দেখে মনে হবে, ছোট্ট একটা চিঠি বা টেলিগ্রাম। সামনে রাখা একটা ছবি। সময়ের আঘাতে বেশ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। ফ্যাকাশে হলেও, ছবিটার মধ্যে একটা লম্বা ধোঁয়ার মতো জিনিস ওপরে উঠে মেঘের মধ্যে মিলিয়ে যাচ্ছে সেটা দিব্যি বোঝা যাচ্ছে। কীসের ধোঁয়া? আসলে কারখানার চিমনি থেকে বেরনো কালো ধোঁয়ার নয়, এই ছবি টর্নেডোর। ওই লম্বা ফানেলের মতো জিনিসটা যেটা আকাশ থেকে নেমে এসেছে, ওটাই। আর বেশ অনেকের মতে, ১৮৮৪ সালে তোলা এই ছবিটিই ঘূর্ণিঝড়ের সর্বপ্রথম ফটোগ্রাফ।
যে সময়ের কথা আলোচনা করা হচ্ছে, তখন আজকের মতো আবহাওয়ার কথা বলা যেত না। অমুক সময় সাইক্লোন বা টর্নেডো আসবে, তমুক জায়গায় সুনামি হতে পারে— এমন কিছু বলা যেত না। স্বাভাবিক, আজকের মতো এত প্রযুক্তিও ছিল না। তাই বলে তো আর প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেমে থাকবে না। বৃষ্টিও হবে, প্রখর গরমও পড়বে; আবার ধেয়ে আসবে টর্নেডোও। ১৮৮৪ সালের এইরকমই একটি দিনে আমেরিকার সিগন্যাল কর্পস লক্ষ করে, একটি লম্বা ফানেলের মতো জিনিস কানসাস থেকে ক্রমশ কলোরাডোর দিকে যাচ্ছে। এটা যে ভয়ংকর একটি ঘূর্ণিঝড়, সে সম্পর্কে আর কোনো দ্বিমত রইল না।
যখন ইউএস সিগন্যাল কর্পস এটা লক্ষ করল, ততক্ষণে টর্নেডো নিজের খেলা দেখাতে শুরু করে দিয়েছে। ওই যে, প্রযুক্তির বাধা। আগে থেকে বাসিন্দাদের কাছে খবরও পৌঁছানো যায় না। কাজেই অগ্রিম সতর্কতার কোনো প্রশ্নই নেই। যাই হোক, টর্নেডো তো কলোরাডোর দিকে এগোচ্ছে। তার রাস্তার মাঝখানে পড়ল গারনেট নামের একটি জায়গা। সময়টা আন্দাজ বিকেল সাড়ে পাঁচটা। গারনেটের বাসিন্দারা জানলা দিয়ে দেখলেন সেই বীভৎস দৃশ্য। যেন দৈত্য যাচ্ছে। এদের মধ্যে ছিলেন এ.এ.অ্যাডামস। তিনি পরিচিত একজন স্থানীয় ফলচাষি হিসেবে; কিন্তু শখ ছিল ফটোগ্রাফির। একসময় চেষ্টা করেওছিলেন, কিন্তু বিশেষ কিছু হয়নি। টর্নেডোর এই দৃশ্য দেখার পর ঠিক করলেন, একে ক্যামেরাবন্দি করতেই হবে।
তখনকার দিনে তো আজকের মতো ডিএসএলআর বা নিদেনপক্ষে মোবাইল ক্যামেরাও ছিল না। মূলত ছিল বক্স ক্যামেরা। সেটাই গুছিয়ে ঠিকঠাক করলেন অ্যাডামস। তাঁর আর টর্নেডোর মধ্যে দূরত্ব তখন ১৪ মাইল। ওই ক্যামেরা দিয়েই একটি ছবি তুললেন তিনি। যে ছবিটার বর্ণনা একদম শুরুতে দেওয়া হল, এটাই সেই ছবি। সামনে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি বাড়ি; আর পেছনে ঘন মেঘ থেকে সুতোর মতো নেমে আসছে ভয়ংকর প্রাকৃতিক দুর্যোগ। সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত! কানসাস হিস্টোরিকাল সোসাইটির গবেষণা অনুযায়ী, অ্যাডামসের তোলা এই ছবিটিই টর্নেডোর সর্বপ্রথম ফটোগ্রাফ। এরপর আরও কত ছবি তোলা হয়েছে। আজও তোলা হচ্ছে। এখনকার দিনের প্রযুক্তিও অনেক উন্নত। কিন্তু পুরনো সেই দিনের কথা কি ভোলা যায়!
আরও পড়ুন
খরা, বন্যা কিংবা ঘূর্ণিঝড় - প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার দেশের অর্ধেক মানুষ
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
১৯৭০-এর প্রাণঘাতী ভোলা সাইক্লোনে মারা গিয়েছিলেন ৫ লক্ষ বাঙালি!