দশমীর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও আরও দু-একদিন মণ্ডপে প্রতিমা রেখে দেওয়ার চল রয়েছে বিখ্যাত পুজোগুলিতে। তবে বনেদি বাড়ির পুজোয় এই দৃশ্য দেখা যায় না একদমই। দশমীর তিথি পড়লেই শুরু হয় বিসর্জনের তোড়জোড়। নিয়ম মেনেই দেবী চলেন নিরঞ্জনের পথে। তবে বনেদি বাড়ি হওয়া সত্ত্বেও প্রায় আড়াইশো বছর ধরেই বিসর্জনের প্রথা থেকে মুখ ফিরিয়ে দুর্গাবাড়ির পুজো। জুড়ে রয়েছে রহস্যজনক ঘটনা এবং কাহিনিও।
পশ্চিমবঙ্গ নয়। এই দুর্গাবাড়ির ঠিকানা উত্তরপ্রদেশের বেনারস শহর। বাঙালি টোলার মুখার্জি বাড়িরই অপর নাম হয়ে গেছে দুর্গাবাড়ি। ১৭৬৭ সালে শুরু হয়েছিল এই পুজো। অন্যান্য বনেদী বাড়ির মতোই মূর্তি তৈরি হয়েছিল বাড়ির ঠাকুর দালানেই। তারপর ষষ্ঠীতে বোধন। পুজোই চলল চারদিন ধরে। তবে সেই দশমীতেই ঘটে গেল এক অদ্ভুত ঘটনা। অনেক চেষ্টা করেও নড়ানো গেল না দেবীর মূর্তি। মাটির তৈরি মূর্তিই যেন হয়ে গেছে পাথরের!
সেদিন রাত্রেই মুখার্জি পরিবারের কর্তা স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন, দেবী চিরকাল থেকে যেতে চান এই বাড়িতেই। তাঁকে যেন বিসর্জন না করা হয় কখনও। পরে অবশ্য বেশ কয়েক পুজোতেই চেষ্টা করা হয়েছে এই প্রতিমা নিরঞ্জনের। তবে লাভ হয়নি কোনো। মূর্তি কাঁধে তুলতে গলদঘর্ম হয়ে হাল ছেড়েছেন সকলেই। তবে এক ইঞ্চিও সরেনি প্রতিমা। অন্যদিকে চিরস্থায়ী হয়েছে দেবীর কাশীবাস।
এখনও নিয়ম মেনেই প্রতি ষষ্ঠীতে পুজো হয় দেবীর সেই আড়াইশো বছরের প্রাচীন মূর্তিতেই। তবে মাটির তৈরি মূর্তি এতদিন ধরে কীভাবে অক্ষত রয়েছে তা এখনও এক রহস্য। প্রতিবছর পুজোর সময় কেবল নতুন গয়না এবং শাড়িতে সেজে ওঠেন দেবী। পাঁচ-ছ’ বছর পর পর মূর্তিতে পড়ে রঙের প্রলেপ। তাছাড়া একেবারেই সেই সাবেকিয়ানা। অঞ্চলে প্রচলিত আছে দুর্গাবাড়ির এই প্রতিমা অত্যন্ত জাগ্রত। সকলকেই সাড়া দেন প্রার্থনায়। আড়াইশো বছর ধরে তাই এতটুকু বদলায়নি পুজোর রীতি-রেওয়াজ...
Powered by Froala Editor