহাসের পাতায় চিরকালীন জায়গা করে নেবে। এইদিনেই দেশে প্রথমবার মোবাইল ফোন ব্যবহার করা হয়। আর তার সঙ্গে জুড়ে যায় বাংলার এক মুখ্যমন্ত্রীর নাম…
এক বছর পেছনে যাওয়া যাক। প্রযুক্তি এবং সভ্যতা যে একটা অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে, এমনটা আঁচ করতে পারছিলেন অনেকেই। বিজ্ঞান যত উন্নত হয়েছে, তত নতুন নতুন যন্ত্র এসেছে আমাদের সামনে। আর সেসবই আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছে। মোবাইলও সেরকমই একটি জিনিস। বিশ্বের নানা জায়গায় নব্বইয়ের শুরুর সময় থেকে ছড়িয়ে পড়ে এই প্রযুক্তি। সেই ঢেউ এসে লাগে এদেশেও। আরও ভালো করে বললে এই বাংলায়। এমনই পরিকল্পনা ছিল তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু’র। তাঁর ইচ্ছা, কলকাতাকে ভারতের প্রথম মোবাইল নেটওয়ার্ক সিটি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা…
১৯৯৪ সাল থেকেই ভাবনাচিন্তার শুরু। এগিয়ে আসে মোদী টেলস্ত্রা কোম্পানি। তাঁরাই এই সম্পর্কে যাবতীয় আয়োজন করেন। এবং সেই সূত্রেই যাওয়া নোকিয়া কোম্পানির কাছে। ঠিক করা হয়, ১৯৯৫ সালের ৩১ জুলাই ভারতের প্রথম মোবাইল যোগাযোগ ব্যবস্থার পরীক্ষা করা হবে। দায়িত্ব নিলেন মোদী টেলস্ত্রা এবং নোকিয়া। ভারতে প্রবেশ করল ‘নোকিয়া ২১১০’ মডেলের মোবাইল। আজকের মতো হাল ফ্যাশানের না হলেও, তখন এই মোবাইলই ছিল নির্ভরযোগ্য। তার ওপর নোকিয়ার মতো ব্র্যান্ড! সব মিলিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে…
অবশেষে এগিয়ে এল সেই দিন। আসল দিনে কলকাতায় রাইটার্স বিল্ডিংয়ে বসে আছেন জ্যোতি বসু; অন্যদিকে দিল্লির সঞ্চার ভবনে বসে আছেন তৎকালীন টেলিকম মন্ত্রী সুখ রাম। এপার থেকে জ্যোতিবাবু বললেন, ‘হ্যালো’! ব্যস এখান থেকেই শুরু হল ইতিহাসের। ভারতে শুরু হল মোবাইল পরিষেবা। সেই ঢেউ আজও চলছে। কিন্তু ’৯৫-এর সেই ঐতিহাসিক দিনটি কেউ ভুলতে পেরেছে?
আরও পড়ুন
আজ থেকে ৫০ বছর আগেই করা হয়েছিল পৃথিবীর প্রথম ভিডিও কল
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
১৫০ বছর আগে কাগজ তৈরি দিয়ে শুরু, দিনে দিনে মোবাইলে বিশ্বজয় নোকিয়া-র