ওরা জন্মের পরেই বাবা-মাকে হারিয়েছে। দলের বাকি সদস্যদের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল তারা। অসহায় সেইসব হাতিদের সযত্নে প্রতিপালন করছে মানুষ। হ্যাঁ, কেনিয়ার উপজাতিদের উদ্যোগে গড়ে উঠেছে বিশ্বের প্রথম হাতিদের অনাথালয়। দেখতে দেখতে ৫ বছর বয়স হল এই অনাথালয়ের। এর মধ্যে হাতিদের বেড়ে ওঠার পাশাপাশি বদলেছে আদিবাসীদের জীবনযাত্রাতেও। প্রকৃতির সঙ্গে বরাবরই নিবিড় যোগাযোগ সম্বারু উপজাতির মানুষদের। কিন্তু পশুদের সঙ্গে একসঙ্গে বসবাস করা এই প্রথম। সব মিলিয়ে কেনিয়ার পার্বত্য অরণ্য অঞ্চলের ছবিটা যেন অনেকটাই বদলে দিয়েছে এই অনাথালয়।
শুরুটা হয়েছিল ২০১৬ সালের গ্রীষ্মকালে। জঙ্গলের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎ একটি হাতির শাবককে দেখতে পায় কয়েকজন গ্রামবাসী। শাবকটির বয়স তখন বড়োজোর ৪ সপ্তাহ। ভালো করে গাছের ডাল ভাঙতেও পারছে না সে। গ্রামবাসীরা তখন তাকে সঙ্গে নিয়ে আসে। বাড়ির ছাগলের দুধ খাওয়ানো হয় হাতিটিকে। গ্রামে ছাগল এবং গরুর অভাব নেই। তাই দুধেরও অভাব হয় না। দেখতে দেখতে বড়ো হয়ে উঠতে লাগল হাতিটি। তার নাম রাখা হল সুইয়ান। খুব অল্প সময়েই গ্রামের বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ভাব জমে যায় সুইয়ানের। বিকেল হলেই শুরু হয় খেলাধুলো। সুইয়ানকে নিয়ে যখন গ্রামে বেশ সাড়া পড়ে গিয়েছে, তখনই সবাই ঠিক করলেন, সমস্ত অনাথ হাতিদেরই নিয়ে আসা হবে গ্রামে।
হাতিদের গ্রামে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত তো নেওয়া হল। কিন্তু তাদের প্রতিপালন করবে কে? হাতিদের প্রতি ৩ ঘণ্টা পরপর খাবার দিতে হবে। তাছাড়া সবসময় তাদের খেলায় সঙ্গ দেওয়া, সেইসঙ্গে ভবিষ্যতে জঙ্গলে ফিরে গেলে যাতে আবার দলের সঙ্গে মিশে যেতে পারে তার জন্য ট্রেনিং দেওয়া, এইসব তো আছেই। সেই ব্যবস্থাও করা হল। এগিয়ে এলেন সম্বারু উপজাতির মহিলারা। এর আগে পুরুষরা শিকারের জন্য জঙ্গলে ঘুরে বেড়ালেও মহিলারা জন্তুদের থেকে দূরেই থাকতেন। হাতিদের তো রীতিমতো ভয় করতেন সকলে। কিন্তু হঠাৎ এই দায়িত্ব পেয়ে তাঁরাও না বলতে পারলেন না। আর এখন হাতিদের ছাড়া যেন ভালোই লাগে না। গ্রামের ছেলেমেয়েরাও এখন বেশ খুশি, কারণ অতিমারীর কারণে তাদের স্কুল বন্ধ আছে। ফলে সারাদিন হাতিদের সঙ্গেই কেটে যায়।
এই মুহূর্তে গ্রামে এক ডজনের বেশি হাতির শাবক রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য অনাথ হাতিদের নিয়ে আসার পরেও বাঁচানো যায়নি। তবে সেই সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। হাতির সংখ্যা যত বেড়েছে, ততই বেড়েছে দুধের চাহিদাও। এখন আর শুধু ছাগলের দুধে যোগান মেটে না। তাই পাউডার মিল্ক কিনে আনা হয়। কিন্তু অতিমারীর কারণে সেই পাউডার মিল্কের যোগানও বন্ধ। ফলে বেশ সমস্যাতেই রয়েছে হাতিরা। দুশ্চিন্তায় সম্বারু উপজাতির মানুষরাও। তবু সমস্যার একটা সমাধান হবে নিশ্চই, এমনটাই মনে করছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে আশেপাশের অন্য উপজাতির মানুষরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। পাশের গ্রামগুলি থেকেও আসে ছাগলের দুধ। সুইয়ান এখন বেশ বড়ো হয়েছে। তাকে এবার জঙ্গলে ফিরিয়ে দেওয়াই যায়। এই নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই ৫ বছর ধরে যে সে গ্রামেরই একজন হয়ে উঠেছে। তাকে বিদায় জানাতেও তাই মন মানছে না কারোর।
আরও পড়ুন
হাতিমৃত্যু রুখতে ৯টি বিশেষ করিডর আসামে
Powered by Froala Editor
আরও পড়ুন
আসামের ১৮টি হাতির মৃত্যু কি প্রকৃতির গ্রাসেই? মানুষের দিকে ইঙ্গিত গবেষকদের