সালটা ২০১৬। সাইবেরিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলের একটি ১২ বছরের ছেলে হঠাৎই মারা যায়। সেই সঙ্গে আরও ২০ জন হাসপাতালে ভর্তি হন। কী রোগ, কী বৃত্তান্ত কিছুই প্রথমে বোঝা যাচ্ছিল না। পরে পরীক্ষা করে দেখা গেল, প্রত্যেকের শরীরেই একটি নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া বাসা বেঁধেছে— অ্যানথ্রাক্স। ওই অঞ্চলে যে রোগের প্রাদুর্ভাব এর আগে দেখা যায়নি। তাহলে কী করে হল?
আরও পড়ুন
বরফের মধ্যে তৈরি হচ্ছে অদ্ভুত ‘আংটি’, সাইবেরিয়ায় রহস্য সমাধান বিজ্ঞানীদের
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৭৫ বছর আগে, সাইবেরিয়ার ওই অঞ্চলে একটি বল্গা হরিণ অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত হয়েছিল এবং পরে মারাও গিয়েছিল। কিন্তু তার মৃতদেহ বহু বছর বরফের তলায় চাপা পড়েছিল। ২০১৬-এর প্রবল গরম আর হিটওয়েবে ওই বরফ গলে সেই দেহাংশ বেরিয়ে পড়ে। সেই সঙ্গে উন্মুক্ত হয়ে যায় ৭৫ বছর আগের সেই অ্যানথ্রাক্স ব্যাকটেরিয়া। যার ফলে ওখানে নতুন করে আক্রান্ত হয় প্রায় ২০০০টি বল্গা হরিণ। সেখান থেকেই মানুষের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে রোগটি।
আরও পড়ুন
১৫,০০০ বছর ধরে জীবিত ভাইরাস, বরফের মধ্যে পাওয়া গেল হদিশ
ওপরের এই ঘটনাটি যত দিন যাচ্ছে, ততই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বহু বছর আগে বরফের নিচে হয়তো চাপা পড়ে গিয়েছিল বহু ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস; মানুষের কাছে যাদের সন্ধানও ছিল না। কিন্তু এখন তারাই ‘মুক্তি’ পাচ্ছে। সৌজন্যে, পরিবেশ দূষণ। পৃথিবী যত গরম হচ্ছে, তত বরফ গলছে। আর ততই জল, হাওয়া আর মাটিতে মিশে যাচ্ছে এই ভাইরাসগুলি। তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রোগ; বা বহু পুরনো কোনো রোগই আবার ফিরে আসছে। আর এখানেই প্রমাদ গুনছেন বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন
বরফ গলে বেরিয়ে পড়ছে সবুজ, প্রবল সংকটের মুখে মেরু অঞ্চল
এমনিতেই এই মাইক্রোবদের চরিত্র বদলাচ্ছে দিনকে দিন। সাম্প্রতিককালে কলকাতায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর ডাক্তারদের মুখে শোনা গেছে একটা কথা- ‘চরিত্র বদলাচ্ছে ডেঙ্গুর।’ সেই আলেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের আমল থেকে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক বানিয়ে আসছি। তাতে রোগ প্রতিরোধ হচ্ছে বটে। কিন্তু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়াও নিজের মধ্যে সেগুলোর ‘জবাব’ তৈরি করে নিচ্ছে। তার ওপর যত বরফ গলছে, ততই নতুন নতুন জীবাণু ছড়াচ্ছে। এদের কারোর বয়স আবার কয়েক হাজার বছর! সব দিক থেকে বিপদ দেখছেন বিজ্ঞানীরা। মেরু অঞ্চলের মাটি যত উন্মুক্ত হবে, এই বিপদ ততই বাড়বে। বৈজ্ঞানিক গবেষণা তো চলছেই; কিন্তু পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে না বলেই মনে করছেন তাঁরা।