অন্ধ্রপ্রদেশের তিরুপতিতে গতকাল ৪ জানুয়ারি থেকেই শুরু হয়েছে রাজ্য পুলিশের মিট। প্রথম দফার বৈঠক শেষের পর অধস্তন অফিসাররা একে একে বেরিয়ে যাওয়ার সময় স্যালুট জানিয়ে যাচ্ছিলেন বছর ৩১-এর এক যুবতীকে। তিনিও অভিবাদন জানাচ্ছেন করমর্দন করে। আসলে এই যুবতীই গত এক মাস থেকে অন্ধ্রের ডেপুটি পুলিশ সুপারিটেনডেন্ট। তবে কয়েক মিনিটের মধ্যেই বদল গেল গোটা চিত্রটাই। এক বয়স্ক পুলিশ আধিকারিক এসে স্যালুট জানালেন তাঁকে। ‘আরে কী করছ?’, বলেই পাল্টা স্যালুট জানালেন ডেপুটি পুলিশ সুপার। হেসে ফেলেছেন তিনি ততক্ষণে। পাশাপাশি দু’জনেরই চোখের কোণায় চিকচিক করছে জল।
রবিবার অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশ এই ছবিই পোস্ট করে ট্যুইটারে। আর তারপরই রীতিমতো নেট দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় এই দৃশ্য। কারণ ছবির ক্যাপশন চমকে ওঠার মতোই। এই যে দু’জনের কথা হচ্ছিল, আসলে তাঁদের মধ্যেই রয়েছে রক্তের সম্পর্ক, পিতা-সন্তানের সম্পর্ক। আসলে যেকোনো বাবা-মাই চান তাঁদের সফলতাকেও ছাপিয়ে যাক সন্তান। ৫৬ বছর বয়সী সার্কেল ইন্সপেক্টর শ্যাম সুন্দরের ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। প্রথমবারের জন্য ডিউটিরত সন্তানের অধীনে বৈঠক করার পর তাঁকে স্যালুট জানাতে তাই এতটুকু কুণ্ঠিত হননি সিনিয়র অফিসার। বরং তিনি জানান, এমন আবেগঘন মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে পেরে তিনি গর্বিত।
তবে এমন পরিস্থিতিতে বেশ খানিকটা মিশ্র অনুভূতি তরুণী পুলিশ সুপারের। বাবাকে স্যালুট করতে দেখে নিজেই অস্বস্তিতে পড়ে যান বলেই জানান জেসি প্রশান্তি। তবে এমন মুহূর্ত দেখে অন্ধ্র-পুলিশের সকল আধিকারিকরাই অভিবাদন জানিয়েছেন পিতা-সন্তানকে।
প্রশান্তি জানান, ছোট থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন সিভিল সার্ভিসের। আর সে স্বপ্নের একমাত্র কারিগরই ছিলেন তাঁর বাবা। একজন সৎ পুলিশ অফিসার হওয়ার দরুণ প্রশাসনিক স্তরের সম্মান তো বটেই পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছেন তাঁর বাবা। সেখান থেকেই খাকি ইউনিফর্মের প্রতি একটা আলাদা টান তৈরি হয়ে গিয়েছিল তাঁর। চাকরির প্রতি শ্রদ্ধা, জনসেবার আবেগ সবটাই যেন হাতে করেই তৈরি করে দিয়েছিলেন তাঁর বাবাই। আজ তাঁর জন্যই এই দায়িত্ব নিজের কাঁধে নিতে পেরেছেন বলে জানান প্রশান্তি।
আরও পড়ুন
পরিবারের সামনেই ধর্ষিত হন দলিত মেয়েরা; দিনবদলের স্বপ্ন নিয়ে বিহারে লড়াই স্মিতার
অন্যদিকে বছর চারেক আগেই পুলিশ ফোর্স থেকে অবসরগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন শ্যাম সুন্দর। তবে সন্তানও পুলিশি বিভাগে চাকরি পাওয়ার পর আর অবসর নেননি। মেয়ের পাশে একসঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের লোভেই। মাসখানেক আগে যখন প্রশান্তির সুপার হওয়ার খবর পৌঁছেছিল বাড়িতে, তখন খানিকটা দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি। সন্তানের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করেই প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন এই পদ থেকে পিছিয়ে আসতে। সে কথা নিজেই প্রকাশ করেন শ্যাম সুন্দর। কিন্তু গতকালের বৈঠকে মেয়ের দক্ষতা এবং বুদ্ধিমত্তার পরিচয় পেয়ে অভিভূত হয়ে যান সিনিয়র পুলিশ অফিসার। শুধু প্রোটোকলের জন্য নয়, অন্তরের ভালোবাসা আর তৃপ্তি থেকেই তাই হাত কপালে উঠে যায় তাঁর।
আরও পড়ুন
করোনায় মৃত্যু মেয়ের, প্যাকিং বাক্সে মৃতদেহ খুঁজে পেলেন বাবা; অমানবিক দৃশ্য কলকাতা মেডিক্যালে
বিরলতম এই দৃশ্য মন কেড়েছে আম-জনতার। সেইসঙ্গে এই সফলতা, সততার গল্প নতুন করে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে তরুণ প্রজন্মকেও...
আরও পড়ুন
হিন্দুদের পারিবারিক সম্পত্তির সমান অংশীদার মেয়েরাও, যুগান্তকারী রায় সুপ্রিম কোর্টের
Powered by Froala Editor