সালটা ১৯৪৪। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি শ্যামলা, চশমা পরা মেয়ে মঞ্চে উঠল। অরগ্যানিক কেমিস্ট্রি নিয়ে তাঁর গবেষণা। সেখানেই ডক্টরেট পেয়েছেন এই মেয়েটি। হইহই পড়ে গেল চারিদিকে। তার আগে ভারতের আর কোনও মেয়ে বিজ্ঞানে ডক্টরেট করেনি। এই মেয়েটিই প্রথম। পরবর্তীকালে একের পর এক স্বীকৃতি জুটবে মেয়েটির। গবেষণা ছড়িয়ে পড়বে নানা জায়গায়। কে এই মেয়েটি? তিনি ভারতের অন্যতম বিজ্ঞানী, প্রথম মহিলা ডক্টরেট ডঃ অসীমা চ্যাটার্জি।
১৯১৭ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর। কলকাতায় ডাক্তার নারায়ণ মুখোপাধ্যায় এবং কমলা দেবীর সংসারে জন্ম নেয় একটি ফুটফুটে সন্তান। অসীমা। বাড়ির প্রথম মেয়ে। ছোট থেকে বাবাকে দেখে জীববিজ্ঞানে উৎসাহ তাঁর। বিশেষ করে বটানিতে। পড়াশোনাতেও তুখোড়। স্কুল পাশ করার পর ভবিষ্যতের বিষয় হিসেবে কেমিস্ট্রিকে বেছে নেন। সেই কেমিস্ট্রি, যেটা পড়তে আমাদের কালঘাম ছুটে যেত। বিশেষ করে অরগ্যানিক কেমিস্ট্রি। সেটাকেই নিজের ভালবাসার জায়গা করে নিয়েছিলেন অসীমাদেবী। সঙ্গে তো ছিলই গাছগাছালির প্রতি আলাদা মমত্ব। অরগ্যানিক কেমিস্ট্রি নিয়েই স্নাতকোত্তর পাশ করেন তিনি।
এরপর মনোনিবেশ করলেন ডক্টরেটের দিকে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়তেই শুরু করলেন গবেষণা। মূল ফোকাস ছিল উদ্ভিদজাত বস্তুর রাসায়নিক গঠন এবং অবশ্যই, অরগ্যানিক কেমিস্ট্রি। অসীমা পাশে পেয়েছিলেন দুই কিংবদন্তি বিজ্ঞানীকে— প্রফুল্লচন্দ্র রায় এবং সত্যেন্দ্রনাথ বসু। নিজের পরিশ্রমে, একাগ্র চেষ্টায় সম্পূর্ণ করলেন ডক্টরেট। সালটা ১৯৪৪। স্বাধীনতার আগেই ভারত পেল বিজ্ঞানে প্রথম মহিলা ডক্টরেটকে।
পরবর্তীকালে অসীমা চ্যাটার্জির গবেষণা আরও বিভিন্ন দিক পাবে। বিশেষ করে, উদ্ভিদ নিয়ে প্রচুর পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছেন তিনি। আলসটোনিয়া, সোয়েরটিয়া ইত্যাদি গাছের ম্যালেরিয়া নিরোধক ক্ষমতা আবিস্কার করেন তিনি। জীববিজ্ঞান বইয়ের পরিচিত গাছ মারসিলিয়ার অ্যান্টি-এপিলেপসি ক্ষমতাও আবিস্কার করেছিলেন তিনি। তৈরি করেছিলেন এপিলেপ্সির ওষুধ ‘আয়ুস-৫৬’। পেয়েছেন বহু স্বীকৃতিও। ১৯৬১ সালে প্রথম মহিলা বিজ্ঞানী হিসেবে পেয়েছেন ভারতের বিজ্ঞানে শ্রেষ্ঠ পুরস্কার শান্তিস্বরূপ ভাটনগর প্রাইজ। পেয়েছেন পদ্মভূষণ। প্রথম মহিলা হিসেবে ইন্ডিয়া সায়েন্স কংগ্রেসের প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন। ২০০৬ সালে ৮৯ বছর বয়সে প্রয়াত হন ডঃ অসীমা চ্যাটার্জি।