“ইয়ে রেভোলিউশন হ্যায়। ইয়ে ইনকিলাব হ্যায়।” ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে জোর গলায় বলছেন পাঞ্জাবের এক কৃষক। সামাজিক মাধ্যমের দৌলতে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে সেই ভিডিও। শুধু আন্দোলন নয়, যেন বিপ্লবেরই প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষকরা। যে বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেছেন এদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরাও। সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলনে বারবার উঠে আসছে সেইসব ছবিই। কোথাও কৃষকদের হাতে ভারতের জাতীয় পতাকা। কোথাও আন্দোলনের প্রতীক হয়ে উঠছেন ভগৎ সিং। কোনো কৃষক নিজেই মাথায় হলুদ পাগড়ি বাঁধছেন। মহিলারা জড়িয়ে নিচ্ছেন হলুদ দোপাট্টা। আবার কারোর টি-শার্টের মধ্যে ভগৎ সিং-এর ছবি আঁকা।
একটু একটু করে জমা হওয়া অসন্তোষ যেন বেরিয়ে আসছে একসঙ্গে। পুলিশের জলকামানের মুখে দাঁড়িয়ে অনায়াসে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেন বছর ১৬-এর যুবক। আন্দোলনের সঙ্গীদের তো বাঁচাতে হবে। তাই বন্ধ করতে হবে জলকামানের পাইপ। তিনি জানেন, এরপর পুলিশের হাত থেকে নিস্তার নেই। ইতিমধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশকে আক্রমণের অভিযোগ দায়ের হয়ে গিয়েছে। হাজতে রাখা হয়েছে ২৬ বছরের কৃষককে। তবু সামাজিক মাধ্যমে সেই যুবকই নায়ক হয়ে উঠেছেন। কুরুক্ষেত্র ইউনিভার্সিটি থেকে উচ্চশিক্ষার পর কৃষিকাজকেই পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন এই যুবক। না, শিকরের টান ভুলে গিয়ে সঙ্গীদের অসহায় করে দিতে পারবেন না তিনি।
দিল্লির যাত্রাপথেই আবার খবর আসছে লাদাখ সীমান্তে সংঘর্ষে এক কৃষকের ছেলে মারা গিয়েছেন। বাবা বলছেন, তাঁর ছেলে দেশের জন্য সেনাবাহিনীতে গিয়েছিল। তিনিও দেশের জন্য আরেকটি সেনাবাহিনী গড়ে তুলছেন। হরিয়ানা সীমান্তে ব্যারিকেড ভাঙতে গিয়ে দুটি ট্রাকটরের সংঘর্ষে দুজন মারা গিয়েছেন। পুলিশ কিন্তু দুই কৃষকের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছেন অপর দুই কৃষককেই। যাঁরা একসঙ্গে সিমেন্টের ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কোথাও আইন অমান্য করার অপরাধে, কোথাও কোভিড ছড়ানোর অজুহাতে বারবার আটকানো হচ্ছে কৃষকদের পথ। না, পার্লামেন্টে পাশ হয়ে যাওয়া আইন নিয়ে আর কৃষকদের সঙ্গে কথা বলতে চান না সরকার। তবে নাছোর কৃষকরা একে একে সমস্ত ব্যারিকেড টপকে এগিয়ে চলেছেন রাজধানী দিল্লির দিকে।
শুক্রবার থেকেই দিল্লি শহরে প্রবেশ করতে শুরু করেন কৃষকরা। দূর দূরান্ত থেকে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথমে দিল্লির ৯টি স্টেডিয়ামকে ওপেন জেলে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। যদিও দিল্লি সরকার জানিয়ে দিয়েছে কৃষকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোনোরকম বাধা দেওয়া হবে না। তবে কৃষকরা জানতেন, জেলখানায় ঢোকানো হলে সেখানেও বিপ্লবের বীজ বোনা হবে। একদিন যেভাবে নতুন স্বপ্ন তৈরি করে দিয়ে গিয়েছিলেন ভগৎ সিংরা। এই লড়াই কোনো ব্যক্তি বা কোনো সরকারের বিরুদ্ধে নয়। বরং দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে। যে ব্যবস্থা কৃষকদের পুঁজিপতিদের অলিখিত শ্রমিকে পরিণত করে। আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছে। আর তার শেষ থাকে না। তিনটি কৃষি-আইন বাতিল না হলে ফিরবেন না, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কৃষকরা। আন্দোলন সফল হোক বা ব্যর্থ, এই লড়াইয়ের মুহূর্তগুলো কি এত সহজে হারিয়ে যাবে?
আরও পড়ুন
আন্দোলনকারী কৃষকদের খাবারের যোগান দিতে এগিয়ে দিল দিল্লির মসজিদ
Powered by Froala Editor